বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ক্ষণস্থায়ী এ ভুবনে তারা বড়ই দুর্ভাগা, যারা এ মরীচিকাময় জীবনের জন্যই আমৃত্যু চেষ্টা ও শ্রম ব্যয় করে যায়। কিন্তু আখেরাতের অনন্ত জীবনের জন্য প্রস্তুতি নিতে অবহেলা করে। নবীজী ওই ব্যক্তিকে বুদ্ধিমান বলেছেন, যে আখেরাতের জন্য কাজ করে। বেছে বেছে এমন কাজ করার চেষ্টা করে, যেটা অনন্ত জীবনের সম্বল হবে। জাহান্নামীরা আল্লাহ তাআলার কাছে অনুনয় করে শাস্তি এড়াতে না পেরে কমাতে চাইবে। জাহান্নামের পাহারাদার ফেরেশতাগণকে তারা বলবে, আপনারা আল্লাহর কাছে সুপারিশ করুন, যেন আমাদের শাস্তি খানিকটা কমিয়ে দেন, অন্তত এক দিনের জন্য হলেও কিছুটা লাঘব করে দেন। ফিরিশতাগণ তাদের হয়ে সুপারিশ করবেন না।
তারা জান্নাতীদেরকে ডাক দিয়ে বলবে, ‘আমাদের ওপর একটু পানি ঢেলে দাও, অথবা আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে যে নিআমত দান করেছেন, তার সামান্য কিছু হলেও দাও। জান্নাতীরা বলবে, এসব নিআমত আল্লাহ তাআলা কাফেরদের জন্য হারাম করেছেন।’ (সূরা আরাফ : ৫০)।
জান্নাতীদের সঙ্গে তাদের এমন কথাও হবে যে, জান্নাতীরা জিজ্ঞেস করবে, তোমরা জাহান্নামে কেন? তারা উত্তরে বলবে, ‘আমরা নামাজ পড়তাম না, মিসকীনদেরকে খাওয়াতাম না, আখেরাত দিবসকে অস্বীকার করতাম। এখন এই নিশ্চিত বিষয়টি আমাদের সামনে এসে গেছে।’ (সূরা মুদ্দাছ্ছির : ৪৩-৪৭)। কাজেই এখন আর তাদের জন্য কেউ সুপারিশ করবে না।
এভাবে তারা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে যাবে। আরহামুর রাহিমীন তাদের কথা শুনবেন না। রাসূল ও ফিরিশতাগণ তাদের জন্য সুপারিশ করবেন না। হাশরের ময়দানে তাদের স্বজন-পরিজন তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। শয়তানও তাদের উপকার করতে ব্যর্থ হবে। তখন তারা আফসোস করে বলবে, ‘হায়! যদি আমরা মাটি হয়ে যেতাম।’ তারা মাটির সাথে মিশে যেতে চাইবে। নিজেদের অস্তিত্ব মুছে ফেলতে চাইবে। কিন্তু শাস্তি ভোগ করা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। আল্লাহ তাআলা কোরআনে অনেক জায়গায় বলেছেন, আমি জানি, শাস্তির মুখোমুখি হওয়ার পরে তারা কী বলবে। বিভিন্নভাবে তিনি কোরআনে তা ব্যক্ত করেছেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হেদায়েত দান করুন, যেন সময় থাকতেই নিজেদেরকে শুধরে নিতে পারি। রাব্বুল আলামীন যে ভয়াবহ দিবসের ব্যাপারে বহুবার সতর্ক করেছেন, সেই চূড়ান্ত ফলাফলের দিন যেন আমাদেরকে আফসোস করতে না হয়। যাদের ব্যাপারে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদেরকে তো সতর্ক করা হয়েছিল, কিন্তু তোমরা তা শোনোনি। কাজেই এখন তোমাদের কথাও শোনা হবে না। তোমরা জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে থাকো। আমরা যেন সেদিন ওই দলভুক্ত না হই, যাদের ব্যপারে রাসূল বলবেন, আল্লাহ! এরা আপনার কথা বিলকুল পরিত্যাগ করেছিল।
আল্লাহ তাআলা সবাইকে রক্ষা করুন এবং তাঁর পথে ফিরে আসার ও দ্বীনের ওপর অবিচল থাকার তাওফীক দান করুন- আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।