Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আমরা কি আল্লাহর বান্দা হতে পেরেছি

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক | প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:০৭ এএম, ১৩ জানুয়ারি, ২০২২

মানুষের জীবনে সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। বলা যেতে পারে, সময়ই জীবন। বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী (রাহ.) বলেছেন- ‘হে আদমের বেটা! তুমি তো কিছু দিবসের সমষ্টি। একটি দিন গত হওয়া মানে তোমার কিছু অংশ চলে যাওয়া।’ এভাবে একদিন একদিন করে আমাদের জীবনের দিনগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের কর্তব্য, এই আমোঘ বাস্তবতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া। দিন-রাতের বিবর্তন আমাদের এ বাস্তবতা সম্পর্কে সতর্ক করে এবং আমাদের কর্মমুখর হওয়ার পয়গাম শোনায়। যারা দিন-রাতের গমনাগমনের এ নীরব বাণী শ্রবণ করে সময়কে কাজে লাগাতে পারেন পরিণামে তারাই সাফল্য অর্জন করেন। কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াতে বিভিন্নভাবে এ বিষয়ে সচেতন করা হয়েছে।

কোরআন মাজিদ কি শুধু সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কেই সচেতন করে? না। কোরআন শুধু সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কেই সচেতন করে না, তা ব্যবহারের পদ্ধতি সম্পর্কেও স্পষ্ট পথনির্দেশ দান করে। যে নির্দেশনা অনুসরণ করে মানুষ নাজাত ও মুক্তির পরম গন্তব্যে উপনীত হতে পারে। হাদিস শরিফে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন : ‘প্রত্যেকেই প্রত্যুষে উপনীত হয়ে নিজ সত্তাকে বিক্রি করে। হয়তো আল্লাহর কাছে বিক্রি করে আল্লাহর বান্দা হয়ে দিনযাপন করে। এ ব্যক্তি নিজেকে মুক্ত করে। অথবা নফস ও শয়তানের কাছে বিক্রি করে তাদের বান্দা হয়ে দিনযাপন করে। এই ব্যক্তি নিজেকে ধ্বংস করে। (সহিহ মুসলিম : হাদিস ২২৩)।

মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে- সে কি আল্লাহর বান্দা হবে, না নফস ও শয়তানের বান্দা হবে। আল্লাহর বান্দা হওয়ার অর্থ, আল্লাহতায়ালার বিধিবিধান অনুসারে জীবনযাপন করা। সকাল থেকে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা থেকে সকাল- চব্বিশ ঘণ্টা যে নিজেে আল্লাহতায়ালার অনুগত রাখে, তার বিধান মতো চলে সেই সত্যিকারের আল্লাহর বান্দা। আল্লাহর কাছে তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ ও শান্তি। পক্ষান্তরে জীবনের দিবস-রজনীগুলোতে যে আল্লাহর আনুগত্য বর্জন করে প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, সে নফস ও শয়তানের বান্দা। নফস-শয়তান তাকে অশান্তি-অকল্যাণের পথে নিয়ে যাবে।

কারো মনে হতে পারে, যারা দ্বীন মোতাবেক চলে তাদের জীবনটা আবদ্ধ জীবন। নানা ধরনের বিধিনিষেধের বেড়াজালে তারা আবদ্ধ। পক্ষান্তরে বেদ্বীনি জীবন হচ্ছে মুক্ত-স্বাধীন জীবন। সেখানে এতসব বিধিনিষেধের বালাই নেই। কিন্তু এই চিন্তাটা গোড়া থেকেই ভুল। প্রথমত এই কারণে যে, যারা বেদ্বীনি জীবনযাপন করে তারা বাস্তবে মুক্ত-স্বাধীন নয়, বাস্তবে তারা নফস ও শয়তানের দাস। নফস-শয়তান তাদের অনাচার-উচ্ছৃঙ্খলার আদেশ করে। আর তারা সে আদেশ পালন করে নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করে। তাদের কর্তব্য ছিল এ আদেশ অমান্য করা। কিন্তু তারা তা না করে নফস ও শয়তানের ক্ষতিকর বশ্যতা স্বীকার করে নেয়। এই বশ্যতা স্বীকার করার পর কীভাবে তারা নিজেদের মুক্ত-স্বাধীন মনে করতে পারে?

দ্বিতীয়ত, যারা দ্বীনের বিধিনিষেধ মেনে চলে, নিঃসন্দেহে তারাও মান্যতা ও আনুগত্য অবলম্বন করে, কিন্তু সে আনুগত্য আল্লাহর, যিনি তাদের স্রষ্টা ও প্রতিপালক। এ আনুগত্য বান্দার নিজের জন্যই কল্যাণকর। এ হচ্ছে শৃঙ্খলা। আল্লাহতায়ালার বিধান পালনের মাধ্যমে মানুষের জীবন সংযত ও সুশৃঙ্খল হয়। ফলে তার দুনিয়ার জীবনও সুন্দর হয়, আখেরাতের জীবনও সুন্দর হয়। এ এক জায়গায় যে নিজেকে নত করে অন্য সব জায়গার নতজানুতা থেকে সে মুক্তি পেয়ে যায়। কবি সত্য বলেছেন : ‘যে একটি সেজদা তোমার কাছে অতি কঠিন, সেটিই তোমাকে মুক্তি দেয় হাজার সেজদা থেকে ।



 

Show all comments
  • Ibrahim Mia ১৩ জানুয়ারি, ২০২২, ৮:৫৪ এএম says : 0
    সে [শিশু ঈসা (আ.) জন্মের পরই] বলে উঠল, আমি আল্লাহর বান্দা, তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন ও নবী করেছেন। (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ৩০)
    Total Reply(0) Reply
  • মনির হোসেন মনির ১৩ জানুয়ারি, ২০২২, ৮:৫৬ এএম says : 0
    দুনিয়াতে যে যাকে যত বেশি স্মরণ করবে বা অনুসরণ করবে, সে তাকে তত বেশি ভালোবাসবে এটাই স্বাভাবিক। আর তা যদি হয় আল্লাহর জন্য তবে কেমন হবে?
    Total Reply(0) Reply
  • সত্য উন্মোচন ১৩ জানুয়ারি, ২০২২, ৮:৫৬ এএম says : 0
    হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, বান্দার যে আমলে আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশি খুশি হন, তাহলো- গোনাহের পরিমাণ যতবেশি হোক না কেন, তাওবাহ করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা।
    Total Reply(0) Reply
  • তরিকুল ১৩ জানুয়ারি, ২০২২, ৮:৫৬ এএম says : 0
    নিজেদের আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত করতে মুসলিম উম্মাহর কিসের ভয়? সুতরাং আর দেরি নয়, আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা হতে তারই কাছে খাঁটি তাওবা ও ইসতেগফার করা খুবই জরুরি।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ রমিজ ১৩ জানুয়ারি, ২০২২, ৮:৫৭ এএম says : 0
    তাওবাহ-ইসতেগফারের আমলেই আল্লাহর আলিশান দরবারে ক্ষমা প্রার্থনাকারী হিসেবে লিখিত হবে বান্দার নাম। আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হবে মুমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • জাকের হোসেন জাফর ১৩ জানুয়ারি, ২০২২, ৮:৫৭ এএম says : 0
    রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা হতে তার আলিশান দরবারে তাওবাহ ও ইসতেগফারের অনেক আবেদন বর্ণনা করেছেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন