Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা সম্পন্ন

বউ মেলা আজ

বগুড়া ব্যুরো, গাবতলী (বগুড়া) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৮ এএম

বগুড়ার গাবতলীতে কয়েকশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা বসার পর তা এক ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করেই অনুুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল বুধবার মেলা চলাকালে বেলা ১১টার দিকে মেলায় গিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে মেলা বন্ধ করতে বলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সালাহউদ্দিন। তবে তিনি মেলা বন্ধের ঘোষণা দিয়ে স্থান ত্যাগ করার পরপরই পুনরায় মেলার কার্যক্রম শুরু হয়। অনেকটা উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পূর্ব বগুড়ার গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ সন্ন্যাসী ও জামাই মেলা গতকাল বুধবার শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে বউ মেলা।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ মেলায় ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য আসে। উপভোগ করে নানা ধরনের বিনোদন ও খেলা। এবার মেলায় বিক্রি হয়েছে কয়েক হাজার মণ মিষ্টি। মাছের দাম কিছুটা চড়া হলেও বিক্রি হয়েছে বড় বড় চিতল, বাউস, বোয়াল, রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন জাতের দেশি মাছ। হিন্দু-মুসলমান, পুরুষ-নারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নেমে ছিল ঐতিহ্যবাহী এ মেলায়। মেলায় বাউস কেজি প্রতি বিক্রি করা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৯০০, বোয়াল ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০, রুই ৪০০ থেকে ৯০০, কাতলা ৪০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এছাড়াও বিভিন্ন মাছ বিভিন্ন মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। স্থানীয় সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে দুইশ’ বছরের পুরনো মেলায় ছিল প্রশাসনের কঠোর নজরদারি। মেলায় প্রসিদ্ধ হলো বড় বড় মাছ, হরেক রকম মিষ্টি, কাঠ বা স্টিলের ফার্নিচার, বরই (কুল), কৃষি সামগ্রীসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ও খাদ্যদ্রব্য হাট-বাজারের ন্যায় কেনা-বেচা করা হয়েছে। এছাড়া বিনোদনমূলক ছিল সার্কাস, বৃত্তের ভেতর মোটর সাইকেল-কার চালানো। এছাড়াও ছিল নৌকা খেলা ও নাগোরদোলা।
উল্লেখ্য, উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দর সংলগ্ন প্রায় দুইশত বছর পূর্বে থেকে স্থানীয় সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে গাড়ীদহ নদী ঘেঁষে ব্যক্তি মালিকানার জমিতে একদিনের জন্য মেলাটি বসে। মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন এসে সমবেত হয়। ঈদ বা কোনো উৎসবে জামাই-মেয়েসহ অন্যান্য আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত না দিলেও তেমন কোন সমস্যা নেই। তবে মেলা উপলক্ষে দাওয়াত দিতেই হবে, যা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। মেলাটি একদিনের জন্য হলেও ওই এলাকায় মেলার আমেজ থাকে সপ্তাহব্যাপী। মেলাটি জন্মের পর থেকে মহিষাবান গ্রামের মণ্ডল পরিবার পরিচালনা করে আসছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মেলার লাইসেন্স দেয়া হয়। এবার মেলাটির নেতৃৃত্বে ছিলেন মণ্ডল পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মণ্ডল। বাংলার প্রতি বছরের মাঘ মাসের শেষ অথবা ফাগুন মাসের প্রথম বুধবার মেলাটি জমে থাকে। কিছু সমস্যার কারণে গত ২-৩ বছর একটু দূরে জমলেও এবার মূল জায়গায় মেলাটি বসানো হয়েছিল।
মেলার পরিচালক ও মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মণ্ডল জানান, প্রশাসনসহ এলাকাবাসির সার্বিক সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে মেলা সম্পন্ন হয়েছে। গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রওনক জাহান জানান, সকলের সার্বিক সহযোগিতায় মেলাটি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। গাবতলী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও পোড়াদহ মেলায় আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল। অপরদিকে পোড়াদহ মেলা শেষে আজ বৃহম্পতিবার মহিষাবান ও রানিরপাড়া গ্রামে পৃর্থকভাবে ২টি বউ মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
এ মেলায় পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ থাকায় তরুণী, গৃৃহবধূসহ সব বয়সের মেয়েরা স্বাছন্দ্যে কেনাকাটা করে থাকে। প্রায় ২৩ বছর পূর্বে থেকে বউ মেলা হয়ে আসছে। বউ মেলায় একটিতে সার্বিক দায়িত্বে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম ও অপরটিতে যুবলীগ নেতা সুলতান মাহমুদ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা সম্পন্ন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ