বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কিছুদিন আগে একটি জাতীয় দৈনিকের শিরোনাম ছিল, ‘মদে ছাড় নিয়ে নানা আলোচনা।’ খবরে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্তরের বড় বড় কিছু কর্মকর্তা ও কোনো কোনো সংসদ সদস্য একটি বৈঠকে একত্রিত হয়েছেন। বৈঠকের আলোচ্য বিষয় ছিল, মদকে বৈধতা দেয়া। সেখানে তাঁদের বিভিন্নজন বিশেষজ্ঞের মতো বক্তব্য দিয়েছেন। বলেছেন, মাদকে কিছুটা বৈধতা দেয়া হলে যুব সমাজকে মাদক থেকে ফেরানো যাবে। কেউ কেউ বলেছেন, মাদকে বৈধতা দিলে সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব পাবে। বর্তমানে মদের ওপর মোটা অঙ্কের কর ধার্য করা আছে। তাই বিভিন্ন ক্লাবে যেসব মদ পরিবেশন করা হয় সেগুলো বৈধ পথে না এসে চোরাই পথে আসে। অতএব কর কমিয়ে দিলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে।
আমরা জানি না, উপরোক্ত বৈঠকটি সরকারের উচ্চ মহলের অবগতিতে হয়েছে, নাকি তারা নিজেরাই বসেছেন। কিন্তু সে বৈঠকে যেসব কথা আলোচনা হয়েছে তা বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত আতঙ্ক ও উদ্বেগের বিষয়। কার অজানা আছে যে, মদ ইসলামের কঠোরতম হারাম। ইসলামে নিকৃষ্টতম হারাম খাদ্য ও পানীয় এবং হারাম কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে মদ গ্রহণ করা। এদেশের প্রায় নব্বই ভাগ লোক ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। সুতরাং এমন একটি বস্তুকে বাংলাদেশে বৈধতা দেয়ার চিন্তা কীভাবে করা হয় তা-ই বোধগম্য হচ্ছে না!
পবিত্র কোরআনুল কারীমের সূরা মায়েদায় সুস্পষ্টভাবে মদের নিষেধাজ্ঞার কথা এসেছে। এটাকে বলা হয়েছে : ‘তথা শয়তানের নিকৃষ্ট অপবিত্র কাজ।’ ইরশাদ হয়েছে : হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমার বেদী ও জুয়ার তীর অপবিত্র, শয়তানী কাজ। সুতরাং এসব পরিহার করো, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করো। (সূরা মায়েদা : ৯০)।
বহু সহীহ হাদীসে মদ সেবন, বেচাকেনা, পরিবেশন ইত্যাদির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। শুধু তাই নয় সহীহ বুখারীর বর্ণনায় মদ সেবনের আধিক্যকে কিয়ামতের আলামত বলা হয়েছে। রাসূলে কারীম (সা.) মদের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ক আয়াত নাযিল হওয়ার পর মসজিদে নববীতে খুতবা দিয়ে তা গণমানুষকে জানিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তাদের ঘরে থাকা সকল মদ রাস্তায়-ড্রেনে ঢেলে দিয়েছেন। মদীনা মুনাওয়ারার ড্রেন-নালাগুলো মদের আধিক্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কেউ সে নির্দেশ মানতে দ্বিধা করেননি।
গণমাধ্যমে খবরে জানা গেছে, যারা মদের বৈধতা দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন তারা কিছু যুক্তি পেশ করছেন। তার মধ্যে একটি হলো, মদ ও মাদক এক নয়। মাদক থেকে মদকে বের করে দিতে হবে। তবেই যুব সমাজ মদের সুবিধা পেলে মাদক থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। তাদের আরেকটি যুক্তি হলো, কোনো বিয়ারে বা পানীয়তে অল্প পরিমাণে এ্যালকোহল থাকলে তাতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়! আমরা জানি না, এ ব্যক্তিত্বগণ কোনো মানসিক বিশেষজ্ঞ কি না? মাদক বিষয়ক তাদের গবেষণা বা পড়াশোনা আছে কি না? অল্প মদ খেলে বেশি মাদক থেকে দূরে সরে যাবে- একথার পেছনে বৈজ্ঞানিক কী যুক্তি আছে সেটিও অজানা, তবে তারা যে সূত্র বা যে কারণেই কথা বলুক না কেন, সেগুলোর জবাব প্রিয়নবী (সা.) দেড় হাজার বছর আগেই বলে গিয়েছেন।
সুনানে আবু দাউদে (হাদীস নং ৩৮৭৩) বর্ণিত একটি সহীহ হাদীসে এসেছে : রাসূলে কারীম (সা.)-কে মদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেন, তা সেবন করা যাবে না। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি একই উত্তর দেন। এরপর বলা হলো : হে আল্লাহর রাসূল, এটি তো ওষুধ? জবাবে রাহমাতুল্লিল আলামীন (সা.) বললেন : না বরং এটি রোগ।
আজকে যারা অল্প মদ খাইয়ে আরো জঘন্য মাদক থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে চান তাদের এ হাদীস বারবার পড়া উচিত। এখানে উল্লেখ করা ভালো যে, সে যুগে অ্যালকোহলযুক্ত মদই ছিল। এখনকার হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল ইত্যাদির অস্তিত্ব ছিল না।
অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : যে নেশাজাতীয় বস্তু অধিক পরিমাণে খেলে নেশা হয় তা সামান্য পরিমাণে সেবন করাও হারাম। (জামে তিরমিযী : ১৮৬৫)। আরেকটি হাদীসের ভাষ্য : মদ কম ও বেশি যে কোনো পরিমাণে সেবন করা হারাম। (সুনানে নাসায়ী : ৫৬৮৪)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।