Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভারতের উত্তরপ্রদেশে মুসলমানদের উপর আরও নিপীড়নের আশঙ্কা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৫:০৩ পিএম

দুই বছরেরও বেশি সময় আগে ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশে বিক্ষোভের উপর পুলিশ দমন-পীড়ন করলে ২৩ জন নিহত হযন। জানা গেছে, তাদের সবাই মুসলমান ছিলেন। এখন ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা, অগ্নিসন্ন্যাসী যোগী আদিত্যনাথ এই সপ্তাহে শুরু হওয়া রাজ্য নির্বাচনে আরেক মেয়াদে জয়ী হলে প্রধান ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলমানদের অনেকে আবারও তাদের উপর দমন-পীড়নের আশঙ্কা করছেন৷-এএফপি

২৬ বছর বয়সী শাহবুদ্দিন বলেন, তার ভাই আলিমকে ২০১৯ সালের ক্র্যাকডাউনের সময় পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছিল। মিরাট শহরের মুসলিম কোয়ার্টারে তার বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক মিটার (গজ) দূরে হত্যা করে। তিনি বলেন, আমরা ভয় পাচ্ছি যে, যদি এই সরকার থাকে, তবে এটি আমাদের ভাই, আমাদের বাচ্চাদের এবং আমাদের এভাবেই হত্যা করবে। তিনি শহরের সংকীর্ণ গলিতে তার বাড়ির বাইরে এএফপিকে বলেন, প্রতিশোধের আশঙ্কা করছি।তার পরিবারের নাম পত্রিকায় দিতেও অস্বীকার করেন তিনি।

শাহবুদ্দিন নামে আরেকজন বলেন, আদিত্যনাথ একজন খুনি, সন্ত্রাসী। আদিত্যনাথ একজন পেশীশক্তির হিন্দু জাতীয়তাবাদের পতাকাবাহী, যিনি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। যার পরিণতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে। মোদির মতো তিনি আজীবন সদস্য ছিলেন সামরিকবাদী হিন্দু-জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস), যার সমাবেশ এবং কর্মকান্ড ইউরোপের ১৯৩০-এর দশকের ফ্যাসিবাদী সংগঠনগুলির কথা মনে করিয়ে দেয়। এটি বিজেপির আদর্শগত পিতা। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে কসাইখানার উপর নিষেধাজ্ঞা – হিন্দুধর্মে গরু পবিত্র – এবং মুসলিমদের প্রার্থনার জন্য লাউড স্পিকার ব্যবহার করায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। আদিত্যনাথের সরকার "লাভজিহাদ" এর বিরুদ্ধে একটি আইন এনেছিল, যা হিন্দু মহিলাদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করার জন্য বিয়েতে প্রতারিত করার জন্য মুসলমানদের বিরুদ্ধে একটি কথিত ষড়যন্ত্র।

মারাত্মক 'এনকাউন্টার' : রাজ্যের মুসলিম সংখ্যালঘুদের যা সত্যিই ভয় দেখায় ২০০ মিলিয়নেরও বেশি জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ তারা। উত্তর ভারতের বিশাল এবং দরিদ্ররাজ্যে আইনের শাসনের প্রতি আদিত্যনাথের অবজ্ঞা লক্ষণীয়।আদিত্যনাথ ২০১৭ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ১০০ জনেরও বেশি কথিত অপরাধী, যাদের অধিকাংশই মুসলিম বা নিম্ন বর্ণের দলিত, পুলিশের সাথে "এনকাউন্টারে" মারা গেছে বলে জানা গেছে।এটি ছিল বিচার বহির্ভূত হত্যা – যে অভিযোগ সরকার অস্বীকার করে। আদিত্যনাথের প্রশাসন ঔপনিবেশিক যুগের "রাষ্ট্রদ্রোহ" অভিযোগ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি উৎসাহী ব্যবহারকারী ছিল, যা সন্দেহভাজনদের ছয় মাসের জন্য চার্জ ছাড়াই আটকে রাখার অনুমতি দেয়। সমালোচকরা বলছেন, উদ্দেশ্য হল যে কোনো ভিন্নমতকে চুপসে দেয়া। বিরোধীরা বলছেন, মোদী সরকারের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ চলাকালীন ২০১৯ সালের শেষের দিকে আদিত্যনাথের শাসনের নির্মম বর্বরতা প্রকাশ করা হয়েছিল।

এই আইনটি ভারতে উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেয়, তবে তারা মুসলিম হলে নয়।সমালোচকরা বলেছেন, এটি বৈষম্যমূলক এবং এতে বিজেপির মুসলিম-বিরোধী পক্ষপাত প্রকাশ পেয়েছে। কিছু বিক্ষোভ সহিংস হয়ে যাওয়ার পর, আদিত্যনাথ "প্রতিশোধের" প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। দাঙ্গা পুলিশ বেশ কয়েকটি শহরে তাণ্ডব চালিয়েছে, বিশেষ করে মুসলিম এলাকায়, বাড়ি ঘরে ঢুকেছে, বাসিন্দাদের লাঞ্ছিত করেছে এবং তাদের জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৩ জন নিহতের বেশির ভাগই বুলেটের ক্ষত থেকে হয়েছিল।

অবিচার : দুই বছরেরও বেশি সময় পরে শাহবুদ্দিন বলেছেন, তার পরিবার এখনও বিচার পায়নি। শাহবুদ্দিন বলেন, আদালতের শুনানির সময় (এই মামলার জন্য), আমাদের ভাই সালাহউদ্দিনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয় এবং তারপর অন্য তারিখ হাতে নিয়ে বাড়ি যেতে বলা হয়। তারা মনে করে, আমরা দুর্বল এবং আমাদের দমন করার জন্য সম্পূর্ণ প্রচেষ্টা করেছে সরকার।৫২ বছর বয়সী নাফিসা বেগম জানান, নিহতদের মধ্যে তার ২৮ বছর বয়সী ছেলে মহসিনও রয়েছে। সেদিন এমন কিছু ছিল না, যা গুলি চালানোর কারণ হয়। নাফিসা এএফপিকে বলেন, এখানে (এই সরকারের অধীনে মুসলমানদের বিরুদ্ধে) অনেক অবিচার হয়েছে, অনেক অবিচার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ