Inqilab Logo

রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাজে আড্ডা প্রতিরোধে রাতের বেলা বাড়তি কোচিং

সৌর বিদ্যুতের আলোয় পাঠদান

প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে

দেশে জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি, বাজে আড্ডা, নেশা থেকে দূরে রাখতে ও ভালো ফলাফলের জন্য নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের আব্দুল হক ভূইয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উদ্যেগে রাতের বেলায় সৌর বিদ্যুতের আলোয় শিক্ষার্থীদের বাড়তি কোচিং করানো হচ্ছে। এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাবক থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং ও খরচ বাঁচাতে উপজেলা প্রশাসনের দেয়া সৌর বিদ্যুতের আলোয় সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় বাড়তি পাঠদান। এ পাঠদান চলে সন্ধ্যা হতে রাত ১০টা পর্যন্ত। প্লে থেকে একাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ২ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী এ প্রতিষ্ঠানে পাঠদান করছে। এদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি গ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক কোচিং সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হতদরিদ্র ও মেধাবীদের বিনামূল্যে এ কোচিং চললেও ধনীদের সন্তানরা স্বেচ্ছায় অর্থ দিয়ে এ কোচিং পদ্ধতিতে যোগ দিয়েছেন ভালো ফলাফলের আশায়। রাতের বেলায় কোচিং করতে আসা এইচএসসির ছাত্র পিয়াল হাছান ফয়সাল জানায়, বাড়িতে গেলে মা বাবাকে ফাঁকি দিয়ে পাঠদানের কারচুপি করে অনেক শিক্ষার্থী। রাতের বেলায় কোচিং করাতে অনেক শিক্ষার্থী এখন ভালো ফলাফল করছে। আমিও রাতের কোচিং করে এসএসসিতে ভালো ফলাফল করেছিলাম। দরিদ্র শিক্ষার্থীর অভিভাবক আছমা বেগম বলেন, আমাদের বেসরকারি স্কুলে পড়ানোর খরচ নেই। তার উপর কোচিং বিষয়টা বাড়তি বোঝা মনে করতাম। বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই, স্কুলে সৌর বিদ্যুতের আলোতে আমার ছেলে লেখাপড়া করে। হারিন্দা এলাকার অভিভাবক মুসা মোল্লা বলেন, বাড়তি টাকা দিয়ে বাড়িতে প্রাইভেট, কোচিং পড়াতে যাদের অর্থে কুলায় না তারাই স্কুলে স্বেচ্ছায় কোচিং করে। আজেবাজে আড্ডা প্রতিরোধে অভিভাবকদের ডেকে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমরা এ পদ্ধতিতে স্বস্তি প্রকাশ করি। মধুখালী এলাকার অভিভাবক তাহছিনা নিশাত বলেন, টিভি ও ফেসবুকের ব্যস্ততায় এখন অনেক মা-বাবাই তাদের সন্তানদের দিকে খেয়াল কম রাখে। বাড়িতে পড়ায় বসতে চায় না। এছাড়া বাজে আড্ডা দেয়। এসব প্রতিরোধে স্কুলে বাড়তি ক্লাস নেয়া আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। স্কুল কর্মচারী গোলবক্স ভুইয়া বলেন, রাতের বেলায় স্কুলে বাড়তি ক্লাস করার পরে শিক্ষকদের একটি টিম মেয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পৌঁছে দেন। অনেক অভিভাবক শিক্ষার্থীর জন্য রাতের খাবার নিয়ে আসেন। আমরাও বাড়তি শ্রম দিয়ে প্রতিষ্ঠান ও এলাকার কথা চিন্তা করে সহযোগিতা করছি। জাঙ্গীর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন ভুইয়া বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোচিং করানো ভালো নয়। তবে আব্দুল হক ভুইয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে যে কোচিং হয় মূলত এটা কোচিংয়ের আওতায় পড়ে না। এটা প্রতিষ্ঠানের ভালো ফলাফলের জন্য বাড়তি নজরদারি মাত্র। এদিকে ভালো ফলাফল করার জন্য সম্প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকার আলাদাভাবে মূল্যায়ন করায় এ পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন বলে জানান প্রতিষ্ঠান পরিচালক মনিরুল হক ভূইয়া। এ সময় তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বাড়িতে শিক্ষার্থীরা পড়তে বসতে চায় না। সব সময় টিভি, ফেসবুকে সময় কাটায়। অভিভাবকদের সাথে আলোচনা করে নামেমাত্র ফি নিয়ে এ কোচিং কর্মসূচির আয়োজন করেছি। উদ্দেশ্য হলো পরীক্ষায় ভালো ফলাফল আদায় করা। এ সময় সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করায় উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান তিনি। ইউপি চেয়ারম্যান আবু হোসেন ভুইয়া রানু বলেন, দেশে জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি, বাজে আড্ডা, নেশা থেকে দূরে রাখতে ও ভালো ফলাফলের জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই এ পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা ইসলাম বলেন, সৌর বিদ্যুতের আলো কাজে লাগিয়ে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাতে লেখাপড়া করাচ্ছে শুনে ভালো লাগল। যেভাবে যুবকরা বিভিন্ন বাজে আড্ডায় ঝুঁকে যাচ্ছে তাতে এ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাজে আড্ডা প্রতিরোধে রাতের বেলা বাড়তি কোচিং
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ