বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আল্লাহ তাআলা আখেরাতে ইহজীবনের ভালো-মন্দ কাজের প্রতিদান দেবেন। যারা পার্থিব জীবনে আল্লাহ তাআলার বিধান মেনে জীবন কাটিয়েছে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে জান্নাতসহ আরো অনেক নিআমত দান করবেন। কোরআন কারীমের ভাষায় তারাই সফলকাম। জান্নাতে তারা নিআমত উপভোগ করতে করতে বলবে : ‘আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আমরা তা সত্য পেয়েছি।’ (সূরা আরাফ : ৪৪)।
অন্যদিকে যারা দুনিয়ায় আল্লাহ ও রাসূলের অবাধ্যতায় জীবন কাটিয়েছে, তারা সেদিন চরম ব্যর্থ হবে। সেদিন অনুতাপ করে তারা নিজেদেরকেই দোষারোপ করতে থাকবে। আর বলবে : ‘হায় আফসোস! যদি এমন না করতাম!’ আখেরাতে বিফল জাহান্নামীরা কীভাবে আফসোস করবে, তা বিশদভাবে আল্লাহ তাআলা কোরআন কারীমে বলে দিয়েছেন।
অপরাধীদের আমলনামা উপস্থিত করা হলে, তারা তা দেখে চমকে উঠবে এবং আফসোস করতে থাকবে। কোরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে : ‘আমলনামা’ সামনে রেখে দেয়া হবে। তখন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে, তাতে যা (লেখা) আছে, তার কারণে তারা আতঙ্কিত এবং তারা বলছে, হায়! আমাদের দুর্ভোগ! এটা কেমন কিতাব, যা আমাদের ছোট-বড় যত কর্ম আছে, সবই পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করে রেখেছে। তারা তাদের সমস্ত কৃতকর্ম সামনে উপস্থিত পাবে। তোমার প্রতিপালক কারো প্রতি কোনো জুলুম করবেন না। (সূরা কাহ্ফ : ৪৯)।
আমলনামা উপস্থিত করা হলে তারা দেখবে দুনিয়াতে ছোট-বড় যা কিছু করেছে, সব সেখানে লেখা রয়েছে। ইহজীবনে যে গুনাহকে তুচ্ছ ভেবে উদাসীন থেকেছে। আমলনামায় তা দেখে হতভম্ব হয়ে যাবে, হায় হায়! এ কী! কোনো কিছুই বাদ দেয়া হয়নি! আরো ইরশাদ হয়েছে : সেই ব্যক্তি, যার আমলনামা দেয়া হবে তার বাম হাতে; সে বলবে, আহা! আমাকে যদি আমলনামা দেয়াই না হতো! আর আমি জানতেই না পারতাম, আমার হিসাব কী? আহা! মৃত্যুতেই যদি আমার সব শেষ হয়ে যেত! আমার অর্থ-সম্পদ আমার কোনো কাজে আসল না! আমার সব ক্ষমতা লুপ্ত হয়ে গেল। (সূরা আলহাক্কাহ : ২৫-২৯)।
অপরাধীদের বাম হাতে আমলনামা দেয়া হবে, তারা আমলনামা গ্রহণ করতে চাইবে না। বলবে, হায়! যদি আমলনামা না দেয়া হতো! পৃথিবীতে যে মৃত্যু থেকে বাঁচতে সর্বস্ব ত্যাগ করতেও পিছপা হতো না, সেই মৃত্যুই তখন বড় কামনার বিষয় হবে। জাগতিক ধন-সম্পদ বিত্ত-বৈভব ও ক্ষমতা সেদিন কোনো কাজে আসবে না।
শয়তানের অনুসরণে যারা জীবন কাটায়। শয়তানের দোসর হয়ে নিজেও আল্লাহ-রাসূলকে ভুলে থাকে, মুমিনদেরকেও দ্বীনের পথে বাধা দান ও পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করে। কিয়ামতের দিন যখন তারা এর ভয়ঙ্কর পরিণতি দেখবে, তখন শয়তান থেকে যোজন যোজন দূরত্ব কামনা করবে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : পরিশেষে এরূপ ব্যক্তি যখন আমার কাছে আসবে তখন (সে তার সঙ্গী শয়তানকে) বলবে, আহা! আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব ও পশ্চিমের ব্যবধান থাকত। কেননা তুমি বড় মন্দ সঙ্গী ছিলে। (সূরা যুখরুফ : ৩৮)।
অথচ আল্লাহ তাআলা কোরআনে বহুবার সতর্ক করে দিয়েছেন, শয়তান কিয়ামত পর্যন্ত মানুষকে পথভ্রষ্ট করার অঙ্গীকার করেছে। শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। শয়তান দুনিয়াতে মানুষকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিপথগামী করে রাখছে। আখেরাতে সে বলবে, আমি তো তোমাদেরকে জোর করিনি, আমি শুধু ডেকেছিলাম, তোমরা সাড়া দিয়েছ। কাজেই আমাকে দোষ না দিয়ে নিজেদেরকেই দোষারোপ কর। বস্তুত শয়তানের তখন তাদেরকে সাহায্য করার কোনো উপায়ও থাকবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।