Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রদীপ-লিয়াকতের মৃত্যুদন্ড দ্রুত কার্যকর ও পৃষ্ঠপোষকদের আইনের আওতায় আনার দাবী

কক্সবাজার থেকে শামসুল হক শারেক | প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৪:৩৮ পিএম | আপডেট : ৪:৫০ পিএম, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

দেশজুড়ে আলোচিত চাঞ্চল্যকর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি খুনী প্রদীপ কুমার দাশ এবং বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। এখন দাবী উঠছে এই রায় দ্রুত কার্যকর করার এবং বন্দুক যুদ্ধের নামে ক্রসফায়ার বাণিজ্যে তাদের পৃষ্ঠপোষকদেরও আইনের আওতায় আনার।

ভোক্তভোগীদের মতে তৎকালীন কক্সবাজার জেলা ও পুলিশ প্রশাসনে যারা ছিলেন তাদের কি কোন দায়িত্ব ছিলনা প্রদীপ-লিয়াকতদের অপকর্মের নিয়ন্ত্রণ করার? নাকি তারাও প্রদীপ-লিয়াকতদের লুটপাট বাণিজ্যের সুবিধাভোগী ছিলেন? তারা অপকর্মের দায় এড়াতে পারেন না। তাই তাদেরও আইনের আওতায় আনা দরকার।

এই এই দাবি মামলার বাদী পক্ষ এবং টেকনাফের শতশত নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদের। তাদের মতে প্রদীপ ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্বেচ্ছাচারিতায় প্রায় দুইশত মানুষ খুন করেছে। ঘরবাড়ি ছাড়া করেছে হাজার হাজার মানুষকে। লুটপাট করেছে শত শত পরিবারের সহায় সম্পদ। এই অপকর্মের পেছনে প্রদীপ-লিয়াকতকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

ওসি প্রদীপের হাতে নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তাফা বলেন, ওসি প্রদীপের ইয়াবা কারবার ও গুম খুনসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় তার বিরুদ্ধে ৬টি মিথ্যা মামলা করা হয়। এছাড়া ওসি প্রদীপ তাকে ঢাকা থেকে আটক করে থানায় এনে চরম নির্যাতন এবং মিথ্যা মামলায় প্রায় এক বছর জেল খাটতে বাধ্য করে। হাতের নখ তুলে নেয় এবং চোখে মরিচের গুঁড়া দিয়ে চোখ নষ্ট করে ফেলার চেষ্টা করেছিল। তিনি ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের ফাঁসির রায় দ্রুত কার্কর এবং যাদের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রদীপ-লিয়াকতরা এত অপকর্মের সাহস পেল তাদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবী জানান।
টেকনাফ ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হালিমা খাতুন তার ছেলে আবদুল আজিজের হত্যার বিচারে প্রদীপ লিয়াকতের ফাঁসির রায়ে সন্তুষ্ট। তবে এই রায় দ্রুত কার্যকর চান তিনি।

টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকার হাফেজ আহমদ বলেন, ‘আমার ভাই শাহাব উদ্দিনকে ধরে নিয়ে গিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করে ওসি প্রদীপ। কিন্তু আমরা এত টাকা দিতে পারিনি বলে নির্মমভাবে হত্যা করে আমার ভাইকে। আমি ও আমার পরিবার চাই খুনি প্রদীপ-লিয়াকতের ফাঁসি দ্রুত কার্যকর হউক।

এদিকে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে কক্সবাজার জেলা কারাগারের এখন আলাদা কনডেম সেলে রাখা হয়েছে।

সোমবার ফাঁসির আদেশ দেয়ার পর সন্ধ্যায় কারাগারে নিয়ে লিয়াকত এবং প্রদীপকে আলাদা করা হয়। এরপর তাদের কনডেম সেলে পাঠানো হয়। জানা গেছে, কক্সবাজার কারাগারে আলাদা কোনো কনডেম সেল না থাকায় লিয়াকত এবং প্রদীপকে যে কক্ষে রাখা হয়েছিল, সেটিকেই কনডেম সেল ঘোষণা করেছে কারা কতৃপক্ষ।

এর আগে সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলার রায়ে বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও বরখাস্ত ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। ওই মামলার ২৫ আসামীর আরো ৬জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং অপর ৬আসামীকে খালাস দেন।

মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় দুই প্রধান আসামি প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীর ফাঁসির রায়ের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে বলে জানালেও সাতজনের খালাস নিয়ে মামলার বাদী সিনহার বড় বোন শারমীন শাহরিয়ার এর আছে অসন্তোষ। তাঁর মতে তাদেরও কিছুটা দায়বদ্ধতা ছিল। একেবারেই যে দায়বদ্ধতা ছিল না তা না। সেক্ষেত্রে হয়ত তাদের কিছু সাজা হতে পারত।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিনহা হত্যা

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
৩০ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ