Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নীরব ধর্মঘটে স্থবির মিয়ানমার সংঘাত রূপ নিচ্ছে গৃহযুদ্ধে

রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বেড়েই চলেছে সশস্ত্র বেসামরিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ এএম

মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের বর্ষপূর্তির দিনটিতে স্থানীয়দের বাড়িতে অবস্থান করে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা। কিন্তু মঙ্গলবারের এই ‘নীরব ধর্মঘটে’ যারা অংশ নেবে তাদের কারাগারে পাঠানোর হুমকি দিয়েছে দেশটির সামরিক শাসকরা। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আটক করে কারাবন্দি করা হয়। তারপর থেকে দেশটিতে বিশৃংখলা বিরাজ করছে। ২০২০ সালের নির্বাচনে বিশাল জয় পেয়ে নির্বাচিত হওয়া এনএলডি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করায় গত বছর মিয়ানমারজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদের ঢেউ বয়ে যায়। কিন্তু সামরিক জান্তা ব্যাপক ধরপাকড় ও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে বিক্ষোভ দমনের উদ্যোগ নেয়। এতে কয়েকশ বেসামরিক বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার পর প্রতিবাদকারীরা সেনাবাহিনীর মোকাবেলায় ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্স’ গঠনের দিকে ঝুকে পড়ে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীরা ইদানিং লোকজনকে ধর্মঘট করার আহ্বান জানাচ্ছে, তাদের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য হঠাৎ প্রতিবাদ মিছিল বের করছে, পুস্তিকা বিতরণ করছে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে। ধর্মঘটটি জান্তার প্রতি একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে, এমন আশা করা তরুণ আন্দোলনকারী নান লিন বলেন, “আমাদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে আর জীবন কারাগারেই কেটে যেতে পারে যদি আমরা ভাগ্যবান হই। আমরা অত্যাচারিত হতে পারি আর নিহত হতে পারি যাদি আমরা হতভাগ্য হই।” নিজেদের ধর্মঘটের সমন্বয়কারী পরিচয় দেওয়া একটি গোষ্ঠী বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি মিয়ানমারের ছায়া সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলোর উপর ‘নো ফ্লাই জোন’ জারি করা ও জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে। অপরদিকে, মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ও বিভিন্ন সংগঠিত সশস্ত্র বেসামরিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বেড়েই চলেছে। এক বছর আগে ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে সামরিক জান্তা ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে অনেক তরুণ জীবনবাজি রেখে লড়াই করছে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে। সহিংসতার মাত্রা এবং হামলাগুলোর মধ্যকার সমন্বয় দেখে মনে হয় সংঘাত ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে গৃহযুদ্ধে। সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে। সংঘাত পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডাটা প্রজেক্ট (অ্যাকলেড) বলছে, সহিংসতা এখন পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। লড়াইগুলোর মধ্যে সমন্বয় বেড়েছে এবং শহর এলাকায় পৌঁছে গেছে। নিহতের সংখ্যা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত যদিও যাচাই করার সুযোগ কম। তবে অ্যাকলেড বলছে, ২০২১ সালের এই দিনে সামরিক জান্তার ক্ষমতা দখলের পর থেকে আজ পর্যন্ত অন্তত ১২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ তথ্য দিয়েছে অ্যাকলেড। তারা বলছে, আগস্ট থেকে সংঘর্ষগুলো রক্তক্ষয়ী হয়ে উঠতে শুরু করেছে। অভ্যুত্থানের পরপরই বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিল সামরিক বাহিনীর অভিযানে। আর এখন লোকজন মারা যাচ্ছে সরাসরি লড়াইয়ে। অর্থাৎ বেসামরিক নাগরিকরা অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার প্রধান মিশেল ব্যাশেলেট বিবিসিকে বলেছেন, মিয়ানমারের সংঘাতকে এখন গৃহযুদ্ধ বলা উচিত এবং তিনি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাপ প্রয়োগের জন্য আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে সেখানে যেসব গোষ্ঠী লড়াই করছে, তারা পরিচিত হয়ে উঠেছে পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) নামে। এটি মূলত বেসামরিক মিলিশিয়া গ্রুপগুলোর মধ্যকার একটি নেটওয়ার্ক। ১৮ বছর বয়সী হেরা (ছদ্মনাম) যখন সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন, তখন তিনি মাত্রই হাইস্কুল শেষ করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির চিন্তা স্থগিত রেখে এ পথে পা বাড়ান তিনি। মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে একটি পিডিএফ প্লাটুনের কমান্ডার হয়েছেন হেরা। হেরা বলেন, ‘তারা আমাকে বলেছেন, তুমি যদি এটি করতে আসলেই চাও, তাহলে শেষ পর্যন্ত করো। মাঝপথে ছেড়ে দিও না। তখন আমি আমার প্রশিক্ষকের সঙ্গে কথা বলি ও প্রশিক্ষণের পাঁচ দিনের মাথায় পুরোপুরি বিপ্লবে যোগ দিই।’ পিডিএফ গঠিত হয়েছে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সমন্বয়ে যেখানে আছেন কৃষক, গৃহিনী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী। তারা সামরিক জান্তাকে উৎখাতের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সারাদেশেই তারা এক হয়েছে। কিন্তু বামার জাতিগোষ্ঠীর তরুণদের এই বিক্ষোভে যুক্ত হওয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্য। মিয়ানমারের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এবারই প্রথম সেনাবাহিনী বামারদের প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। রয়টার্স, বিবিসি।

 

 



 

Show all comments
  • Md. zakiul islam ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৯:০০ এএম says : 0
    বার্মার গৃহযুদ্ধ থেকে সব স্বৈর শাসকদের শিক্ষা নেয়া উচিত । শুধু জুলুম নির্যাতন , গুম খুন করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা যায় না । সব নিপীড়িত মানুষের জন্য শুভেচ্ছা রইলো ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ