Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুঁজিবাজারে এখনও দুর্বলতা রয়েছে : বেক্সিমকোর সুকুকে বিনিয়োগকারিদের ব্যাপক আগ্রহ

বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ডের লেনদেনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির প্রথম দিনেই বিনিয়োগকারিদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানির (বেক্সিমকো) সুকুক। লেনদেনের দিক থেকে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শীর্ষ তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বেক্সিমকোর সুকুক দিয়ে গতকাল দেশের শেয়ারবাজারে প্রথম কোনো সুকুক’র লেনদেন শুরু হয়। লেনদেনের প্রথম দিন ৬ হাজার ৬ বারে সুকুকটির মোট ৩২ লাখ ৩২ হাজার ৭৭২টি ইউনিট লেনদেন হয়েছে। টাকার অঙ্কে এই পরিমান ৩৩ কোটি ৮৯ লাখ।

ডিএসইর শীর্ষ লেনদেনের তালিকায় আট নম্বরে স্থান হয়েছে সুকুকটির। সুকুকটির প্রতি ইউনিট অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা। লেনদেনের পুরো সময়জুড়ে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৯৯ টাকা ৫০ পয়সায় এসব ইউনিট লেনদেন হয়েছে। গতকাল ডিএসই মাল্টিপারপাস হলে বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ডের লেনদেনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। সেখানে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে সক্রিয় না হওয়ার কারণে পুঁজিবাজারে এখনও দুর্বলতা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।

সালমান এফ রহমান বলেন, একটি স্থিতিশীল মার্কেটে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অবদান থাকে সবচেয়ে বেশি। রিটেইল ইনভেস্টরদের অংশগ্রহণ থাকে কম। কিন্তু আমাদের এখানে উল্টো। এখানে রিটেইল ইনভেস্টরদের বিনিয়োগ বেশি। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কম। ফলে পুঁজিবাজার গুজবভিত্তিক হয়ে থাকে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের উচিত রিটেইল ইনভেস্টরদের পোর্টফোলিও ম্যানেজ করা। যারা নতুন বিনিয়োগ করতে আসে তাদের পোর্টফোলিও ম্যানেজ করলে পুঁজিবাজারে উত্থান-পতনের জটিলতা কম হবে। পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি করতে হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ছাড়াও বন্ড মার্কেট শক্তিশালী করা দরকার। বিশ্বের সবকটি স্টক মার্কেটে ইক্যুইটি মার্কেটের তুলনায় বন্ড মার্কেট শক্তিশালী। ইক্যুইটির তুলনায় বন্ড মার্কেট বড় অথবা সমান সমান। কিন্তু আমাদের এখানে উল্টো। এখন নতুন নতুন প্রোডাক্ট আসছে। পুঁজিবাজারে বৈচিত্র্য আছে। কিন্তু আমাদের মার্কেটে সেটা নেই।

সালমান এফ রহমান বলেন, সুকুকের যখন চিন্তা করা হচ্ছিল, তখন আমাদের ধারণা ছিল সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এতে ব্যাপক সাড়া দেবে। কিন্তু বাস্তবে পুঁজিবাজারে এ ধরনের বন্ড নতুন হওয়ায় তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা বলেন, পরে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও আগ্রহ দেখিয়েছে। যখন চিন্তা করা হচ্ছিল ব্যাংকের সুদের হার নয় ও ছয় করা হবে। এ খাতের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও আশঙ্কা ছিল, এটি ব্যবসার ক্ষেত্রে কতটা সহায়ক হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এটি বাস্তবায়ন হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে নয় ও ছয় সুদের হারেও ব্যাংক ভালো ব্যবসা করছে।

বন্ড ইস্যুর উদ্যোগের বিষয়ে তিনি জানান, শুধু বেক্সিমকো সুকুক নয়, এরই মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরশনের পক্ষ থেকে বন্ড ইস্যুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তিনটি আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দুটি বন্ড ইস্যুর বিষয়ে কার্যক্রম চলছে।

বেক্সিমকো লিমিটেডের টেক্সটাইল ইউনিটের কার্যক্রম বাড়ানো এবং বেক্সিমকোর দুটি সরকার অনুমোদিত সাবসিডিয়ারি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের (তিস্তা সোলার লিমিটেড এবং করতোয়া সোলার লিমিটেড) বাস্তবায়নের পাশাপাশি পরিবেশ উন্নয়ন এবং সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে গত বছরের জুনে বিএসইসি প্রতিষ্ঠানটির ৩ হাজার কোটি টাকার গ্রিন সুকুক অনুমোদন দেয়।

পাঁচ বছর মেয়াদি সিকিউরড কনভার্টেবল অথবা রিডেম্বল অ্যাসেট ব্যাকড এই সুকুক বিএসইসি থেকে অনুমোদন পাওয়া প্রথম গ্রিন সুকুক। ৩ হাজার কোটি টাকার এই গ্রিন সুকুকের ৭৫০ কোটি টাকা আইপিওতে উত্তোলনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। বাকি ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর বেক্সিমকো ৩ হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ডের মধ্যে পাবলিক অফারে ৭৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য গত বছরের ১৬ আগস্ট চাঁদা সংগ্রহ শুরু করে। যার জন্য প্রথম দফায় নির্ধারিত সর্বশেষ সময় ছিল গত বছরের ২৩ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত।

প্রথম দফায় বন্ডটির চাহিদার ৭৫০ কোটি টাকার বিপরীতে ৭১ জন বিনিয়োগকারী আবেদন করেন। এই বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আবেদন আসে ৫৫ কোটি ৬১ লাখ ৫৫ হাজার টাকার বা ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ।
চাহিদার মাত্র ৭ শতাংশের কিছু বেশি আবেদন পড়ায় সাবস্ক্রিপশনের বা আবেদনের সময় ১০ কার্যদিবস বাড়ায় বেক্সিমকো। যা ৬ সেপ্টেম্বর শেষ হয়। এ দফায়ও বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে খুব একটা সাড়া মেলে না। মাত্র একজন বিনিয়োগকারী ১০ লাখ টাকার আবেদন করেন। এর মাধ্যমে বন্ডটিতে মোট আবেদন পড়ে ৫৫ কোটি ৭১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। যা চাহিদার (৭৫০ কোটি টাকা) মাত্র ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

ডেবট সিকিউরিটিজ রুলসের ১২(২) এ ধারায় অনুযায়ী, পাবলিক অফারের যেকোনো সিকিউরিটিজে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ আবেদন জমা পড়তে হবে। এছাড়া আন্ডাররাইটারের (অবলেখক) ২০ শতাংশ আবেদন পড়লেও যদি ৫০ শতাংশের কম হয়, তাহলে ইস্যুটি বাতিল হবে।

আইনের এই বিষয়টি তুলে ধরে সাবস্ক্রিপশনের মেয়াদ আরও এক মাস বাড়িয়ে দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।
নতুন করে সময় পেয়ে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর সুকুকের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকার সংগ্রহ শেষ করে এর উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো লিমিটেড।

৩ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ২৬টি প্রতিষ্ঠান দিয়েছে ২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। বাকি টাকার মধ্যে ২ কোটি টাকা পাওয়া গেছে বর্তমান শেয়ারধারীদের কাছ থেকে। ১৩৫ কোটি টাকা সংগ্রহ হয়েছে আন্ডাররাইটার, ৪২৩ কোটি টাকা এসেছে পাবলিক সাবক্রিপশন থেকে এবং ৩৩৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা পাওয়া গেছে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে।

সুকুকের বিনিয়োগকারীরা চাইলে তাদের ইউনিটগুলো বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারে রূপান্তর করে নিতে পারবেন। প্রতি বছর সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হারে এটি করা যাবে। এজন্য নির্ধারিত রেকর্ড ডেটের আগের ২০ দিনে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারের দামের যে ভারিত গড় হবে, তার ২৫ শতাংশ কমে এ শেয়ার পাবেন সুকুকধারীরা।

অর্থাৎ উল্লিখিত সময়ে বেক্সিমকোর শেয়ারের গড় দাম ১০০ টাকা হলে রূপান্তর মূল্য হবে ৭৫ টাকা। তার মানে ১ হাজার টাকার সুকুকের বিপরীতে মিলবে ১৩ দশমিক ৩৩টি শেয়ার। কেউ প্রথম বছর রূপান্তর না করলেও পরবর্তী বছরে এ সুযোগ নিতে পারবেন। কেউ একেবারেই রূপান্তর না করলে, মেয়াদ শেষে নিয়ামানুযায়ী বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত পাবেন।

 

 

 



 

Show all comments
  • নোমান মাহমুদ ১৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১৩ এএম says : 0
    হালাল জিনিসে বরকত আছে। উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • সেই ডায়েরী ১৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১৩ এএম says : 0
    বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মাঝে সুকুক ব্যাপক সাড়া ফেলবে। শুভ কামনা রইলো।
    Total Reply(0) Reply
  • তৌহিদুজ জামান ১৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১৪ এএম says : 0
    সুকুক চালু একটি ভালো উদ্যাগ। তবে আমাদের দেশের আলেম-ওলামাদের সঙ্গে আলোচনা করে সুকুককে নিখুত করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • করিম উদ্দীন ১৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১৪ এএম says : 0
    সুদমুক্ত সমাজ গঠনে এ ধরণের বন্ড বাজারে আনায় বেক্সিমকোকে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • গোলাম মোস্তফা ১৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১৪ এএম says : 0
    আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন। হালালভাবে ব্যবসার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জন করতে পারি। তাই ৯০ ভাগ মুসলমাদের দেশে এই শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি বন্ড সুকুকে বিনিয়োগের সুবর্ণ সুযোগ মানুষ সাদরে গ্রহণ করবে
    Total Reply(0) Reply
  • Simul Akter ১৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১৪ এএম says : 0
    ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলামী অর্থনীতি সেই ইসলামী জীবনব্যবস্থার এক অপরিহার্য অংশ। ইসলামী অর্থব্যবস্থা মানব কল্যাণময়, বৈজ্ঞানিক এবং ভারসাম্যপূর্ণ অর্থব্যবস্থা। ইসলামী অর্থনীতি পুঁজিবাদী বা সমাজবাদী যে কোন অর্থব্যবস্থার তুলনায় প্রগতিশীল এবং মানবতার জন্য কল্যাণকর।
    Total Reply(0) Reply
  • Shariful Islam ১৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১৪ এএম says : 0
    মালয়েশিয়ার দৃষ্টান্ত ফলো করা উচিত। অধিক পরিমাণে সুকুক বন্ড বাজারে ছাড়া হউক। ইসলামিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেতেই থাকবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Nozmul Islam ১৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১৫ এএম says : 0
    হালাল পথে আয় কম হোক কিংবা বেশি হোক আমরা সেই পথটাই বেছে নেবে, কারণ আমরা মুসলমান
    Total Reply(0) Reply
  • হুসাইন আহমেদ হেলাল ১৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১৫ এএম says : 0
    মুসলমান হিসেবে আমরা চাই ইসলামি অর্থ নীতি ব্যবস্থা। সেটা এখনও সম্ভব না হলেও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ‘সুকুক’ বন্ড আমাদের সেই আশা অনেকটাই পুরণ করবে
    Total Reply(0) Reply
  • জাকের হোসেন জাফর ১৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১৫ এএম says : 0
    দেশের মানুষ এ ধরণের ইসলামী বণ্ডের জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষায় ছিলো।
    Total Reply(0) Reply
  • বিধান কবিরাজ ১৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১৫ এএম says : 0
    সুকুক বন্ড জনগণের মাঝে ভালো সাড়া ফেলবে আশা করি। দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখবে।
    Total Reply(0) Reply
  • বাহার বিন মুহিব ১৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১৬ এএম says : 0
    ব্যাংকের মুনাফা কমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ এখন আর ব্যাংকে টাকা রাখার জন্য আগ্রহী নয়। এমতাবস্থায় এহেন বন্ড মানুষের আশাভরসা হয়ে উঠবে।
    Total Reply(0) Reply
  • নিরব হেলাল ১৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১৭ এএম says : 0
    এদেশের মাদ্রাসা ও আলেম সমাজের মাঝে এ ধরণের বন্ডের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সালমান এফ রহমান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ