গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় অভিযান চালিয়ে দু’টি ডাকাত দলের ১৬জনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। আব্দুল্লাহপুর থেকে দূরপাল্লার বাসে ওঠা চিকিৎসকসহ যাত্রীদের নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ৮ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। চক্রটি ভাড়া বাসে করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত। গত রোববার রাতে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো-নাঈমুর রহমান নাঈম, আবু জাফর বিপ্লব, সজিব মিয়া, জহুরুল ইসলাম, আলামিন, দিলিপ সোহেল, আলামিন ও শাহনেওয়াজ ভূঁইয়া আজাদ। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, চলতি মাসের গত ২০ জানুয়ারি দিবাগত রাতে টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) শফিকুল ইসলাম তার বন্ধুসহ উত্তরা পশ্চিম থানার আব্দুল্লাহপুর পেট্রোল পাম্পের সামনে থেকে টাঙ্গাইলের উদ্দেশে আর কে আর পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। বাসে ওঠা মাত্রই ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাকে দুই হাত ও চোখ বেঁধে ফেলে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা নগদ এক লাখ ১৫ হাজার টাকা, বিকাশে থাকা পাঁচ হাজার টাকা ও ব্যাগে থাকা দুটি ব্যাংকের এটিএম কার্ড দিয়ে আরও এক লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ মোবাইল ফোন ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেন ডাকাতরা।
তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ডাকাতদলটি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আর কে আর পরিবহনের একটি বাস ভাড়ার কথা বলে সাভারের গেন্ডা এলাকায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে ডাকাতরা প্রথমে বাসের ড্রাইভার ও হেলপারকে জিম্মি করে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেন। পরে বাসটি নিয়ে ঢাকা মহানগর এলাকার বিভিন্ন সড়কে ঘুরতে থাকে। আর টার্গেট করে যাত্রী উঠিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-মুখ বেঁধে সঙ্গে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে তাদের নির্জন স্থানে নামিয়ে দেয়। চক্রটি ঢাকার সাভার, টাঙ্গাইল ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে একইভাবে ডাকাতি করে। ডাকাতদের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া বাস ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে ডাকাতরা নিজেদের সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ওই চিকিৎসক ডাকাতির ঘটনার পর বিভিন্ন থানায় ঘুরেছেন মামলা করতে। কিন্তু তিনি প্রথমে কোনো আইনি সহায়তা পাননি। ডাকাতির ঘটনার পর ভুক্তভোগী কিভাবে আইনি সহায়তা নিতে পারেন এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, বাসে ডাকাতির ক্ষেত্রে চলার পথ থেকে শুরু করে বাসটি যে এলাকা দিয়ে যাবে এবং বাসটি যে এলাকায় যাত্রা শেষ করবে সেসব এলাকার যেকোনো থানায় ভুক্তভোগীরা মামলা করতে পারবেন। এই ঘটনায় মামলা নেয়ার গড়িমসি সম্পর্কে আমরা জেনেছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। যেকোনো ঘটনা ঘটলেই অভিযোগ করতে নিতে হবে । না হলে আমরা অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে পারব না। আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে বিষয়টি জেনে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছি। এরপরই গ্রেফতারদের একাধিক ডাকাতির ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। এছাড়া ওই চিকিৎসক রোববার উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করে গেছেন। তিনি যেহেতু উত্তরা থেকে উঠেছেন, সেজন্য উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলাটি করেছেন। মামলা না হলে আমাদের জন্য ক্ষতিকর। যেসব থানা প্রাথমিকভাবে মামলা নিতে চায়নি, তারা হয়তো চিন্তা করেছে বাসটি কোথা থেকে এসেছে, কীভাবে গ্রেফতার করবে এসব বিষয়। তবে এটা ঠিক কাজ হয়নি। এ বিষয়ে সেসব থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।
ডিবি পরিচয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি, গ্রেফতার ৮ঃ মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগ। গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) কে এম হাফিজ আক্তার। চক্রের গ্রেফতার সদস্যরা হলেন- মূলহোতা মোজাম্মেল হোসেন আপেল ওরফে হাজী, মো. জাহাঙ্গীর আলম, জমির খান, মজিবর রহমান মজিদ ওরফে মোক্তার, মাসুম গাজী, শফিকুল খরাদী, মো. কুদ্দুস আলী ও মো. কাউছার মিয়া।
তিনি বলেন, গত রোববার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ১টি সিলভার রঙের মাইক্রোবাস, ১টি বাটযুক্ত ব্যারেল কাটা দুনালা বন্দুক, ১টি ওয়্যারলেস সেট, ১টি হ্যান্ডকাফ, ২টি ডিবি লেখা নকল জ্যাকেট, ২টি লোহার চাপাতি ও ২টি লোহার ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, রোববার সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, মোহাম্মদপুর থানার বসিলা তিন রাস্তার মোড় নূর বিরিয়ানী দোকানের সামনে একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্যরা ১টি মাইক্রোবাস ও ১টি প্রাইভেটকার নিয়ে অস্ত্রশস্ত্রসহ ডাকাতি প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরে সেখানে গিয়ে একটি হায়েস গাড়ির সামনে ডিবি লেখা স্টিকার লাগানো এবং চালকের পাশের সিটে বসা ব্যক্তির হাতে ওয়্যারলেস সেট দেখতে পাওয়া যায়। পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য ডিবি টিম সামনে অগ্রসর হলে হায়েস মাইক্রোবাসের সামনে থাকা প্রাইভেটকারটি দ্রুত গতিতে গাবতলীর দিকে চলে যায়। পরে মাইক্রোবাসটি ঘিরে ফেলা হয়। মাইক্রোবাসের বাম পাশের দরজা খুললে ডিবি লেখা জ্যাকেট পরিহিত একজন ব্যক্তি দৌঁড়ে পালানো চেষ্টা করলে তাকে ধরা হয়।
তিনি বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, গত কয়েক মাসে এ ডাকাত দলটি টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, হবিগঞ্জ এবং বি-বাড়ীয়াসহ রাজধানীর আশপাশ এলাকায় বেশ কয়েকটি ডাকাতি করেছে। এ চক্রের সঙ্গে বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা ও সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ও চাকরিচ্যুত বেশ কিছু সদস্য সম্পৃক্ত। এ পেশাদার চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।