বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বাংলাদেশে আর্থিক ক্ষেত্রেই নয়, প্রায় সব ক্ষেত্রেই ভেজাল প্রতারণা ও দুর্নীতির জন্য মানুষ ভয়ে আতঙ্কে সিটিয়ে থাকে। ইসলামী শরীয়াহ ও ফিকহের বিশিষ্ট জ্ঞানী ব্যক্তি ও উলামা মাশায়েখের কর্তব্য এই অব্যবস্থাপনা এবং জাতীয় অবক্ষয়কে রুখে দাঁড়ানো।
মানুষকে নিরাপদ জীবন পথপ্রদর্শন করা। এ দেশে প্রথম থেকেই কনভেনশনাল ব্যাংক বলতেই ছিল সুদভিত্তিক ব্যাংক। আল্লাহভীরু মানুষ হারামের ভয়ে ব্যাংক বীমার কাছেও যেত না। যাদের সঞ্চয়ী হিসাব ছিল, তারাও নিজের টাকার পরে যত যাই জমা হতো তা ব্যাংক থেকে তুলতেন না। বলতেন, সুদ লওয়াও তো গুনাহ আর অন্যকে দেওয়াও গুনাহ। তখন আলেমগণ বলতেন, ব্যাংকে ফেলে রাখলে এই সুদের টাকাগুলো মালিকরা নেবে এবং আবার সুদে লাগাবে। তখন আলেমরা পরামর্শ দিয়ে বলতেন, এসব টাকা ব্যাংক থেকে তুলে সওয়াবের নিয়্যত না করে এমনিতেই কাউকে দিয়ে দিন।
অথবা এমন কোথাও ফেলে দিন, যেখান থেকে অভাবি কেউ কুড়িয়ে নিয়ে ব্যবহার করতে পারে। ব্যাংক থেকে সুদ অনিচ্ছাকৃতভাবে তোলার জন্য তওবা ইস্তেগফার করতে থাকুন। দানের জন্য সওয়াবের আশা করলে কবিরা গুনাহ তো হবেই, হারামকে সওয়াব মনে করায় ঈমানও চলে যাবে। আর অনেকে চলতি হিসাব খুলতেন। যেন কেবল টাকার লেনদেন ও নিরাপত্তা সুবিধাটুকু পাওয়া যায়। টাকার সুদ জমা না হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও সুদী ব্যাংককে প্রচ্ছন্ন সহায়তা করার গুনাহ হতে পারে।
এমন সময় ইমাম আজম আবু হানিফা রহ. এর আমানত ব্যবহার নীতি ও মুদারাবা ভিত্তিক আর্থিক দৃষ্টিকোণ ও কল্যাণমূলক বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমের বিশ্লেষণ করে আধুনিক বিশ্বে শরীয়াসম্মত ব্যাংক চালু হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টি ফিক্সট জমার বিপরীতে অবশ্য প্রাপ্ত সুদ মালিক বা গ্রাহকরা না নিয়ে ইসলামী ব্যাংকগুলো তা বিভিন্ন খাতে ব্যয় করে দেয়। চ্যারিটি বা সামাজিক দায়িত্ব খাতে এই সুদ খরচ হয়।
কিন্তু মালিক ও গ্রাহকরা কেবল হালাল ব্যবসা বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত লাভ-লোকসান, তাকাফুল বা মিউচুয়াল অঙ্গীকারের ভিত্তিতে গড়পড়তা ভাগ করে নেয়। যা ধারণা মতো হয়, তবে কম বেশি হলে একে অপরের সম্মতিতে কম বেশি হারেই বণ্টন করে নেয়। এটিই ইসলামী ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য। যারা বলেন, ইসলামী ব্যাংক আর সাধারণ ব্যাংক সমান। তারা একই রকম। একথা বলা ঠিক না। মক্কার মুশরিকরা বলতো, ইন্নাল বাইআ মিসলুর রিবা, ব্যবসা তো সুদের মতোই। আল্লাহ বলেন, মতো হলেও পার্থক্য আছে। কেননা আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করছেন আর সুদকে হারাম করেছেন। (আল কোরআন।)
সুকুক বন্ড শরীয়াসম্মত নীতিতে প্রস্তাবিত একটি পুঁজি গঠন ও বিনিয়োগ ব্যবস্থা। এর সব ক্ষেত্রে শরীয়া পরিপালন করা উদ্যোক্তা ও ম্যানেজমেন্টের ঈমানী দায়িত্ব। যেমন, ইসলামী ব্যাংক নাম নিলেই প্রতিটি ব্যবসা, বিনিয়োগ শরীয়াসম্মত উপায়ে করা ম্যানেজমেন্ট ও ব্যাংকার পর্যায়ের ঈমানী দায়িত্ব হয়ে যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।