Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আবাদ বৃদ্ধির তাগিদ

দক্ষিণাঞ্চলে উফশী ও হাইব্রিড ধান ধানের আবাদ না বাড়ায় কৃষিমন্ত্রীর অসন্তোষ

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রি উদ্ভাবিত হাইব্রিড ও উচ্চ ফলনশীল-উফশী জাতের ধান আবাদে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে খাদ্য উদ্বৃত্ত বর্তমানের সাড়ে ৮ লাখ টন থেকে ১০ লাখ টনে উন্নীত করা সম্ভব। দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমনের মোট আবাদের প্রায় ৪০ ভাগ এখনো সনাতন স্থানীয় জাতের ধান আবাদ হচ্ছে। হাইব্রিড জাতের আমনের আবাদ ২%-এরও কম। ফলে বিপুল সম্ভাবনাময় এ ফসলে কাঙ্খিত উৎপাদন আসছে না। কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকও সম্প্রতি ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান আবাদ সম্প্রসারণ না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি অবিলম্বে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে ব্রি’র বীজ ও আবাদ প্রযুক্তি হস্তান্তরের ওপর গুরুত্বারোপ করে এ লক্ষ্যে কমিটি করার কথাও জানান। অথচ মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদদের মতে, দেশের অন্যসব এলাকার মত দক্ষিণাঞ্চলে উফশী ও হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ ১০ ভাগ সম্প্রসারণ হলেও খাদ্য উদ্বৃত্তের পরিমাণ ১০ লাখ টন অতিক্রম করতে পারে। ডিএই’র মতে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ১ কোটি মানুষের দৈনিক ৪৪২ গ্রাম দানাদার খাদ্যের প্রয়োজনীয়তার আলোকে এ অঞ্চলে বছরে খাদ্য শষ্যের চাহিদা ১৬ লাখ ১০ হাজার টনের মত। কিন্তু আমন, আউশ ও বোরোসহ এ অঞ্চলে বছরে চালের উৎপাদন ২৭ লাখ ৫৩ হাজার টন। এছাড়া আরো প্রায় ১০-১২ হাজার টন গমসহ প্রতিবছর সর্বমোট দানাদার খাদ্য ফসলের উৎপাদন প্রায় ২৭ লাখ ৬৩ হাজার থেকে ৬৫ হাজার টনের মত। এর মধ্যে উল্লেখিত ৫টি ফসল আবাদে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার টনের মত বীজ প্রয়োজন হলেও নীট দানাদার খাদ্য শষ্য থাকছে ২৪ লাখ ৪৫ হাজার টনের মত। সেখান থেকে ১৬ লাখ ১০ হাজার টন খাবার গ্রহণের পরেও প্রতি বছর ৮ লাখ ৩৫ হাজার টনেরও বেশি খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকছে দক্ষিণাঞ্চলে।

কিন্তু শুধুমাত্র আমনে এ অঞ্চলের বিপুল পরিমাণ জমিতে স্থানীয় সনাতন জাতের ধানে আবাদ হচ্ছে। সেস্থলে উফশী জাতের আবাদ প্রবর্তন করতে পারলে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ১০ লাখ টন অতিক্রম করা খুবই সহজ বলে কৃষিবিদরা জানিয়েছেন। উপরন্তু হাইব্রিড জাতের আবাদ ক্রমান্বয়ে বৃদ্দি পেলে উৎপাদন আরো বাড়বে বরে মনে করছেন কৃষিবিদরা।
এসব বিষয়ে ডিএই’র বরিশাল কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বোরো এবং আউশে উফশী জাতের ধান আবাদ সন্তোষজনকভাবে এগুচ্ছে বলে জানিয়ে আমনের ক্ষেত্রে পরিবেশগত কিছু বাধার কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান। তার মতে, জোয়ার-ভাটার দক্ষিণাঞ্চলে গত কয়েক বছর ধরে আমন মৌসুমে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও অতি বর্ষণে ফসল প্লাবিত হয়ে ধানের ক্ষতি হচ্ছে। জলবায়ু পরির্তনের কারণে গত কয়েক বছর ধরে আমন মৌসুমে এ অঞ্চলে অকাল বর্ষণসহ জলোচ্ছ্বাসে অনেক জমি ৪-৬ ফুট পর্যন্ত পানিতে প্লবিত হয়ে যাচ্ছ। ‘ব্রি’ এখনো দক্ষিণাঞ্চলের এ ধরনের পরিবেশ উপযোগী ধান নিয়ে আসতে পারেনি বলে জানিয়ে ‘ব্রি-২৩’ এবং ‘ব্রি-৭৬’ ও ‘ব্রি-৭৭’ নামের উফশী জাতগুলো এ অঞ্চলে ক্রমে জনপ্রিয় হচ্ছে বলে জানান অতিরিক্ত পরিচালক। ডিএই’র ব্লক সুপারভাইজাররা সঠিক দায়িত্ব পালন করে না বলে যে অভিযোগ রয়েছে সে সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের জনবলের ঘাটতি প্রায় ৩৫-৪০%। কিছু কর্মীর অবহেলা থাকলেও তা সরেজমিনে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ‘ব্রি ’ বরিশাল অঞ্চলের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলমগীর জানান, দক্ষিণাঞ্চলে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের আবাদ, বিশেষ করে আমন মৌসুমে তা বৃদ্ধি করতে পারলে খাদ্য উৎপাদন আরো বাড়বে। তবে পরিবেশগত কারণে অনেক কিছু এখনো সম্ভব না হলেও গবেষণা অব্যাহত আছে। এরপরেও বিদ্যমান জাতগুলো আবাদ করতে পারলে অদূর ভবিষ্যতেই এ অঞ্চলে দানাদার খাদ্য ফসল উৎপাদন অন্তত ৩০ ভাগ বাড়বে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ