Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মানুষের কৃতকর্মের দরুণ বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে : খুৎবা পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৩:২৮ পিএম

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, “মানুষের কৃতকর্মের দরুণ স্থলে ও সাগরে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে তিনি তাদেরকে তাদের কোন কোন কাজে শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসেন”। বিশ্বে ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে তাওবা জারি রাখতে হবে। আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। নগরীর মসজিদগুলোর অধিকাংশ মুসল্লিদের মাক্স পড়ে জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতীব মুফতি মুহাম্মদ মুহিব্বল্লাহিল বাকী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, বিশ্বে করোনার নতুন রূপ ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। মানুষ যত ধরণের বিপর্যয়, মুসিবত, অসুস্থতার সম্মুখীন হয়ে থাকে তা তাদের কৃত কর্মের কারণে হয়ে থাকে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “মানুষের কৃতকর্মের দরুণ স্থলে ও সাগরে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে তিনি তাদেরকে তাদের কোন কোন কাজে শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসেন”। সূরা আর-রূম-৪১। মানুষ যদিও নিজের কৃত কর্মের কারণে এ বিপর্যয়, মুসিবত, অসুস্থতার শিকার হয়ে থাকে। তবে এই মুসিবত, অসুস্থতা বান্দার জন্য নিয়ামত না আযাব এটা নির্ভর করে বান্দার সবর ও তাওবার ওপর। বান্দা যদি এই রকম অসুস্থতা বা বিপর্যয়ের শিকার হওয়ার পর ধৈর্য ধারণ করে তাওবার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার দিকে ফিরে যায় তখন বান্দার এই অসুস্থতা ও বিপর্যয় হয় নিয়ামত। অন্যদিকে বান্দা যদি এরকম অবস্থায় ধৈর্য ধারণ না করে ও আল্লাহ তায়ালার দিকে ফিরে না যায় তখন বান্দার এ বিপর্যয় ও অসুস্থতা হয় বান্দার জন্য আযাব। হযরত মাহমুদ ইবনে লাবিদ রা. হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক (সা.) ইরশাদ করেন,“মহান আল্লাহ তায়ালা কোন সম্প্রদায়কে যখন ভালোবাসেন তখন তাদের পরীক্ষা করেন, যে ব্যক্তি ইহাতে ধৈর্য ধারণ করে তাহার জন্য ধৈর্য ধারণের সাওয়াব লিখা হয়। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করে না তার জন্য ধৈর্যহীনতার গুনাহ লিখা হয়”। ওমিক্রন রোগকে আমরা ধৈর্য ধারণ ও তাওবার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহে রূপান্তরিত করতে পারি। তবে এর সাথে সাথে স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলতে হবে। খতীব বলেন, যেহেতু রাসূলে পাক (সা.) ইরশাদ করেন, প্রত্যেক রোগেরই প্রতিষেধক রয়েছে। অন্য হাদিসে আছে“প্রত্যেক রোগেরই প্রতিষেধক রয়েছে, রোগ অনুযায়ী যখন প্রতিষেধকের ব্যবস্থা করা হয় তখন আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে সুস্থতা অর্জন হয়”। প্রতিষেধক বলতে শুধু খাওয়ার ঔষধ নয়। প্রতিষেধক বলতে রোগ থেকে নিরাময় লাভ করার জন্য যত ধরণের ঔষধ, সুপথ্য, সতর্কতা আছে সব গুলো প্রতিষেধকের অন্তর্ভূক্ত। অতএব রোগ থেকে বাঁচার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাও সুন্নাত। যদিও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পর বা প্রতিষেধক গ্রহণ করার পরও কেউ আক্রান্ত হতে পারে বা মৃত্যুর শিকার হতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরও কেউ কেউ অসুস্থতার শিকার হতে পারে। অতএব স্বাস্থ্যবিধি মেনে লাভ কি? এই অজুহাতে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করা যায়েজ হবে না। কারণ বান্দার দায়িত্ব রোগ থেকে বাঁচার জন্য স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা, আক্রান্ত হয়ে গেলে ধৈর্য ধারণ করে প্রতিষেধক গ্রহণ করা। অনুরূপ যারা সুস্থ থাকবে তারা আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশে দাড়ানো। রাসূলে পাক (সা.) ইরশাদ করেন, “কোন ব্যক্তি যখন রোগীর সেবা করেন তখন আকাশ থেকে একজন ফিরিস্তা ঘোষণা করেন,তুমি নিজেও পবিত্রতা অর্জন করেছ, তোমার চাল চলনও পবিত্র হয়েছে এবং তুমি জান্নাতে একটি প্রাসাদ অর্জন করেছ”। খতীব বলেন, এই করুন অবস্থায় প্রত্যেকের উচিৎ কৃতকর্মের জন্য তাওবা কারা। রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সাধ্যানুযায়ী আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশে দাড়ানো। আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদেরকে এ কাজগুলো করার তৌফক দান করেন। আমিন।

দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রেজাউল করিম আজ জুমার খুৎবার বয়ান বলেন, বর্তমান সময়ের একটি আলোচিত বিষয় কিছু মানুষ আধুনিক শিক্ষার দোহাই দিয়ে কোরআনে কারীম না বুঝে পড়ার বিষয়টি অবজ্ঞার চোখে দেখেন। অথচ কোরআনে কারীমে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা বলেন, ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট। (সূরা ইমরান আয়াত নাম্বার ১৬৪)। এই আয়াতে আমরা দেখতে পাই রাসূলের রিসালাতের অন্যতম একটি দায়িত্ব ছিল কোরআনে কারীমের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত শিক্ষা দেয়া। বুঝে হোক আর না বুঝে হোক। না বুঝে পড়লেও কোরআনের একেকটি হরফে দশটি করে নেকী হয়। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। অতএব যারা আধুনিক শিক্ষার নামে শুধুই কোরআনে কারীমের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত ও হেফজ করা অনর্থক মনে করেন তারা বিভ্রান্তির বেড়াজালে। আল্লাহ তায়ালা উম্মতকে সহি বুঝ দান করুন। আমিন। মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ খতীব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, দুনিয়াতে বহু অনিষ্টের কারণ হলো রাগ বা ক্রোধ। মানুষ রাগের বশবর্তী হয়ে অনেক নির্দয় ও গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়। রাগের ফলে অনেক সম্মানিত মানুষ লজ্জা ও অবজ্ঞার শিকার হয়। তাই কারো দ্বারা কোন ক্ষতি বা অন্যায়মূলক কাজ হয়ে গেলে রাগ না করে ক্ষমা ও ধৈর্য ধারণ করার কথা কোরআন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। কারণ রাগ নয় বরং ক্ষমায় রয়েছে মুমিনের সাফল্য। আল্লাহ তায়ালা মুমিন মুত্তাকি লোকদের প্রশংসা করে বলেন, ‘যখন তারা রাগান্বিত হয় তখন তারা ক্ষমা করে দেয়। (সূরা শুরা : আয়াত ৩৭)। অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মুমিনের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন বলেন, ‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্থায় ব্যয় করে এবং যারা রাগ সংবরণকারী আর মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ নেককারদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৪)। রাগের পরিবর্তে ক্ষমা করে দেয়াকে সফলতা বলার অন্যতম কারণ হলো, ‘স্বাভাবিক অবস্থায় কাউকে কোনো অন্যায় বা ভুলের জন্য ক্ষমা করে দেয়া সহজ ব্যাপার। কিন্তু রাগের সময় সামান্য বিষয়ে ক্ষমা করাও কঠিন। প্রিয়নবী সা.-এর উপদেশ হলো এ কঠিন মুহূর্তেও নিজেকে সংবরণ করে ক্ষমা করা। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি বীর পুরুষ নয়; যে অন্যকে ধরাশায়ী করে দেয়। বরং রাগের সময় যে ব্যক্তি নিজের রাগ সংবরণকারী, সেই ব্যক্তিই প্রকৃত বীর (পুরুষ)।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)।
খতীব আরও বলেন, নবীজী সা. বলেন, রাগ বা ক্রোধ শয়তানের তরফ থেকে আসে। শয়তান আগুনের তৈরি। আর আগুনকে পানি ঠান্ডা করে দেয়। যদি কারো ক্রোধ বা রাগ আসে তবে তার উচিত ওজু করে নেয়া।’ (বুখারি, মিশকাত)। নবীজী সা. আরও বলেন, ‘যদি দাঁড়ানো অবস্থায় কেউ রাগান্বিত হয় তবে সে যেন বসে যায়। এতেও যদি রাগ না কমে তবে সে যেন শুয়ে পড়ে।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি,)। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমার মানসিকতা পোষণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ