বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
যারা অসৎ সঙ্গীর পাল্লায় পড়ে আল্লাহ তাআলার বিধান ভুলে যায়। আল্লাহর হুকুম মানতে অবহেলা করে। বন্ধুর মন রক্ষার্থে আল্লাহ যা করতে আদেশ করেছেন, তা করে না। যা করতে নিষেধ করেছেন, তা-ই করে। আখেরাতে তারাই এদের মনস্তাপ ও সর্বনাশের কারণ হবে। সেদিন কোনো বন্ধুত্ব থাকবে না। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন : যেদিন জালেম ব্যক্তি (মনস্তাপে) নিজের হাত কামড়াবে এবং বলবে, হায়! আমি যদি রাসূলের সাথে পথ ধরতাম! হায় আমার দুর্ভোগ! আমি যদি অমুক ব্যক্তিকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! আমার কাছে তো উপদেশ এসে গিয়েছিল, কিন্তু সে (ওই বন্ধু) আমাকে তা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। আর শয়তান তো (এমনই চরিত্রের; সময়কালে সে) মানুষকে অসহায় অবস্থায় ফেলে চলে যায়। (সূরা ফুরকান : ২৭-২৯)।
বন্ধুদেরকে দোষারোপ করার পাশাপাশি পৃথিবীতে যারা বিপথগামীতায় তাদেরকে নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের প্রতি তারা ক্ষোভে ফেটে পড়বে। বলবে : ‘আল্লাহ! আমরা আমাদের নেতাদের অনুসরণ করেছিলাম, তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে। আল্লাহ! যারা আমাদেরকে বিপথগামী করেছে, আমাদেরকে আজ এমন শাস্তির সম্মুখীন করেছে, তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদের প্রতি লানত করুন, মহালানত। (সূরা আহযাব : ৬৭-৬৮)।
অনুসৃতদেরকে তারা নিজেরাও শাস্তি দিতে চাইবে। বলবে : ‘আল্লাহ! জীন ও মানুষের মধ্যে যারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে, তাদেরকে দেখিয়ে দেন, আমরা তাদেরকে পায়ের নিচে পিষে লাঞ্ছিত করব।’ (সূরা হা-মীম সাজদা : ২৯)। সেদিন তাদের পারস্পরিক বন্ধুত্ব এবং সদ্ভাব শেষ হয়ে যাবে। নিজেদের সর্বনাশের কারণে তারা পরস্পরের কঠোরতম শাস্তির আবেদন করবে।
রাসূলগণ যখন তাদেরকে আল্লাহর একত্ববাদের দিকে দাওয়াত দিতেন তখন তারা বলত, ‘এসব পাগলের প্রলাপ, কাল্পনিক কথা।’ অথচ তাদেরই মাঝে বেড়ে ওঠা রাসূলের নিষ্কলুষতা তারা একবাক্যে স্বীকার করত। কিন্তু কবর, আখেরাত, জান্নাত, জাহান্নাম এসব যেন তাদের বিশ্বাসই হতে চায় না। নিজেদের অসম্পূর্ণ ও ভ্রান্ত যুক্তিকে তাদের যুক্তিপূর্ণ কথা মনে হয় আর আসল যুক্তির কথাকে মনে করে রূপকথা। কিন্তু সেদিন বুঝতে পারবে, রাসূলের সঙ্গ ত্যাগ করে কী দুর্ভাগ্য টেনে এনেছে।
প্রথমে যদিও তারা নিজেদের কর্মকাণ্ড অস্বীকার করে বলবে, আমরা শিরক করতাম না। কারণ একে তো তারা নিজেরাও বাঁচার বাহানা খুঁজবে। উপরন্তু তারা যাদের উপাসনা করত, তারাও অন্তর্হিত হয়ে যাবে। তারপর যখন আল্লাহ বলবেন, ‘দেখো! কীভাবে নিজেদের ব্যাপারে মিথ্যা বলছে।’ তখন নিজ মুখে অপরাধ স্বীকার করবে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তারা বলবে : হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ওপর আমাদের দুর্ভাগ্য ছেয়ে গিয়েছিল এবং আমরা ছিলাম বিপথগামী সম্প্রদায়। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এখান থেকে উদ্ধার করুন। অতঃপর পুনরায় যদি আমরা সেই কাজই করি, তবে অবশ্যই আমরা জালেম হব। (সূরা মুমিনূন : ১০৬-১০৭)।
সেদিন তাদের বুঝে আসবে, পার্থিব জীবনে হঠকারিতা ও রাসূলের অবাধ্যতা করে তারা কেমন জুলুম করেছে, আর সেদিন তারা একেবারে ভালো মানুষ হয়ে যেতে চাইবে। ইরশাদ হয়েছে : তারা তাতে আর্তনাদ করে বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে মুক্তি দান করুন; আমরা আগে যে কাজ করতাম তা ছেড়ে ভালো কাজ করব। (সূরা ফাতির : ৩৭)।
এভাবে তারা আরেকবার পৃথিবীতে ফিরে আসার সুযোগ চাইবে। বলবে, আল্লাহ! এবার আমাদের বুঝে এসেছে, এখন আর আমরা আগের মতো ভুল করব না। আপনার সকল আদেশ নিষেধ মেনে চলব। এবার আমরা সত্যিকার মুমিন হয়ে যাব। আমাদেরকে শুধু আরেকবার ফিরে যাওয়ার সুযোগ দিন।
কিন্তু আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের পর আর দ্বিতীয় কোনো সুযোগ দেবেন না। এজন্যই ইহজীবনে বারবার তিনি সতর্ক করছেন এবং মৃত্যুর পর কী ঘটবে তা আগেই বলে দিয়েছেন। সেদিন তিনি তাদের কোনো কথাই শুনবেন না। যখন আক্ষেপ করে, অন্যকে দোষারোপ করে, আরেকটা সুযোগের আবেদন করে বা অন্য কোনোভাবেই পরিণতি এড়াতে পারবে না। তখন বলতে থাকবে : আমরা যদি শুনতাম এবং বুদ্ধিকে কাজে লাগাতাম, তবে (আজ) আমরা জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম না। (সূরা মুল্ক : ১০)। আরও বলবে : হায়! আমি যদি আমার এই জীবনের জন্য অগ্রিম কিছু পাঠাতাম! (সূরা ফাজর : ২৪)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।