বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ইংরেজিতে যাকে চেক বলা হয়, এ শব্দটি ইউরোপীয়দের মুসলমানরাই শিক্ষা দিয়েছেন। মূলত এটি আরবি ‘সাক’ শব্দ থেকে নেয়া। মূল বানান সোয়াদ কাফ। সাক থেকেই চেক। সাকের বহুবচন সুকুক। কোনো সম্পদ বা অর্থ প্রাপ্তি কিংবা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে হস্তান্তরযোগ্য মালিকানার সিলমোহরকৃত প্রমাণপত্রকে সুকুক বলা হয়। বর্তমান যুগে কোনো বড় উদ্যোগ সম্পদ পুঁজি বা বিনিয়োগের অংশ নেওয়া-দেওয়ার ক্ষেত্রে যে বন্ড প্রচলিত আছে তার একটি হালাল ও অপেক্ষাকৃত নিরাপদ পদ্ধতির নাম সুকুক। বন্ড শব্দটিও আরব মুসলিম ব্যবসায়ীদের প্রবর্তিত। মূল আরবি ‘বানদুন’। অর্থ নীতি, দফা, ভিত্তি ইত্যাদি। বহুবচন ‘বুনুদ’। এ থেকেই বুনিয়াদ। বানদুনকে ব্যবহারে ‘বানদ’ বলে। ইংরেজিতে বন্ড। ব্যবসাবাণিজ্যে আধুনিক ধ্যাণ-ধারণার প্রবক্তা হচ্ছে ইসলাম। ইসলামের পরিভাষায় ক্রয়-বিক্রয়ের পণ্যকে বলা হয়, সালআ। সরল ব্যবহারে সাল। ইংরেজিতে বিক্রয়কে বলে সেল। এটি সাল থেকে নেওয়া। যেমন সাক থেকে চেক। বানদ থেকে বন্ড। আরবিতে কেনা-বেচাকে বলে বাই। ইংরেজিতে বাই কাকে বলে। বায়িং হাউজ, বায়ার, বাই ইত্যাদি সবই কোরআনিক শব্দ বাই থেকে নেয়া।
পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ২৭৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আহাল্লাল্লহুল বাইআ ওয়া হাররমার রিবা’ অর্থাৎ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন। নবী করিম (সা.) বলেন, আমার উম্মতের রিজিকের ১০ ভাগের ৯ ভাগ ব্যবসাবাণিজ্যের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা দান করেছেন। আর এক দশমাংশ অন্য সব পেশায়।
মুসলমানরা ব্যবসা-বাণিজ্যের উসিলায় প্রাথমিক সময়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। নিজের ওপর আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল নির্দেশিত দায়িত্ব হিসেবে তারা দীনের দাওয়াত প্রচার করেন। তাদের মৌখিক দাওয়াতের চেয়ে আচার-আচরণ, উত্তম চরিত্র, নৈতিকতা, অতুলনীয় মানবিকতা ও স্বচ্ছ লেনদেনের কারণেই বেশি মানুষ ইসলামে প্রবেশ করে। হালাল উপার্জন করা মূল ফরজ আমলের পর মুসলমানের জন্য দ্বিতীয় ফরজ। (আল হাদিস)।
মুসলমানের কর্তব্য সুদবিহীন ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজে বের করা। সুদ, প্রতারণা, শংসয়যুক্ত ও শোষণমূলক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকা। কাউকে ধোঁকা না দেয়া এবং নিজেও ধোঁকা না খাওয়া। কেননা, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল মু’মিনু লা ইয়াখদাউ ওয়া লা ইউখদাউ’। (আল হাদিস)। মানে ঈমানদার ধোঁকা দেয় না আর ধোঁকা খায়ও না। অতএব, সুদ ও ধোঁকা থেকে বাঁচার জন্য তাদের নিজ উদ্যোগে হালাল ব্যবসা করা উচিত। নিজে সক্ষম না হলে বা অন্য ব্যস্ততার জন্য ব্যবসা করতে না পারলে আইনগত ঝুঁকিমুক্ত এবং সর্বাপেক্ষা মাসআলাসম্মত বিনিয়োগে অংশগ্রহণ করা সমীচীন। এ জন্য বর্তমান বিশ্বের সর্বোচ্চ ফিকাহবিদ ও ইসলামী অর্থনীতি বিশারদগণের অন্যতম আল্লামা মুফতি তকি উসমানী বিশ্বের সব দেশে সুদভিত্তিক অর্থ-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও ব্যাংক ব্যবস্থার বদলে মুসলমানদের জন্য হালাল অর্থ ব্যবস্থা প্রবর্তনের ধারণা ও পদ্ধতি প্রচার করছেন। তার মতো আল্লাহওয়ালা ও সচেতন মুরব্বি আগে-পরে ইসলামী অর্থনীতির অন্যান্য দিকপালগণ শরিয়াসম্মত ব্যবসা ও বিনিয়োগের পদ্ধতি আধুনিক পৃথিবীকে শিক্ষাদান করে আসছেন। যে জন্য আজ মুসলিম বিশ্ব এমনকি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বহু অর্থ, অর্থায়ন, বিনিয়োগ, ব্যাংক, বীমা ও পুঁজি সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান শরীয়ত অনুসরণের পথে অগ্রসর হচ্ছে।
সুদের তুলনায় ব্যবসাকে উত্তম ও শোষণমুক্ত বিশ্বাস করে বহু অমুসলিমও বর্তমানে ইসলামী অর্থব্যবস্থাকে গ্রহণ করছে। মুসলমানদের মধ্যে পশ্চিমাদের স্টাইলে অর্থনীতি চলতে দেওয়া কিংবা যেমন আছে তেমনই চলতে থাকুক, এ ধরনের গা-ছাড়া ভাব বা জড়তা মেনে নেওয়া ঠিক হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।