Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাত পোহালেই ভোট, মধ্যরাতেও প্রার্থী-সমর্থকদের আনাগোনা

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৮:৪৯ এএম

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সব ভোটকেন্দ্রে ইভিএমসহ নির্বাচনী মালামাল পৌঁছে গেছে। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইভিএমের কারিগরি দিক পর্যবেক্ষণ করেছেন। রাত পোহালেই সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরু হবে। চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।মধ্যরাত অবধি ভোটকেন্দ্রের আশপাশে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের আনাগোনা দেখা যায়। কেন্দ্রের আশপাশ পোস্টারশোভিত।

২নং ওয়ার্ডের আনন্দলোক হাইস্কুল কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারসহ কর্তব্যরত কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা ভোটের প্রস্তুতি গ্রহণপূর্বক কেউ কেউ ঘুমিয়ে পড়েছেন। আর বাইরে দেখা যায় কাউন্সিলরপ্রার্থী আমিনুল হক ভুইয়া রাজু (ঘুড়ি), তার এজেন্ট সমর্থক এবং আলহাজ্ব সোহরাব হোসেন (মিষ্টি কুমড়া) ও প্রকৌশলী শামসুল হকের (করাত) এজেন্ট-সমর্থকদের আনাগোনা। প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনের সামগ্রিক কাজ শেষ করে কেউবা এসেছে চা পান করতে। একজন ভোটার জানান, ইভিএমে ভোট কিভাবে দিতে হয়, সেটার একটা অভিজ্ঞতা হবে এবার। আর ভোট কেন্দ্রে এখন কি হচ্ছে দেখতে এসেছি আমি। হাজী শফিকুল ইসলাম (ঝুড়ি) ও বর্তমান কাউন্সিলর মো. ইকবাল হোসেনের (লাটিম)এজেন্ট-সমর্থকদের সাথে দেখা হয় মিজমিজি পশ্চিমপাড়া কেন্দ্রে।

ইসির একজন কর্মকর্তা বলেন, ভোটগ্রহণের আগে ডেমো ভোটগ্রহণ করে এজেন্টদের দেখানো হবে। আর ঠিক সকাল ৮টায় মূল ভোটগ্রহণ শুরু হবে। ওই কর্মকর্তা জানান, শনিবার দুপুর থেকে শুরু হয় নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানোর কাজ। বিতরণ চলে বিকাল পর্যন্ত। তিনটি পয়েন্ট থেকে বিতরণ করা হয় এসব সরঞ্জাম। প্রতিটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এসে নির্ধারিত পয়েন্ট থেকে বুঝে নেন সরঞ্জামাদি। তারপর পুলিশ প্রহরায় তা নিয়ে যাওয়া হয় নির্ধারিত কেন্দ্রে। মালামালসহ নির্বাচনী কর্মকর্তারা রাতে কেন্দ্রেই অবস্থান করেন। এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার বলেন, মোট ১৯২টি কেন্দ্রের সরঞ্জাম তিনটি স্থান থেকে পাঠানো হয়। নগরীর মরগ্যান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে দেওয়া হচ্ছে ১০ থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সরঞ্জাম। ১ থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সরঞ্জাম পাঠানো হয় সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার হাউস স্কুল থেকে। আর বন্দর থানার মালামাল বিতরণ হয় বন্দরের হাজী ইব্রাহিম আলম চান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রস্তুতি ভালো, পরিবেশও সন্তোষজনক আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তো নিয়োজিত আছেই। পাশাপাশি অতিরিক্ত হিসেবে বিজিবি চাওয়া হয়েছে। স্ট্রাইকিং ফোর্স, মোবাইল ফোর্স, টহল বাহিনী, সবই থাকবে। র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ, আনসার সবাই থাকবেন। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম নিয়ে যদি কোনোরকম ত্রুটি দেখা দেয় এজন্য পুরো সিটি করপোরেশনের ৪৮ জনের টেকিনিক্যাল পারসন নিয়ে মোবাইল টিম থাকবে। নির্বাচনে সহিংসতা রোধে ১৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পেনাল কোডের অধীনে তারা মামলা নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ পরিচালনা করতে পারবেন।

প্রস্তুত করা হয়েছে দুই হাজার ৯১২টি ইভিএম মেশিন। প্রতিটি কেন্দ্রে প্রয়োজনের তুলনায় দেড়গুণ ইভিএম রাখা হবে। শুক্রবার রাত ১২টা থেকে নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করতে কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ৩০ নভেম্বর ২০২১ নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে কমিশন। নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াত আইভী (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার (হাতি), খেলাফত মজলিসের এবিএম সিরাজুল মামুন (দেয়ালঘড়ি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মো. মাছুম বিল্লাহ (হাতপাখা), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসীম উদ্দিন (বটগাছ), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মো. রাশেদ ফেরদৌস (হাতঘড়ি) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম (ঘোড়া)।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ২৭টি ওয়ার্ডের ১৯২টি কেন্দ্রের এক হাজার ৩৩৩ ভোটকক্ষে পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন ও সংরক্ষিত নয়টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে রয়েছেন ৩৪ জন প্রার্থী। তবে নাসিক নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সেলিনা হায়াত আইভী ও তৈমূর আলম খন্দকার।নির্বাচনকে ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ নির্বাচনে ১৯২টি কেন্দ্রে ও কেন্দ্রের বাইরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচ হাজারের বেশি সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। প্রতি কেন্দ্রে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২৬ সদস্য। সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার জানান, নারায়ণগঞ্জে আলাদাভাবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র নেই, সবগুলো কেন্দ্রকেই বিশেষ বিবেচনায় রেখে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ১৯২টি ভোটকেন্দ্রের প্রতিটিতে একজন এসআইয়ের নেতৃত্বে থাকবেন পাঁচজন করে পুলিশ সদস্য। এছাড়াও আটজন পুরুষ ও চারজন নারী আনসার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।

তিনি বলেন, নাসিক নির্বাচনে পুলিশের ২৭টি ইউনিট স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। এছাড়াও পুলিশের মোবাইল টিম থাকবে ৬৪টি, প্রতি টিমে সদস্য থাকবেন পাঁচজন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১৪ প্লাটুন সদস্য থাকবে। আরও অতিরিক্ত ছয় প্লাটুনের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক চাহিদা পাঠিয়েছেন বলেও জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা। নাসিক নির্বাচনে র‌্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে তিনটি, চেকপোস্ট থাকবে ছয়টি, টহল টিম থাকবে সাতটি ও স্ট্যাটিক টিম থাকবে দুটি, জানান তিনি। কমিশন দিনের শুরুতে কতটা স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে পারে, এটাই আসলে দেখার বিষয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নাসিক নির্বাচন

২০ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ