বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মুসলিম বিশ্বের প্রধান শত্রু কি বা কে? এ প্রশ্নের জবাব দুটি বিষয়- ‘দুর্নীতি ও যৌন অপরাধ বলে মনে করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এ কথা বলে তিনি প্রধান শত্রু মুসলিম বিশ্বেই সীমাবদ্ধ করেছেন বলে মনে হয়। এ দু’টি দোষে শুধু মুসলিম বিশ্বই দূষিত নয়, বিশ্বের সব দেশই কমবেশি দূষিত। পাপাচারের এ দুটি দিক মানবচরিত্র হননকারী ও নৈতিকতা বিধ্বংসী। সর্বত্র এমন সব পাপাচার রয়েছে, যেগুলো একেক দেশে একেক প্রভাব-প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন ঘটায়। এসব পাপাচার বা অপরাধপ্রবণতা স্থানীয়-আঞ্চলিক কিংবা জাতীয়ভাবে রোধ করা যায়। মনে হয়, বিষয়টি আলোচনা-পর্যালোচনার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এরূপ বক্তব্য পেশ করেছেন। তিনি যে দুটি প্রধান শত্রুর নাম উল্লেখ করেছেন, সে দুটি তার দেশে প্রধান হতে পারে এবং তা প্রতিহত করাও তার সরকারের পক্ষে সম্ভব হতে পারে। অন্য মুসলিম দেশও এ শত্রুদ্বয়কে একইভাবে মোকাবিলা করতে পারে। এক্ষেত্রে কোরআন ও সুন্নাহভিত্তিক পদক্ষেপ সফলতাকে সহজ করে দিতে পারে।
এ কথা স্বীকৃত সত্য যে, কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে সততার অভাব ও মিথ্যাচারের প্রভাব দেখা দিলে তার কুফল দেখা দেওয়া অনিবার্য হয়ে পড়ে এবং তাদের তার খেসারতও বহন করতে হয়। তাই ইসলাম ঘোষণা করেছে, ‘আস্সিদকু ইউন্জি ওয়াল কিজবু ইয়ুহ্লিকু’ অর্থাৎ সত্য-সততা মানুষকে মুক্তি দেয় এবং অসত্য-মিথ্যাচার ধ্বংসের দিকে ধাবিত করে আর মিথ্যাচারের রয়েছে হাজারো দিক ও শাখা-প্রশাখা। মিথ্যাচারের অনুসারী হয়ে যতসব অধর্মের কাজ করা হয়, মুসলমান হলে ঈমান পর্যন্ত হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা থাকে। তাই সত্যের সাধকরা কখনো মিথ্যা, অন্যায়ের আশ্রয় নিতে পারেন না। একটি মিথ্যাকে স্বীকার না করে তা ঢাকার চেষ্টা করা হলে অসংখ্য মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। ঘুষ, দুর্নীতি, মিথ্যাচারই অংশ বিশেষ। সুতরাং সততা সৃষ্টি প্রধান নৈতিক গুণ।
ইন্টারনেটের অশ্লীলতা এবং পর্নোগ্রাফিতে ডুবে যাওয়া মুসলিম তারুণ্যকে বাঁচানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তিনি সেদেশের ইসলামিক বিশেষজ্ঞদের উদ্দেশ্যে এই অভিযোগও ছুড়ে মেরেছেন যে, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে যখন আপনাদের নেতৃবৃন্দ সময়ের সাথে সাথে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়, তারা দুর্নীতিকে গ্রহণযোগ্য করে তোলেন।’ ‘আপনাদের নেতৃবৃন্দ’ বলতে যাদেরকে বুঝানো হয়েছে তারা নিশ্চয়ই সেই সংগঠন কর্র্তৃপক্ষ, যাদের দাওয়াতক্রমে ইমরান খান আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগদান করে উল্লেখিত মন্তব্য ব্যক্ত করেছেন। প্রকাশিত খবরে সংগঠনের নাম ‘ন্যাশনাল রাহমাতুল লিল আলামিন অথোরিটি (এনআরএএ) বলা হয়েছে। খবরে কোনো ব্যক্তি বা আলেম বিশেষের নাম বলা হয়নি। অতএব, ইমরান খানের বক্তব্যের আওতায় আলেম সমাজকে আনার প্রয়োজন নেই।
ন্যাশনাল রহমাতুল লিল আলামিন অথোরিটি (এনআরএএ) আয়োজিত সংলাপের দ্বিতীয় ‘রিয়াসাতে মদিনা : ইসলাম, সমাজ ও নৈতিক পুনর্জ্জীবন অনুষ্ঠানে’ ইমরান খান বলেন, সমাজে দুই ধরনের অপরাধ রয়েছে। একটি দুর্নীতি এবং অন্যটি পর্নোগ্রাফিক সামগ্রীতে ডুবে যাওয়া। এর থেকে মুসলিম তারুণ্যকে বাঁচানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন ইমরান খান। তার পর্যবেক্ষণে কথাটি অনস্বীকার্য হলেও প্রত্যেক দেশেরই নিজস্ব প্রধান শত্রু রয়েছে। তিনি সমাজ ও নৈতিকদিক থেকে তার মূল্যায়ন ব্যক্ত করেছেন। তার ভাষায় : ‘আমাদের সমাজে যৌন অপরাধ তীব্রভাবে বেড়েছে- যেমন ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতন এবং এর মাত্র এক-শতাংশ নথিভুক্ত করা হয়েছে।’ তিনি বাকি ৯৯ শতাংশ সম্পর্কে বলেন, আমি বিশ্বাস করি বাকি ৯৯ শতাংশের সাথে সমাজকে লড়াই করতে হবে।
সংলাপ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ইসলামি বিশেষজ্ঞরা ইমরান খানের সাথে একমত হয়েছেন। তরুণদের শেখানো উচিত কীভাবে আধুনিক জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। তারা আধুনিকতার নৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় মুসলিম দেশগুলোর কিছু পরামর্শ দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জীবন ও সুন্নাহ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করার মাধ্যমে মুসলিম তরুণদের আধুনিক যুগের চ্যালঞ্জেগুলো মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় গুণাবলীতে দীক্ষিত করা যেতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।