Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

একজন মুসলিমের আচরণ কেমন হবে

এনামুল হাসান | প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

একজন আদর্শ মুসলিম তার মা-বাবার প্রতি অন্তরের অন্তস্থল থেকে গভীর ভক্তি-শ্রদ্ধা পোষণ করে। তাদের হক আদায়ে যত্নবান হয়। মা-বাবা যদি অমুসলিমও হয় তারপরও তাদের সাথে সদ্ব্যবহারে ত্রুটি করে না। মা-বাবার সামনে উঁচু আওয়াজে কথা বলে না। তাদের সাথে কোমল ভাষায় কথা বলে, নম্র আচরণ করে। তাদের খেদমত করে। যখন একসাথে হাঁটে তখন বাবার পেছনে পেছনে হাঁটে। যখন বসে তখন বাবাকে আগে বসতে দেয়। মা-বাবার বন্ধু-বান্ধবকেও শ্রদ্ধা করে। যখন মা-বাবা বার্ধক্যে উপনীত হন তখন তাদের সাথে সদ্ব্যবহারের প্রতি আরো বেশি যত্নবান হয়। তাদের জন্য আল্লাহর দরবারে দুআ করে : হে আল্লাহ, তুমি তাদেরকে দয়া করো যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন।

দাম্পত্য জীবনে প্রবেশের আগে ও পরে ইসলাম যেসকল নির্দেশনা দিয়েছে একজন আদর্শ মুসলিম সেগুলো পালনে সচেষ্ট থাকে। আদর্শ মুসলিম তার জীবনসঙ্গিনী বাছাইয়ে তাড়াহুড়া করে না। বাহ্যিক সৌন্দর্যকে সে উপেক্ষা করে না বটে, তবে বাহ্যিক সৌন্দর্যই তার নিকট সবকিছু নয়। সম্পদ, বংশগত কৌলীন্য ও দৈহিক সৌন্দর্যের ওপর সে দ্বীনদারিকেই প্রাধান্য দেয়। একজন আদর্শ মুসলিম দাম্পত্য জীবনকে মনে করে পারস্পরিক ভালোবাসা, অন্যের স্বার্থকে প্রাধান্য দান, সাহায্য-সহযোগিতা এবং সৌহার্দ্য-সহানুভূতির জীবন।

জীবনসঙ্গিনীর ভুলত্রুটি সে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে। ভুলের জন্যে অন্যের সামনে তাকে তিরষ্কার করে না। কোনো কিছু বলতে হলে আড়ালে কোমলভাবে বলে। তার কাজের প্রশংসা করে। তার আবেগ-অনুভূতির প্রতি খেয়াল রাখে। তার মান-অভিমানকে গুরুত্ব দেয়। তার আত্মীয়-স্বজনের সাথে নিজের আত্মীয়-স্বজনের মতোই সুন্দর আচরণ করে। তার কাছে তার আত্মীয়দের ব্যাপারে কোনো কটু কথা বলে না। খাওয়ার সময় রান্নার দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করে না।

যদি কখনো রাগ হয়, তাহলে রাগের বশবর্তী হয়ে সে তার সাথে খারাপ আচরণ করে না। সে নিজেকে বোঝায়, ‘তার মাঝে যদিও এই দোষ আছে, কিন্তু আল্লাহ তো বলেছেন, তার মাঝে আল্লাহ রেখেছেন আরো অনেক কল্যাণ।’

জীবনসঙ্গিনীর প্রতি তার ভালোবাসা হয় আল্লাহর জন্যে। তাই যদি কখনো কোনো বিষয়ে খারাপও লাগে তারপরও সে আল্লাহর ওয়াস্তে স্ত্রীকে ভালোবেসে যায়।

সে যখন ঘরে প্রবেশ করে তখন সালাম দিয়ে প্রবেশ করে। স্ত্রীকে ঘরের কাজে সহযোগিতা করে। সহযোগিতা করতে না পারলে সহানুভূতি প্রকাশ করে। সে প্রতিদিনের রুটিনবন্দি জীবনকে মাঝেমধ্যে নির্মল হাসি-কৌতুকের মাধ্যমে আনন্দময় করে তোলে।

একজন আদর্শ মুসলিম মা ও স্ত্রীর মাঝে সমন্বয় রক্ষা করে চলে। স্ত্রীর প্রতি যেভাবে খেয়াল রাখে, তেমনি মাকেও সে শ্রদ্ধা করে। মাকেও খুশি রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। কারো হক আদায় করতে গিয়ে অন্যের হক নষ্ট করে না। এক্ষেত্রে সে অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও সহনশীলতার পরিচয় দেয়।

একজন আদর্শ মুসলিমের নিকট সন্তান, ছেলে হোক মেয়ে হোক, আল্লাহর দেয়া নিআমত ও আমানত। সে সবসময় তাদের প্রতি তার দায়িত্বের কথা স্মরণ রাখে। জন্মের পর তাদের জন্যে সুন্দর অর্থপূর্ণ নাম রাখে। তাদের তরবিয়তের জন্যে সে নিজের সাধ্য মোতাবেক চেষ্টা করে।

তাদেরকে সে মন থেকে ভালোবাসে এবং তাদেরকেও এটা বোঝায় যে, সে তাদেরকে ভালোবাসে। তাদের জন্যে সে মন খুলে খরচ করে। আদর-সোহাগ ও খরচাদির ক্ষেত্রে সে সন্তানদের মাঝে কোনো ব্যবধান করে না। সব সন্তানকে সমানভাবে আদর করে। সবার জন্যে সমানভাবে খরচ করে।

সন্তানদের আদর্শ জীবন গঠনে সর্বদা মনোযোগী থাকে। তাদের জীবনের ওপর প্রভাব পড়তে পারে এমন সকল বিষয়ে তার থাকে তীক্ষè দৃষ্টি। সন্তান কাদের সাথে চলা ফেরা করে, কোথায় যাওয়া আসা করে, অবসর সময়ে কী করে, এসব কিছুরও সে খোঁজ-খবর নেয়, তবে একথা সে সন্তানকে বুঝতে দেয় না।

যখন মন্দ কিছু নজরে পড়ে তখন হিকমতের সাথে ভালো পথে ফিরিয়ে আনে। ছোট বয়স থেকেই তাদের মনে মহৎ চরিত্রের বীজ বুনে দেয়। যেমন- অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো, বড়কে সম্মান করা, ছোটকে স্নেহ করা, সদা সত্য বলা ইত্যাদি। যখন সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হয় তখন তাদের জন্য উপযুক্ত জীবনসঙ্গী/সঙ্গিনী সন্ধান করে এবং বিবাহের বন্দোবস্ত করে। বিয়ের পরও সন্তানদের খোঁজ-খবর নেয়। তাদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও উপদেশ দিয়ে থাকে।



 

Show all comments
  • সোনিয়া তারিন তীথি ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৫৫ এএম says : 0
    যার মর্যাদা যেমন, তার আচার-আচরণ ও পারিপাশ্বিকতাও তেমন।
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Rashadujaman ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৫৫ এএম says : 0
    মহান আল্লাহ তাআলা হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উত্তম চরিত্র দিয়ে মানবতার মুক্তির দূত করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আর ঘোষণা করেছেন- ‘আর (হে নবি!) নিশ্চয়ই আপনি সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।’
    Total Reply(0) Reply
  • Kajal Motahar Alam ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৫৫ এএম says : 0
    রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের প্রতি ছিলেন উদার। ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোষ্ঠী বিচারে তিনি করো প্রতি জুলুম করেননি। কারো প্রতি অবিচার করেননি। এমনকি তাঁর উম্মতের সবার উদ্দেশ্যে এ মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন, যেন কেউ কারো প্রতি জুলুম না করে; যেন সবার সঙ্গে উত্তম সদাচরণ করে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ujjal Hasan ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৫৬ এএম says : 0
    রাসুলে আরাবি অমুসলিমদের অধিকার রক্ষায় ঘোষণা করেছেন, কোনো মুসলিম যদি অমুসলিমের প্রতি অবিচার করে তবে বিচারের দিন অমুসলিমের পক্ষে অবস্থান নেবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahabub Alam ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৫৬ এএম says : 0
    প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যায়ভাবে অমুসলিমের জান ও মালের ওপর হস্তক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন। কারণ এর পরিণতি হবে জাহান্নাম।
    Total Reply(0) Reply
  • H M Moniruzzaman Mohsin ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৫৬ এএম says : 0
    অমুসলিমদের প্রতি আচরণ কেমন হবে, তার বর্ণনা ওঠে এসেছে হাদিসের একাধিক বর্ণনায়। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অমুসলিমদের প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন, উত্তম আচরণ করেছেন। তারঁ উম্মতের প্রতি ভালো আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন