বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলে কারীম (সা.)-কে প্রশ্ন করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ওই ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি কী বলেন, যে কোনো সম্প্রদায়কে ভালোবাসে, কিন্তু তাদের সাথে মিলিত হতে পারেনি (অর্থাৎ তাদের পর্যায়ের নয়)। রাসূলে কারীম (সা.) উত্তরে বললেন : (দুনিয়াতে) যে যাদের ভালোবাসে (আখেরাতে) সে তাদের সাথে থাকবে। (সহীহ বুখারী : ৬১৬৯)। আনাস ইবনে মালেক রা. বলেন, এক ব্যক্তি নবী কারীম (সা.)-কে প্রশ্ন করল, কিয়ামত কবে সংঘটিত হবে? তিনি বললেন, কিয়ামতের জন্য তুমি কী প্রস্তুতি নিয়েছ? লোকটি বলল, আমি এর জন্য তেমন কোনো প্রস্তুতি নিতে পারিনি; তবে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি।
নবী কারীম (সা.) বললেন : (ইহকালে) তুমি যাকে মহব্বত করবে (পরকালে) তুমি তার সঙ্গে থাকবে। আনাস (রা.) বলেন, নবীজীর এই কথা শুনে আমরা এত খুশি হয়েছি যে, দুনিয়ার অন্য কিছুতে এমন খুশি হইনি। আনাস (রা.) আরো বলেন, আমি নবী কারীম (সা.) এবং আবু বকর ও উমর (রা.)-কে মহব্বত করি। তাই আশা করি, জান্নাতে আমি তাঁদের সাথেই থাকব, যদিও তাদের মতো আমল করতে পারিনি। (সহীহ বুখারী : ৩৬৮৮)।
মহব্বতের দাবি কী? যে যাকে মহব্বত করে সে তার সবকিছু ভালোবাসে এবং সব বিষয়ে তার অনুসরণ-অনুকরণ করার চেষ্টা করে। প্রিয়জনের চিন্তা-চেতনার অনুসরণ করে। তার আচার-ব্যবহার, রীতি-নীতির অনুকরণ করে। সাহাবায়ে কেরাম নবী কারীম (সা.)-কে মহব্বত করতেন প্রাণের চেয়েও বেশি। তাই তাঁরা নবীজীকে পরিপূর্ণ অনুসরণ করতেন। তাঁর আনীত দ্বীন ও আদর্শের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুকরণ করতেন। এটাই মহব্বতের দাবি।
এ ছাড়া মহব্বতের দাবি অনর্থক আত্মতৃপ্তি বৈ কিছু নয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : (হে নবী! মানুষকে) বলে দাও, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবেসে থাক, তবে আমার অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আলে ইমরান : ৩১)।
আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, একদিন রাসূলে কারীম (সা.) আমাকে বললেন : হে বৎস! তুমি যদি এমন অবস্থায় সকাল ও সন্ধ্যা যাপন করতে পার যে, দিলে কারো প্রতি হিংসা নেই, তাহলে এমনই করো। এটা আমার সুন্নত। আর যে আমার সুন্নত যিন্দা করল সে আমাকে মহব্বত করল। আর যে আমাকে মহব্বত করল সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। (জামে তিরমিযী : ২৬৭৮)।
এক রাতে নবী কারীম (সা.) বলেছিলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ আজ যে দুআ করবে সে দুআই আল্লাহ তাআলা কবুল করবেন। পরদিন তাকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল, ওই রাতে তিনি ঈমান, জান্নাত ও জান্নাতে নবী কারীম (সা.) এর সাহচর্যে থাকার দুআ করেছিলেন। এটা শুধু তাঁর ওই রাতের দুআ নয়; বরং সবসময় তিনি এই দুআ করতেন।
তাঁর পুত্র আবু উবায়দা রাহ. বলেন, আব্বাজী একদিন বলেছেন : আমার একটা দুআ আছে, যা কখনো বাদ দিই না। এরপর তিনি এই দুআটি উল্লেখ করেছেন : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা ঈমানান লা ইয়ারতাদ্দু, ওয়া নায়ীমান লা ইয়ানফাদু, ওয়া মুরা ফাক্বাতা নাবিয়্যীনা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা ফি আ আ’লা জান্নাতিল খুলদি’।
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এমন ঈমান চাই, যার পর কুফরের দিকে প্রত্যাবর্তন হবে না। এমন নিআমত চাই, যা কখনো ফুরাবে না এবং আমার শেষ চাওয়া সুউচ্চ জান্নাতে আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সা.) সঙ্গলাভ। (মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসী : ৩৩৮)।
আসুন, জান্নাতে নবী কারীম (সা.) সঙ্গী হওয়ার আশায় নবী করিম (সা.)-কে মহব্বত করি, তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করি। পাশাপাশি এই দুআটিও জারি রাখি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।