Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আপন পেশায় যেন থাকে শ্রদ্ধার দৃষ্টি-১

মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

দুনিয়ায় জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষকে কোনও না কোনও কাজ করতে হয়। এতে যা উপার্জন হয় তা দ্বারাই প্রত্যেকে তার নিজের ও পোষ্যবর্গের প্রয়োজন মেটায়। সম্মানজনকভাবে প্রয়োজন মেটানো ও বেঁচে থাকার সামগ্রী সংগ্রহের জন্য এটাই দুনিয়ার চিরাচরিত নিয়ম। আল্লাহতায়ালা চাইলে এ নিয়মের বাইরেও রিজিক দিতে পারেন। কেননা, প্রকৃত রিজিকদাতা তিনিই এবং রিজিক দানের জন্য তিনি কোনও নিয়ম বা মাধ্যমের মুখাপেক্ষী নন, কিন্তু দুনিয়া যেহেতু পরীক্ষার সন্তান এবং আল্লাহতায়ালা মানুষকে সর্বাবস্থায় পরীক্ষা করে থাকেন, তাই মানুষের রিজিক প্রাপ্তিকে উপরিউক্ত নিয়মের অধীন করে দিয়েছেন। এটাও তাঁর পরীক্ষারই একটি পদ্ধতি।

অর্থাৎ মানুষ কোনও একটা উপায় অবলম্বন করবে, কোনও না কোনও পেশায় নিয়োজিত থাকবে এবং তার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার নিকট থেকে রিজিক হাসিল করবে। এ কারণেই কোরআন-হাদিসে মানুষকে রিজিকের জন্য যে কোনও বৈধ উপায় অবলম্বনের প্রতি নানাভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন- এরশাদ হয়েছে, ‘সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর ফযল সন্ধান করবে।’ (সূরা জুমআ : ৯)। মুফাসসিরীনে কেরামের মতে এ আয়াতে ‘ফযল’-এর সন্ধান দ্বারা ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে রিজিক সংগ্রহ করাকে বোঝানো হয়েছে। অন্য আয়াতে আছে, ‘যখন তোমরা ইহরামমুক্ত হবে, তখন শিকার করবে।’ (সূরা মায়িদা : ২)।

এভাবে সালাত ও হজ আদায়ের পর ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিকার কার্যে লিপ্ত হওয়ার আদেশ দিয়ে এসব ফরযের পর রুজি- রোজগারের চেষ্টা করাও যে ফরয সে দিকেই ইশারা করা হয়েছে। মহানবী (সা.)-এর হাদীসে এ ইশারা আরও সুস্পষ্টরূপে ব্যক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘হালাল রুজি উপার্জন করা অপরাপর ফরযের পর একটি ফরয কাজ।’ হালাল রুজি উপার্জনের বিভিন্ন মাধ্যম হতে পারে। তার মধ্যে কে কোনটা গ্রহণ করবে তা নির্ভর করে তার যোগ্যতা, সুবিধা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর। এসবের ভিত্তিতে যে ব্যক্তি যে কাজই বেছে নিক, হৃদয়ে ঈমান ও তাকওয়ার ঐশ্বর্য থাকলে তার জন্য কোনওটিই তুচ্ছ নয়।

কাজেই যথাযথ বিবেচনার পর যে ব্যক্তি যে পেশাই গ্রহণ করবে, তার কর্তব্য সে পেশার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও আন্তরিক থাকা। নিজ পেশার প্রতি যদি শ্রদ্ধার দৃষ্টি থাকে, তবে কাজ সুষ্ঠু ও সুচারু হতে বাধ্য। কিন্তু আজকাল এ জিনিসের বড় অভাব। কাজে ফাঁকি দেওয়া কিংবা দায়সারাভাবে আঞ্জাম দেওয়া শ্রদ্ধাহীনতারই আলামত। এ আলামত আজকাল কোন ক্ষেত্রে না চোখে পড়ে? অথচ প্রতিটি পেশার ভেতরই এমন উপাদান নিহীত রয়েছে, যা শ্রদ্ধা কুড়ানোর ক্ষমতা রাখে।

ঈমানদার ব্যক্তি চিন্তা করবে যে, আপাত দৃষ্টিতে যদিও তার পেশাটি সে নিজেই বেছে নিয়েছে এবং কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাকে সে কাজে নিয়োগ দান করেছে; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আল্লাহতায়ালাই তার নিয়োক্তা। তাঁর ওয়াদা রয়েছে যে, বান্দাকে তিনি রিযিক দান করবেন। সেই ওয়াদা পূরণেরই এটা এক ধরন যে, তিনি তাকে এ কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং প্রকৃত নিয়োগদাতা যখন আল্লাহতায়ালা তখন তাঁর অসীম মর্যাদার কারণে এ নিয়োগও বিশেষ মর্যাদার হকদার।

বিষয়টি এভাবে চিন্তা করলে তখন আর পেশাটা কী, মৌলিকভাবে তা বিবেচ্য থাকে না। সে বিবেচনার দরকার এজন্যও পড়ে না যে, পেশা যাই হোক তা অবলম্বনের লক্ষ্য তো আল্লাহতায়ালার পক্ষ হতে রিজিক লাভ করা। রিজিক আল্লাহতায়ালার অমূল্য দান, মহা নিয়ামত। পেশা যখন এই অমূল্য নিয়ামত হাসিলের মাধ্যম তখন নিয়ামতের মর্যাদায় পেশাও মর্যাদার বিষয় হবে বৈকী।

অর্থাৎ মৌলিকভাবে বিবেচনা করতে হবে কাজের লক্ষ্যবস্তুকে। লক্ষ্যবস্তুর মহত্বের কারণে কাজও মহৎ হয়ে যায়। জগতে বহু কাজ আছে, এমনিতে যার বিশেষ কিছু গুরুত্ব নেই, কিন্তু যেই না তা কোনও মহান লক্ষ্যের সাথে সম্পৃক্ত হয় অমনি তা সেই লক্ষ্যের মহিমায় মহিমান্বিত হয়ে উঠে। পেশার বিষয়টিও সে রকম। যেমন পেশা যদি হয় মৎস-শিকার, তবে সাদামাটাভাবে দেখলে এর বিশেষ মূল্য নেই। জেলে নদীতে মাছ ধরে, সেই মাছ বাজারে বিক্রি করে এবং তার আয় দ্বারা নিজের ও পরিবারের খরচ মেটায়।

ব্যস, এই এতটুকুমাত্র চিন্তা করলে সমাজের চোখে জেলে অবজ্ঞাত হবে এবং হচ্ছেও তাই। কিন্তু যদি দৃষ্টিকে গভীরে নিয়ে যাওয়া যায় এবং চিন্তা করা হয়, জেলে একজন মানুষ, যে কি না সৃষ্টির মধ্যমণি, তার সত্তা আল্লাহতায়ালার অসীম গুণ-বৈচিত্রের বিকিরণ-পাত্র ও তাঁর মারিফাতের আঁধার, সে তার পেশা মৎস্যশিকার দ্বারা আল্লাহতায়ালার পক্ষ হতে রিজিকের ব্যবস্থা করছে ও তার মহিমাপূর্ণ মানবিক জীবিকা রক্ষার রসদ সংগ্রহ করছে, তবে গুণগ্রাহী দৃষ্টির কাছে তার পেশা অবজ্ঞা করার মতো বিষয় থাকবে না। জেলে নিজেও যদি বিষয়টাকে এভাবে ভাবতে শেখে, তবে সে নিজ পেশাকে কখনো খাটো মনে করবে না।

 

 



 

Show all comments
  • Abu Hossain ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৩:০৯ এএম says : 0
    ইসলাম সবসময় জীবনমুখী দর্শন লালন করে। জীবনমুখীতার অন্যতম প্রধান দিক হলো কাজের মাধ্যমে অর্থ সংস্থান করা, যার মাধ্যমে মানবজীবনের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা যায়। তাই শ্রম আমাদের জীবনে এক অপরিহার্য বিষয়।
    Total Reply(0) Reply
  • ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৩:১০ এএম says : 0
    ইসলামে শ্রমের গুরুত্ব খুবই বেশি। শ্রম দিলে সাহায্যের জন্য মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হয় না। অনর্থক, অনৈতিক কাজ থেকেও বেঁঁচে থাকা সহজ হয়। অন্যদিকে অলস মস্তিষ্ককে শয়তান বেশি ধোঁকা দিতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • তরিকুল ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৩:১০ এএম says : 0
    নবীজি (সা.) বলেন, ‘উত্তম উপার্জন হলো নেক ব্যবসা এবং স্বহস্তে উপার্জন।’ হাদিসটিতে দুটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, একটি হচ্ছে উত্তম উপার্জন যা মানুষ নিজে উপার্জন করে এবং নিজ হাতে উপার্জন করে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, কাজেকর্মে ধোঁকা-প্রতারণা এবং আত্মসাতের আশ্রয় যেন না নেওয়া হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • হুসাইন আহমেদ হেলাল ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৩:১১ এএম says : 0
    যেকোনো পেশা অবলম্বন করা হোক, তা যেন হালাল পন্থায় হয় সেদিকে সর্বোচ্চ দৃষ্টি দিতে হবে। কাজে ও চাকরিতে সততা ও স্বচ্ছতার পরিচয় দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • জা চৌধুরী ২৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৩:১১ এএম says : 0
    শ্রমের ব্যাপারে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যখন সালাত শেষ হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো, যাতে তোমরা সফল হতে পার।’ (সূরা জুমআ, আয়াত : ১০)
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলামি

২৭ জানুয়ারি, ২০২৩
৪ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন