Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

প্রাণীজগতে কার বুদ্ধি কেমন?

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:৪৬ পিএম

তারা কেউ গুনতে পারে, কেউ আবার বিভিন্ন ভাষা শনাক্ত করতে পারে৷ কেউ পারে আয়নায় নিজেদের চিনতে৷ পায়রা থেকে ডলফিন - প্রাণীজগতের বুদ্ধিমত্তা কিন্তু সত্যি অবাক করে দেয়৷

পায়রাদের পাণ্ডিত্য নিয়ে কোনও কথা হবে না৷ গবেষণা বলছে, পায়রা পড়তে পারে, এমনকি বানান ভুল পর্যন্ত ধরতে পারে৷ মানুষের থেকেও বেশি কাজ করতে সক্ষম পায়রা৷ আকারে মানুষের থেকে ছোট হলে কী হবে, পায়রাদের মস্তিষ্কে মানুষের মস্তিষ্ক থেকে প্রতি ঘন মিলিমিটারে ছয়গুণ বেশি স্নায়ু কোষ রয়েছে৷

বিজ্ঞানীরা যখন বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে কথা বলেন, তখন সাধারণত সমস্যা সমাধান করার এবং সংযোগ স্থাপনের বিষয়টি শনাক্ত করার কথা বলেন৷ আগের কোনও অভিজ্ঞতা থেকে সমস্যার সমাধান করে প্রাণীরা৷ তারা কিন্তু বেশ স্মার্ট৷ আগামী দিনের পরিকল্পনাকে প্রাণীজগতে উন্নতমানের বিষয় হিসাবে দেখা হয়৷

প্রাইমেটদের মতোই বুদ্ধি রাখে কাকেরা৷ কাক গণনা করতে পারে৷ একাধিক জিনিস ব্যবহার করতে পারে৷ খাবার লুকিয়ে রাখলেও ঠিক খুঁজে বের করতে পারে৷ এরপর নিরাপদ জায়গায় সেই খাবার নিয়ে রাখে কাকের দল, তবে সকলের অগোচরে৷ কাক আয়নায় নিজেকে চিনতে পারে, যাকে আত্মসচেতনতার একটা ডিগ্রি হিসেবে ধরা যেতে পারে৷

মাছও নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে চিনতে পারে৷ তবে তারা নিজেরা কতটা আত্মসচেতন তা স্পষ্ট নয়৷ একেবারে খুদে ক্লিনার ব়্যাস মাছ আয়নায় নিজের ছবির সঙ্গে লড়াই করতে চায়, এমনকি উলটো সাঁতার কেটেও পরীক্ষা করে দেখে ব্যাপারটা আসলে কী৷ অবশেষে, বিজ্ঞানীরা তাদের শরীরে যে সব চিহ্ন দিয়েছিলেন, আয়না দেখে সেগুলি তারা সরিয়ে দেয়৷ সম্ভবত আয়না কীভাবে কাজ করে, তা তারা বুঝতে পারে৷

বুদ্ধিমান প্রাণীদের মধ্যে মাছেদের কি গণ্য করা হয়? এটির সঙ্গে জলের নীচে কম উদ্দীপক পরিবেশের সম্পর্ক থাকতে পারে৷ সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, স্থলভাগের পরিবেশ তুলনামূলক জটিল৷ তাই সেখানকার প্রাণীরা জটিল কৌশল ও পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে৷ আর সামুদ্রিক প্রাণীরা সমস্যার সমাধানে আগে থেকে ঠিক করা কিছু উপায়ের উপর নির্ভর করে৷

অক্টোপাস মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণী৷ ডোনাট আকারের একটি মস্তিষ্ক এবং শুঁড়ের মতো আটটি হাতে থাকা অজস্র নিউরনের কারণে এটি জটিল কাজ করতে পারে ও ভিন্ন ভিন্ন মানুষকে চিনতে পারে৷ প্রবাল প্রাচীরের কোণে গিয়ে খাবার খুঁজে বের করতে করতেই অক্টোপাস বোধহয় এতটা বুদ্ধিমান হয়ে গিয়েছে৷

প্রাণীজগতের বুদ্ধিমানদের অন্যতম হলো ডলফিন, কারণ তারা খুবই সামাজিক, প্রাণবন্ত এবং সহজে সকলের সঙ্গে মিশতে পারে৷ যদিও কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, তাদের বুদ্ধিমত্তার বিষয়টি একটু বাড়িয়ে বলা হয়৷ বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে বিচার করলে কুকুরকে ছাপিয়ে যেতে পারে শূকর৷ নির্দেশ পালনে সক্ষম শূকর, নাম ধরে ডাকলেও সাড়াও দেয়৷ জটিল বিষয়ও অনেক সময় বুঝতে পারে৷ জয়স্টিক চালানো শেখানো যায় তাদের৷ ডিভাইসের গতিবিধি এবং পর্দায় কার্সারের নড়াচড়া বুঝতে পারে৷

কুকুরপ্রেমী এবং বিড়ালপ্রেমীরা দীর্ঘকাল ধরে তর্ক করে চলেছে কে বেশি স্মার্ট? কুকুর বিভিন্ন মানুষের ভাষার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে, নামের দ্বারা একাধিক বস্তু শনাক্ত করতে পারে এবং জটিল কাজে তার মালিককে সহযোগিতা করতে পারে৷ দুই প্রাণীর মধ্যে তুলনা করা কঠিন৷ কুকুররা যখন খুশি মানুষের সঙ্গী হিসেবে খেলতে পারে৷ বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষায় বিড়ালদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই৷

হাতিকে অত্যন্ত মানসিক বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী বলে মনে করা হয়৷ কেনিয়ার অ্যাম্বোসেলি ন্যাশনাল পার্কের হাতিরা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে আসা বিভিন্ন ধরনের হুমকির মধ্যে পার্থক্য করতে পারে এবং সে অনুযায়ী সমাধান করতে পারে৷ এমনকি তারা তাদের শিকারি মাসাই গোত্রের মানুষের কণ্ঠ বুঝতে পারে৷ আবার তাদের দেখাশোনা করা কাম্বা গোত্রের মানুষ দেখলে শান্ত থাকে৷

জটিল পরিবেশের পাশাপাশি সামাজিকতা বুদ্ধিমত্তার বিবর্তনে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়৷ ঘোড়া, কুকুরের মতো প্রাণী হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের সঙ্গে রয়েছে, তাই সঙ্গী হিসেবে মানুষকে তারা বুঝবে এটা স্বাভাবিক৷ ঘোড়া শত্রুদের তুলনায় বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষের মুখ চিনতে পারে৷ ছাগলের মতো অন্যান্য দলবদ্ধ প্রাণীরা নিজেদের ডাক বা গলার স্বর থেকে প্রজাতির অন্য প্রাণীর মানসিক অবস্থা বুঝতে পারে৷

ঘোড়াদের যদি ছাগলের চেয়ে স্মার্ট মনে হয়, তার একটা কারণ হতে পারে, আমরা নিজেদের মতো করে তাদের বিচার করছি৷ প্রাইমেটোলজিস্ট ফ্রান্স ডি ওয়াল বুদ্ধিমত্তার মূল্যায়ন নিয়ে বলেছেন, ‘‘মানুষ সবসময় বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞা গণনার ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে তৈরি করেছে৷ কিন্তু অনেক প্রাণীর ক্ষেত্রে বেঁচে থাকতে গেলে গণনার ক্ষমতার প্রয়োজন নেই৷’’

শিম্পাঞ্জি ও মানুষের ডিএনএর ৯৮ শতাংশই সম্পূর্ণ একরকম৷ তবে মানুষের মস্তিষ্ক ও শরীরের ওজনের অনুপাত শিম্পাঞ্জিদের তুলনায় তিনগুণ৷ আসল পার্থক্য হলো মানুষের একে অপরের থেকে শেখার ক্ষমতা, জ্ঞানকে পরিমার্জন করা, বিস্তৃত করা এবং ধারণা তৈরি করার ক্ষমতা রয়েছে৷ এছাড়াও ক্রমশ এগিয়ে চলার সংস্কৃতি তৈরি করতে পারে শুধুমাত্র মানুষ৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ