গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
করোনা মহামারীর কারণে অনেক পরিবারের মত অসহায় হয়ে পড়ে রাকিবুলের বাবা-মায়ের পরিবারও। তাই ভাই-বাবার সঙ্গে তাকেও জীবিকার জন্য রাস্তায় নামতে হয়।
রাকিবুল, ১৪ বছরের এক মেধাবী কিশোর। পরীক্ষায় সবসময় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। বাবার সংসারে টানাপোড়েন, বই-খাতা রেখে মাস্ক বিক্রি শুরু করে। কিন্তু কে জানতো জীবিকা নির্বাহের কাজেই নির্মমভাবে প্রাণ হারাতে হবে। দুই বাসের প্রতিযোগিতায় থেমে যায় রাকিবুলের জীবন।
অসুস্থ মা রেজিয়া খাতুন ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ। অসহায় বাবার আর্তনাদ যেন থামছে না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘গরীবের ঘরে জন্ম রাকিবুলের। গরিবের পোলা, বিচারের আশা করা কঠিন।’
জানা যায়, রাজধানীর মগবাজার মোড়ে ২০ জানুয়ারি বিকেলে মাস্ক বিক্রি করার সময় আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের দুটি বাসের যাত্রী তোলার প্রতিযোগিতার মাঝে পড়ে আহত হয় রাকিবুল। গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় রাকিবুলের বাবা রমনা মডেল থানায় মামলা করেন। পুলিশ এখনো দুই বাসের চালকের কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি। দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার কথা জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা।
রাকিবুলের বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যখন ক্লাস ফোরে পড়ি, তখন মা মারা যান। পরের বছর বাবাও চলে যান। এরপর মানুষের বাড়ি কাজকর্ম করে অনেক কষ্টে বড় হয়েছি। বাবার কোনো জমিজমা ছিল না। এলাকার লোকজন বিয়ে দেয়। আমি শশুড়বাড়িতে ছিলাম। অভাবের সংসার। দুই বছর আগে ঢাকায় আসি। রাকিবুল তখন নানার বাড়ি থেকে ক্লাস ফাইভে পড়ে। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় ওকে ঢাকায় নিয়ে আসি।’
তিনি বলেন, ‘রাকিবুল ভালো ছাত্র ছিল। সব ক্লাসে ওর রোল তিন হতো। ছেলে আমার মেধাবী ছিল। ভাবছিলাম, ছেলেটা মেধাবী। ওকে রাস্তাঘাটে দেবো না। কিন্তু অভাবের কারণে আর পড়ালেখা চালাতে পারিনি। তিন বাপবেটা মিলে ইনকাম শুরু করি। অভাবের সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা ফিরে আসতেছিল। এখন সবই শেষ হয়ে গেলো।’
নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ছোট হলেও ছেলেটা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করছে। সারাক্ষণ সংসার নিয়ে চিন্তা করতো। কীভাবে, কি করলে সংসারের উন্নতি হয়। কিন্তু ওরা আমার ছেলেটাকে মেরে ফেললো। কোনো দিন সুখের মুখ দেখতে পারলো না। আল্লাহ যেন ওকে ভালো রাখে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার সাব-ইন্সপেক্টর আবুল খায়ের বলেন, ‘আজমেরী গ্লোরীর দুই বাসের রেষারেষিতে রাকিব মারা যায়। এ ঘটনায় তার বাবা মামলা করেছেন। তদন্ত চলছে। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। তারা ঘটনার পর রাজধানী ছেড়ে অন্যত্র গা ঢাকা দিয়েছে। আশা করছি, দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।’
জানা যায়, মগবাজার মোড়ে আজমেরী গ্লোরীর দুই বাসের পাল্লাপাল্লিতে পিষ্ট হয়ে রাকিব নিহত হয়। গত (২০ জনুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় রাকিবের বাবা নুরুল ইসলাম ওইদিন রাতেই রমনা থানায় সড়ক দুর্ঘটনা আইনে মামলা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।