Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামেই রয়েছে প্রকৃত শান্তি ও সমৃদ্ধি

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

একটি সমীক্ষা অনুসারে জানা যায় যে, বর্তমান বিশে^ প্রায় আড়াই হাজারের মতো ক্ষুদ্র-বৃহৎ ধর্মমত প্রচলিত আছে। তন্মধ্যে ইসলামই একমাত্র সত্য ও পরিপূূর্ণ জীবনবিধান। যা আল্লাহপাকের মনোনীত। হযরত আদম (আ.)-এর মাধ্যমে ইসলামের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে এবং তা’ পরিপূর্ণতা লাভ করেছে বিশ^নবী হযরত মোহাম্মাদ মোস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.)-এর মাধ্যমে। তাঁর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে সর্বশেষ আসমানী কিতাব আল কোরআন। ইসলামের সামগ্রিক পরিপূর্ণতার রূপ রেখা আল কোরআনে বিধৃত আছে।

তাই, ইহকাল ও পরকালের শান্তি ও সমৃদ্ধি কেবলমাত্র ইসলামেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব। অন্য কোনো ধর্মমত-এর সন্ধান দিতে পারেনি বলে সেগুলোর অপূর্ণতা বিশ^বাসীর নিকট সুস্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম, নিরাপত্তার ধর্ম। প্রকৃত সমৃদ্ধি, উন্নতি, অগ্রগতি ও উৎকর্ষ লাভের পথ ইসলাম সহজতর করে তোলেছে। ইসলামে শান্তি ও শাস্তি লাভের জীবন পরিক্রমা দুটি ধারার সম্মিলনে ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে উঠেছে। একটি ধারা হলো বিশ^াস গত শান্তি এবং অপর ধারাটি হলো কর্মগত শান্তি। আজ আমরা সহৃদয় পাঠক ও পাঠিকাদের সামনে বিশ^াস গত শান্তির দিকটি উপস্থাপন করতে প্রয়াস পাব। আসুন, এবার সে দিকে লক্ষ্য করা হোক।

আরবি ভাষায় শব্দ মূল অথবা ক্রিয়া মূল অর্থাৎ মূল ধাতুকে অবলম্বন করেই শব্দ ও ক্রিয়ার পরিসর সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলে। এরই ধারাবাহিকতায় আলিফ, মীম, নুন অর্থাৎ ‘আমনুন’ হতেই ইসলামের বিশ^াসগত ধারাটির বিস্তৃতি গঠেছে। আরবি আমনুন মূল ধাতুর বাংলা প্রতি শব্দ হলো শান্তি, স্বস্তি, নিরাপত্তা, উদ্বেগহীনতা ইত্যাদি। আমনুন মূল ধাতুর শব্দ মূল ‘আল আমনু’ শব্দটি আল কোরআনে তিনবার ব্যবহৃত হয়েছে।

যথা : (ক) ইরশাদ হয়েছে : আর যখন তাদের কাছে পৌছে কোনো সংবাদ শান্তি সংক্রান্ত অথবা ভয়ের, তখন তারা সে গুলোকে রটিয়ে দেয়। আর যদি সেগুলো পৌঁছে দিত রাসূল পর্যন্ত অথবা তাদের শাসকদের পর্যন্ত, তখন সেসব বিষয় অনুসন্ধান করে দেখা যেত, যা তাতে অনুসন্ধান করার মতো আছে। বস্তুত : আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা যদি তোমাদের ওপর বিদ্যমান না থাকত তবে তোমাদের অল্প কতিপয় লোক ছাড়া সবাই শয়তানের অনুসরণ করতে শুরু করত। (সূরা নিসা : ৮৩)।

(খ) ইরশাদ হয়েছে : যাদেরকে তোমরা আল্লাহর সাথে শরীক করে রেখেছ, তাদেরকে কিরূপ ভয় কর? অথচ তোমরা ভয় করো না যে, তোমরা আল্লাহর সাথে এমন বস্তুকে শরীক করছ, যাদের সম্পর্কে আল্লাহপাক তোমাদের প্রতি কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। অতএব উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি লাভের অধিক যোগ্য কে? যদি তোমরা জ্ঞানী হয়ে থাক। (সূরা-আনয়াম : আয়াদ-৮১)।

(গ) ইরশাদ হয়েছে : যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ^াসকে শেরেকীর সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যই শান্তি ও এবং তারাই সুপথগামী। (সূরা আনয়াম : ৮৩)। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, উল্লিখিত তিনটি আয়াতে ‘আল আমনু’ শব্দের মাধ্যমে শান্তি ও নিরাপত্তাকেই বুঝানো হয়েছে।

আর আমনুন মূল ধাতু হতে উৎসারিত আমনান্ শব্দটি আল কোরআনে তিনবার ব্যবহৃত হয়েছে। যথা (ক) ইরশাদ হয়েছে : যখন আমি কাবা গৃহকে মানুষের জন্য সম্মিলন স্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইবরাহীমের দাঁড়ানোর স্থানকে নামাজের জায়গা বানাও এবং আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওবাহকারী, অবস্থানকারী ও রুকু সেজদাহকারীদের জন্য পবিত্র রাখ। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১২৫)।

(খ) ইরশাদ হয়েছে : যখন ইবরাহীম বললেন, হে পরওয়ারদিগার। এ স্থানকে তুমি শান্তিধাম করো, এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও কিয়ামতে বিশ^াস করে, তাদেরকে ফলের দ্বারা রিজিক দান করো। (সূরা বাকারাহ : ১২৩)।

(গ) ইরশাদ হয়েছে : এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার ইবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। (সূরা নূর : ৫৫)। এই তিনটি আয়াতেও আমনান, শব্দের অর্থ শান্তি, ও স্বস্তি ও উদ্বেগহীনতা ইত্যাদি

আর আমনুন, মূল ধাতু হতে উৎপাদিত আমানাতান্ শব্দটির ব্যবহার আল কোরআনে দু‘বার হয়েছে। যথা (ক) ইরশাদ হয়েছে : অতঃপর তোমাদের ওপর শোক ও দুশ্চিন্তার পর শান্তি অবতীর্ণ করলেন, যা ছিল তন্দ্রার মতো। (সূরা আলে ইমরান : ১৫৪)।

(খ) ইরশাদ হয়েছে : যখন তিনি নিজের পক্ষ হতে তোমাদের ওপর তন্দ্রাচ্ছন্নতা আরোপ করেন তোমাদের প্রশান্তির জন্য এবং তোমাদের ওপর আকাশ হতে পানি অবতরণ করেন। (সূরা আনফাল : ১১)। এই দুটি আয়াতেও আমানাতান শব্দের দ্বারা শান্তি এবং নিরাপত্তাকেই বোঝানো হয়েছে।

অনুরূপভাবে আমনুন মূল ধাতু হতে উৎসারিত আরবি ভাষার যাবতীয় শব্দাবলি যেমন : ঈমান আমনান, আল আমীন, আমানাত, মু’মিন, মুমিনাত ইত্যাদির মাঝে ও শান্তি ও স্বস্তির ফাল্গুধারা প্রবাহিত আছে। তাই, ইসলামে বিশ¦রস গত শান্তিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে এবং যেখানে এই শান্তির রেশ অবশিষ্ট নেই, তাকে ইসলাম বহিভর্‚ত বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে।



 

Show all comments
  • মোঃ কামরুজ্জামান ৩০ জানুয়ারি, ২০২২, ৬:০৩ এএম says : 0
    ইসলামের উদ্দেশ্য ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি। ইসলামি জীবনাদর্শ বিশ্বের সব মানুষের জন্য। ইসলামের লক্ষ্য হলো মানুষের সমাজে শান্তি, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ ও মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করা।
    Total Reply(0) Reply
  • হুসাইন আহমেদ হেলাল ৩০ জানুয়ারি, ২০২২, ৬:০৪ এএম says : 0
    ইসলামি বিধিবিধানের মূল লক্ষ্য মানুষের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং যাবতীয় অকল্যাণ ও ক্ষতিকর দিক থেকে মানবসমাজকে রক্ষা করা।
    Total Reply(0) Reply
  • মামুন আহাম্মাদ ৩০ জানুয়ারি, ২০২২, ৬:০৪ এএম says : 0
    মানুষের জানমাল ও ইজ্জত-আব্রুর হেফাজত করার নাম ইসলাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব, তারা ইবাদত করুক এই গৃহের মালিকের, যিনি তাহাদিগকে ক্ষুধায় আহার দিয়েছেন এবং ভীতি হইতে তাহাদিগকে নিরাপদ করেছেন।’ (সূরা-১০৬ কুরাইশ, আয়াত: ৩-৪)।
    Total Reply(0) Reply
  • জি এম জাহাংগীর আলম ৩০ জানুয়ারি, ২০২২, ৬:০৪ এএম says : 0
    শান্তি ও নিরাপত্তার সুমহান আদর্শ ইসলাম। ইসলামি জীবনাদর্শে বিশ্বাসী কোনো ব্যক্তি পরিবার সমাজ তথা রাষ্ট্রে অশান্তির লেশমাত্রও নেই। ইসলাম সর্বদা শান্তি নিরাপত্তা ও সুন্দরের শিক্ষা দেয়।
    Total Reply(0) Reply
  • জনিরুল ইসলাম ৩০ জানুয়ারি, ২০২২, ৬:০৫ এএম says : 0
    ইসলাম থেকে বিচ্যুতিই হলো বড় অশান্তি। তাই ইসলামের শান্তির ছায়া থেকে সরে গিয়ে কুফরি কিংবা পাপাচারের কারণে সমাজে অশান্তি দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হলো সবচেয়ে বড় মুনাফেকি বা কপটতা। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন- ‘নিশ্চয় মুনাফিক (কপট ব্যক্তিরা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টির ফলে) জাহান্নামের সবচেয়ে নিচে অবস্থান করবে।’ অর্থাৎ যার পরে আর কোনো অপরাধীর বাসস্থান নেই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন