মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
প্রায় ন’ ঘণ্টার বৈঠকেও কাটল না যুদ্ধের মেঘ। ভেস্তে গেল ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলা শান্তি আলোচনা। বার্লিনে দীর্ঘ সময় কথাবার্তার পরও সীমান্ত সংঘাত মেটাতে কোনও নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে একমত হতে পারল না মস্কো ও কিয়েভ।
বৃহস্পতিবার জার্মানির রাজধানী বার্লিনে বৈঠকে বসেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা। সেই বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকির চিফ অফ স্টাফ আন্দ্রেই ইয়েরমাক জানিয়েছেন, এখনই সীমান্ত সমস্যা মেটাতে কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি। তবে ভবিষ্যতে আবারও আলোচনায় বসবে দুই দেশ। তিনি আরও জানান, বন্দি বিনিময় ও পূর্ব ইউক্রেনে চেক পয়েন্ট স্থাপনের বিষয়গুলি নিয়েও আলোচনা হবে। সম্প্রতি, ইউক্রেন নিয়ে কিছুটা সুর নরম করতে শোনা যায় পুতিনকে। ফলে সমস্যা মেটাতে রুশ প্রেসিডেন্ট আগ্রহী বলেই মনে করেছিলেন অনেকে। কিন্তু এবারের আলোচনা ভেস্তে যাওয়ায় সেই আশায় ছাই পড়ল।
গত কয়েক মাস ধরেই ইউক্রেনকে ঘিরে সম্মুখ সমরে নামে আমেরিকাণ্ডরাশিয়া। ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মজুত করে ন্যাটো গোষ্ঠীর দেশগুলির বিষনজরে পড়েও লাগাতার আক্রমণাত্মক মেজাজেই দেখা গিয়েছে পুতিনকে। কিন্তু অবশেষে তার গলায় সমঝোতার সুর। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের প্রস্তাব বিবেচনা করতে রাশিয়া রাজি বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে পাশাপাশি এই সমস্যার জন্য পশ্চিমি দেশগুলিকেই কাঠগড়ায় তুলতে দেখা গিয়েছে পুতিনকে। ক্রেমলিনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে প্রায় ৫ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে দীর্ঘ বৈঠক করেন পুতিন। বৈঠক শেষে পুতিন জানিয়েছেন, তারা সমঝোতায় রাজি। ম্যাখোঁ তার সামনে যে প্রস্তাব রেখেছেন সেদিকে নজর রাখবেন তিনি।
এদিকে, ইউক্রেন সীমান্তে মোতায়েন রয়েছে অন্তত এক লাখ রুশ সেনা। গত কয়েক বছরে ইউক্রেনের সেনা ও রাশিয়ার মদতপুষ্ট বিদ্রোহীদের সংঘর্ষে অন্তত ১৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি না শুধরালে আগামী দিনে রক্তক্ষয় আরও বাড়াই হয়তো নিয়তি। আর যুদ্ধ একবার প্রত্যক্ষভাবে শুরু হয়ে গেলে যে আরও কত ক্ষয়ক্ষতি, প্রাণহানি হবে তা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি এই যুদ্ধের প্রভাব পড়তে পারে সারা বিশ্বেই। সেই কারণেই যে কোনও ভাবে এই যুদ্ধ আটকাতে তৎপর আন্তর্জাতিক মঞ্চ।
উত্তেজনা বাড়িয়ে ইউক্রেনে বিপুল পরিমাণ মার্কিন অস্ত্র
ইউক্রেন-রাশিয়া উত্তেজনা আরও চরমে পৌঁছেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বিপুল পরিমাণ অস্ত্র পাঠিয়েছে ইউক্রেনে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কিয়েভে পৌঁছায় মার্কিন এ সামরিক সহায়তা। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০ কোটি মার্কিন ডলারের নিরাপত্তা সহায়তার অংশ হিসেবে এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, ওয়াশিংটনের পাঠানো এ সামরিক সহায়তার মধ্যে রয়েছে ১৫০ টন গ্রেনেড ও ভারী বিস্ফোরক।
এর আগে, গেল সপ্তাহে ইউক্রেনকে সহায়তা দিতে যুক্তরাজ্য, কানাডা, সুইজারল্যান্ড ও সুইডেনের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে নিরাপত্তা জোরদারে কয়েক দফা সামরিক সহায়তা পেয়েছে ইউক্রেন। সীমান্ত এলাকায় রুশ সেনা মোতায়েন নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরেই উত্তেজনা চলছে কিয়েভ-মস্কোর মধ্যে। এদিকে, মার্কিন নাগরিকদের অবিলম্বে ইউক্রেন ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বাইডেন বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এমতাবস্থায় অবিলম্বে মার্কিন নাগরিকদের উচিত ইউক্রেন ত্যাগ করা। অন্যথায়, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনে হামলা করে বসলে মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধারে কোনও সৈন্য পাঠাবে না আমেরিকা।
হুতিদের হামলা ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘থাড’ কিনছে আমিরাত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘থাড’ কিনছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। যুক্তরাষ্ট্রের মেরিন জেনারেল ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন কমান্ডের প্রধান কেনেথ ম্যাকেঞ্জি সম্প্রতি দুবাইতে যান। তার কাছে আমিরাত কর্তৃপক্ষ এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে।
জবাবে ম্যাকেঞ্জি বলেছেন, আমরা আমিরাতকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত ব্যবস্থা পরিপূর্ণ করতে সহায়তা করব। প্রতিরক্ষার জন্য যা-যা করা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতকে আমরা সেই সহায়তা দিব। মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান ম্যাকেঞ্জি দুবাই সফরের পর রয়টার্সের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছান। আমিরাতের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ওয়ামের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে কেনেথ ম্যাকেঞ্জি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নে কাজ করবে।
থাড-এর পুরো নাম ‘টার্মিনাল হাই-অলটিচিউড এরিয়া ডিফেন্স’ (টিএইচএএডি)। মার্কিন সামরিক কর্তৃপক্ষ বলেছে, এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে ভূমিকা রাখে। উত্তর কোরিয়ার হুমকির মুখে মিত্র দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, যা স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম।
গত ১৭ জানুয়ারি আমিরাতের বিমানবন্দরে ভয়াবহ ড্রোন হামলা চালায় ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। ইরান সমর্থিত গোষ্ঠিটির হামলায় আমিরাতে তিন বিদেশি নাগরিক নিহত হন।
এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতে গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার এবং উন্নত প্রযুক্তির যুদ্ধ বিমান মোতায়েনের ঘোষণা দেয়। গণমাধ্যমে এই ঘটনাকে মিত্র দেশ আমিরাতকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন’ হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে সউদী আরবে আক্রমণ বাড়ানোর পাশাপাশি হুথি বিদ্রোহীরা সরাসরি সংযুক্ত আরব আমিরাতে হামলা করছে। আরব আমিরাত সউদী আরবের ঘনিষ্ঠ মিত্র। একজোট হয়ে তারা ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।
এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবারও সউদী আরবে ড্রোন হামলা চালিয়েছে হুথি বিদ্রোহী। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। গতকালের ওই হামলায় বাংলাদেশিসহ ১২ জন আহত হন।
অ্যামেরিকার নাগরিকরা ইউক্রেন ছাড়ুন : বাইডেন
বাইডেন জানিয়েছেন, মস্কো যদি ইউক্রেন আক্রমণ করে, তাহলে অ্যামেরিকার নাগরিকদের উদ্ধার করতে তিনি সেনা পাঠাতে পারবেন না। বাইডেন বলেছেন, খুব তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি যে কোনো দিকে মোড় নিতে পারে।
বাইডেন বলেছেন, ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার বিপুল সেনা মোতায়েন এবং বেলারুশে সামরিক ড্রিলের পরিপ্রেক্ষিতে। ইউক্রেন অভিযোগ করেছে, রাশিয়া যে কোনো মুহূর্তে তাদের আক্রমণ করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে অ্যামেরিকা ও ন্যাটো ইউরোপে সেনা মোতায়েন করেছে। পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তেজনাপূর্ণ হচ্ছে। এরপর বাইডেনের কথায় প্রশ্ন জেগেছে, তাহলে যুদ্ধ কি আসন্ন?
এনবিসি নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেছেন, আমরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করছি। এবার পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। পরিস্থিতি যে কোনো দিকে মোড় নিতে পারে। বাইডেনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পরিস্থিতি খারাপ হলে কি অ্যামেরিকার নাগরিকদের উদ্ধার করতে সেনা পাঠাবেন? বাইডেন জানিয়ে দেন, সেই সম্ভাবনা নেই। অ্যামেরিকা ও রাশিয়ার সেনা যদি একে অন্যের ওপর গুলি চালাতে শুরু করে, তাহলে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। আমরা এখন আলাদা বিশ্বে বসবাস করছি। আগের অবস্থা আর নেই। সূত্র : এপি, এএফপি, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।