মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে শুরু হওয়া জনগণের সহিংস বিক্ষোভ ও মন্ত্রিসভা পতনের পর কাজাখস্তানের সবচেয়ে বড় শহর আলমাতি এখন অনেকটা ভয়ঙ্কর কোনো সিনেমার দৃশ্যপটে পরিণত হয়েছে।
শুক্রবার ভোরে গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেলেও বাতাসে পোড়া যানবাহনের গন্ধ পাওয়া ভেসে বেড়িয়েছে পুরো শহরজুড়ে। সহিংসতার ভয়ে খুব কম মানুষই বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন।
শহরজুড়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল, এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ অবরোধ করে রেখেছে। ব্রিটিশ সংবাদসংস্থা বিবিসির সংবাদদাতা আবদুজালিল আব্দুরাসুলভ আলমাটি শহর ঘুরে এমন পরিস্থিতির কথাই জানিয়েছেন।
বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে তিনি লিখেছেন, "আমরা প্রধান চত্বরে সৈন্যদের কাছে গেলে তারা চিৎকার করে আমাদের চলে যেতে বলে এবং বাতাসে সতর্কীকরণ ফাঁকা গুলি চালায়।"
কয়েক বছর ধরে আলমাতিতে আসা-যাওয়া রয়েছে আব্দুরাসুলভের। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এটি একটি কোলাহলপূর্ণ ব্যস্ত শহর। কিন্তু সরকার বিরোধী বিক্ষোভে এই চেনা শহরের চেহারাই যেন বদলে গেছে।
দোকানপাট ও ব্যাংক লুটের ঘটনা ঘটেছে সাম্প্রতিক সহিংসতায়; এমনকি ভাঙচুর ও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। বেশিরভাগ ক্ষয়ক্ষতিই হয়েছে শহরের প্রধান চত্বরটির আশেপাশে, প্রথমে যেখানে বিক্ষোভকারীরা আন্দোলন শুরু করেছিল।
আশেপাশের মিডিয়া ভবনগুলোয় হামলা চালানোর পাশাপাশি মেয়রের কার্যালয়ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার শহরঘুরে প্রতিবাদের কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। শুধু একটি ছোট্ট দলকে ধ্বংস হওয়া ভবনগুলোর ছবি তুলতে দেখা গেছে। কিন্তু তখনও আব্দুরাসুলভ সম্ভবত স্টেনগানের গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলেন। শহরে পৌঁছানোর পর কালো ধোঁয়াকে প্রথমে মনে হতে পারে কুয়াশা। কিন্তু এই ধোঁয়া গ্রেনেড ও অন্যান্য বিস্ফোরকের হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
কাজাখস্তানে এ ধরনের বিক্ষোভ নজিরবিহীন। বিবিসির সঙ্গে কথা বলা বেশ কয়েকজন কাজাখ নাগরিক এ ব্যাপারে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই অবাক হয়েছেন, কীভাবে বিক্ষোভ এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো এবং হিংসাত্মক হয়ে উঠলো।
তাদের মধ্যে অনেকেই আবার রাশিয়া এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ থেকে বাহিনী আসতে দেখে আনন্দিত হয়েছেন; তারা আশা করছেন শীঘ্রই শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
একজন নারী শুরু থেকেই সরকারের আরও শক্ত হওয়া উচিত ছিল বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, "সরকার যদি শুরুতেই শক্তি প্রয়োগ করত, তাহলে এই অস্থিরতা তৈরি হতো না। হয়তো তারা নিন্দার ভয়ে চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু আপনি এখন দেখতে পাচ্ছেন, এই পদ্ধতিতেই অস্থিরতা কমেছে।"
তবে সহিংসতার কারণে তৈরি ক্ষোভের মধ্যেও বিক্ষোভকারীদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেন সাধারণ মানুষ। কারণ অনেক বিক্ষোভকারীই দেশের গ্রামীণ এলাকা থেকে এসেছেন, যেখানে বেতন কম এবং জীবনযাত্রা অনেক কঠিন।
২২ বছর বয়সী পেশায় একজন বাবুর্চি বলেন, "আমি বিক্ষোভকারীদের দাবি বুঝতে পারছি। আমাদের বেতন বাড়ছে না; এ কারণে জনসংখ্যার বেশিরভাগই কষ্ট করে জীবনযাপন করছে। তাই বলে এ ধরনের লুটপাট ও গুন্ডামি কখনই কাম্য নয়। এর ফলে সাধারণ মানুষ এখন ভোগান্তিতে পড়েছে। এটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।"
বড় বড় সুপারমার্কেটগুলো বন্ধ থাকায় আলমাতির বাসিন্দারা এখন খাদ্য সংকটের মুখোমুখি। যে দোকানগুলো খোলা রয়েছে তারা শুধু নগদ টাকার বিনিময়েই খাবার বিক্রি করছে; কিন্তু শহরের এমন পরিস্থিতে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরে ইন্টারনেট সংযোগ নেই এমনকি একটি ট্যাক্সি খুঁজে পাওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে।
ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং ফোন ঠিকঠাকভাবে কাজ না করায়, শহরের বাইরে কী ঘটছে তা বোঝাও কঠিন। এই সুযোগে নানান ধরনের গুজব ছাড়াচ্ছে পুরো শহরে।
এর আগে কাজাখস্তানে কখনোই এ ধরনের বিক্ষোভ বা প্রতিবাদ হতে দেখা যায়নি। অস্থিতিকর পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে আগেও, তবে তার বেশিরভাগই ছিল ছোট পরিসরে এবং স্থানীয় পর্যায়ে। সেসব অস্থিরতার কোনোটিতেই প্রধান বিমানবন্দরে হামলার ঘটনা ঘটেনি।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনায় এই বিক্ষোভের সূত্রপাত হলেও সরকারকে নিয়েও জনমনে ছিল ব্যাপক অসন্তোষ।
২০১৯ সালে কাজাখস্তানের প্রথম রাষ্ট্রপতি নুরসুলতান নজরবায়েভের পদত্যাগের পর, জনগণ আশা করেছিল নতুন নেতা কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ পরিবর্তন আনবেন। তবে জনগণের এই প্রত্যাশা ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে, সাবেক নেতার সম্মানে রাজধানী আস্তানার নাম পরিবর্তন করে 'নূর-সুলতান' রাখায়, অনেকেই ধরে নিয়েছেন পুরোনো অভিজাতরাই এখনও ক্ষমতায় রয়েছেন।
আপাতত দেশটির পরিস্থিতি শান্ত এবং কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। তবে এই বিক্ষোভ এখনকার মতো শেষ হলেও অসন্তোষ হয়তো থেকে যাবে। এই বিক্ষোভের সামান্য স্ফুলিঙ্গ থেকে গেলেও পরবর্তীতে তা হয়তো আবারও নতুন করে জ্বলে উঠবে। সূত্র : সূত্র: বিবিসি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।