Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মদ খাইয়ে মাদক বন্ধ হবে না-১

মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১৫ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

কিছুদিন আগে একটি জাতীয় দৈনিকের শিরোনাম ছিল, ‘মদে ছাড় নিয়ে নানা আলোচনা।’ খবরে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্তরের বড় বড় কিছু কর্মকর্তা ও কোনো কোনো সংসদ সদস্য একটি বৈঠকে একত্রিত হয়েছেন। বৈঠকের আলোচ্য বিষয় ছিল, মদকে বৈধতা দেয়া। সেখানে তাঁদের বিভিন্নজন বিশেষজ্ঞের মতো বক্তব্য দিয়েছেন। বলেছেন, মাদকে কিছুটা বৈধতা দেয়া হলে যুব সমাজকে মাদক থেকে ফেরানো যাবে। কেউ কেউ বলেছেন, মাদকে বৈধতা দিলে সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব পাবে। বর্তমানে মদের ওপর মোটা অঙ্কের কর ধার্য করা আছে। তাই বিভিন্ন ক্লাবে যেসব মদ পরিবেশন করা হয় সেগুলো বৈধ পথে না এসে চোরাই পথে আসে। অতএব কর কমিয়ে দিলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে।

আমরা জানি না, উপরোক্ত বৈঠকটি সরকারের উচ্চ মহলের অবগতিতে হয়েছে, নাকি তারা নিজেরাই বসেছেন। কিন্তু সে বৈঠকে যেসব কথা আলোচনা হয়েছে তা বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত আতঙ্ক ও উদ্বেগের বিষয়। কার অজানা আছে যে, মদ ইসলামের কঠোরতম হারাম। ইসলামে নিকৃষ্টতম হারাম খাদ্য ও পানীয় এবং হারাম কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে মদ গ্রহণ করা। এদেশের প্রায় নব্বই ভাগ লোক ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। সুতরাং এমন একটি বস্তুকে বাংলাদেশে বৈধতা দেয়ার চিন্তা কীভাবে করা হয় তা-ই বোধগম্য হচ্ছে না!
পবিত্র কোরআনুল কারীমের সূরা মায়েদায় সুস্পষ্টভাবে মদের নিষেধাজ্ঞার কথা এসেছে। এটাকে বলা হয়েছে : ‘তথা শয়তানের নিকৃষ্ট অপবিত্র কাজ।’ ইরশাদ হয়েছে : হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমার বেদী ও জুয়ার তীর অপবিত্র, শয়তানী কাজ। সুতরাং এসব পরিহার করো, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করো। (সূরা মায়েদা : ৯০)।

বহু সহীহ হাদীসে মদ সেবন, বেচাকেনা, পরিবেশন ইত্যাদির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। শুধু তাই নয় সহীহ বুখারীর বর্ণনায় মদ সেবনের আধিক্যকে কিয়ামতের আলামত বলা হয়েছে। রাসূলে কারীম (সা.) মদের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ক আয়াত নাযিল হওয়ার পর মসজিদে নববীতে খুতবা দিয়ে তা গণমানুষকে জানিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে মানুষ তাদের ঘরে থাকা সকল মদ রাস্তায়-ড্রেনে ঢেলে দিয়েছেন। মদীনা মুনাওয়ারার ড্রেন-নালাগুলো মদের আধিক্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কেউ সে নির্দেশ মানতে দ্বিধা করেননি।
গণমাধ্যমে খবরে জানা গেছে, যারা মদের বৈধতা দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন তারা কিছু যুক্তি পেশ করছেন। তার মধ্যে একটি হলো, মদ ও মাদক এক নয়। মাদক থেকে মদকে বের করে দিতে হবে। তবেই যুব সমাজ মদের সুবিধা পেলে মাদক থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। তাদের আরেকটি যুক্তি হলো, কোনো বিয়ারে বা পানীয়তে অল্প পরিমাণে এ্যালকোহল থাকলে তাতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়! আমরা জানি না, এ ব্যক্তিত্বগণ কোনো মানসিক বিশেষজ্ঞ কি না? মাদক বিষয়ক তাদের গবেষণা বা পড়াশোনা আছে কি না? অল্প মদ খেলে বেশি মাদক থেকে দূরে সরে যাবে- একথার পেছনে বৈজ্ঞানিক কী যুক্তি আছে সেটিও অজানা, তবে তারা যে সূত্র বা যে কারণেই কথা বলুক না কেন, সেগুলোর জবাব প্রিয়নবী (সা.) দেড় হাজার বছর আগেই বলে গিয়েছেন।

সুনানে আবু দাউদে (হাদীস নং ৩৮৭৩) বর্ণিত একটি সহীহ হাদীসে এসেছে : রাসূলে কারীম (সা.)-কে মদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেন, তা সেবন করা যাবে না। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি একই উত্তর দেন। এরপর বলা হলো : হে আল্লাহর রাসূল, এটি তো ওষুধ? জবাবে রাহমাতুল্লিল আলামীন (সা.) বললেন : না বরং এটি রোগ।

আজকে যারা অল্প মদ খাইয়ে আরো জঘন্য মাদক থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে চান তাদের এ হাদীস বারবার পড়া উচিত। এখানে উল্লেখ করা ভালো যে, সে যুগে অ্যালকোহলযুক্ত মদই ছিল। এখনকার হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল ইত্যাদির অস্তিত্ব ছিল না।
অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : যে নেশাজাতীয় বস্তু অধিক পরিমাণে খেলে নেশা হয় তা সামান্য পরিমাণে সেবন করাও হারাম। (জামে তিরমিযী : ১৮৬৫)। আরেকটি হাদীসের ভাষ্য : মদ কম ও বেশি যে কোনো পরিমাণে সেবন করা হারাম। (সুনানে নাসায়ী : ৫৬৮৪)।



 

Show all comments
  • মোহাম্মদ রমিজ ১৫ জানুয়ারি, ২০২২, ৬:৪৮ এএম says : 0
    মাদকের যে কত মারাত্মক ও ভয়ংকর মৃত্যু থাবা আছে তা আমাদের দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো থেকে সহজেই অনুমেয়। এর কারণ হলো আমাদের কাছেই মাদক, মুঠোয় অশ্লীলতা যা সবসময় সবার হাতে ইচ্ছা অনিচ্ছায় ভাইরাল হয়ে আসছে, কৌতূহল বাড়ছে, নৈতিক শিক্ষার অভাবে অভিভাবকের অগোচরে সেবন চর্চা হচ্ছে ও অকাল মৃত্যু ঘটছে।
    Total Reply(0) Reply
  • হুসাইন আহমেদ হেলাল ১৫ জানুয়ারি, ২০২২, ৬:৪৮ এএম says : 0
    মানুষের নৈতিকতা বোধ ভোতা হয়ে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এর ন্যক্কারজনক প্রভাব ছড়িয়ে গড়েছে। গণমাধ্যমে জানা চার্চের পুরোহিত, মাদরাসা-মন্দির-এতিমখানার পবিত্র কর্ণধাররাও এসব কালিমাযুক্ত কাজে জড়িয়ো পড়ছেন! মাদকের সাথে লোভনীয় কালো ব্যবসা জড়িত থাকায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিতদেরকেও নিয়ন্ত্রণ করা বেশ জটিল হয়ে পড়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • মামুন আহাম্মাদ ১৫ জানুয়ারি, ২০২২, ৬:৪৯ এএম says : 0
    চারদিকে নৈতিকতার অধঃপতন: ও ভয়ংকর নৈতিক স্খলন আমাদের চিরায়ত শক্ত ধর্মীয় মূল্যবোধকে আঘাত করছে। তাইতো, অনেকের মুখের কথা ও কাজের সঙ্গে বাস্তবতার অমিল। এথেকে মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • সেই ডায়েরী ১৫ জানুয়ারি, ২০২২, ৬:৫০ এএম says : 0
    মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশে কার্যক্রম থাকলেও চালকদের মধ্যে মাদকদ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের কোনো মাপকাঠি নেই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন