Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশে ফিরে ফের সন্ত্রাসে লিপ্ত সেই ৭৫ মামলা-জিডির অভিযুক্ত কালা মনির

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৬:৩৭ পিএম

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাসহ আশপাশের এলাকার মূর্তিমান এক আতঙ্ক কালা মনির। স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এলাকায় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি সাধন, দলবলসহ বেআইনী জনসমাগমে হামলা, অপহরণ, চাঁদাবাজি, হুমকি ধামকি প্রদান ইত্যাদি কাজে লিপ্ত থাকায় ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরু হলে লাগেজ ভর্তি ডলার নিয়ে সপরিবারে রাতারাতি আমেরিকায় পালিয়ে যান মনির, পরে দেশে ফিরলে ধরা পড়ে র‌্যাবের হাতে। জামিন নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান।এখন আবার দেশে এসে শুরু করেছেন পুরনো কাজ।

তার বিরুদ্ধে জমি ও বাড়ি দখল, চাঁদাবাজি, ভাংচুর এবং ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগে ৭৫টি মামলা ও জিডি রয়েছে। অভিযুক্ত মনির বর্তমানে দেশে ফিরেছেন, শুরু হয়েছে তার প্রত্যক্ষ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। মোহাম্মদপুরের নবোদয় আবাসিক এলাকার ৯ নাম্বার রোডের ২নং বাড়ির বাসিন্দা ফজলুল করিব বাদলের অভিযোগ দেশে ফিরে ফের সন্ত্রাসী তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে মনির। সম্প্রতি মনিরের নির্দেশে তার সহযোগী সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ব্লক সি, ডি ও মেইন রোডে অবৈধ সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। ঢাকা উদ্যান বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা ফজলুল করিব বাদল বলেন, অবৈধ এসব সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মূল লক্ষ্য সাধারণ জনগণ, বাড়ি মালিক ও ব্যবসায়ীদের গতিবিধি নজরবন্দী করা। অবৈধ এ ক্যামেরাগুলো স্থাপনের ব্যাপারে প্রতিবাদ করতে গেলে আমাকে খুন-জখমেরসহ নানা রকম হয়রানির হুমকি দিয়েছে মনির বাহিনী। এ ব্যাপারে আদাবর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছি।

অন্য এক ভুক্তভুগী মোহাম্মদপুরের ১নং রোডের সি ব্লাকের একটি বাড়ির মালিক মোস্তফা নাজিম। ২০০৩ সালে জমিটি কেনার পর থেকে ১২ বছর দখলে ছিলেন, যেখানে চারটি দোকনও করেছিলেন তিনি। গতবছরের আগস্ট মাসে দোকান ভেঙ্গে বাড়ি উঠানোর কাজ শুরু করলেই সেখানে হানা দেয় মনির বাহিনী, অবৈধভাবে দখল করে নেয় তার জমি। মনিরের মা সাবিহা খুতনের তত্তাবাধনে রাতারাতি দোতলা বাড়িও উঠে যায়, তবে কোর্টের নির্দেশ থাকার পরেও নিজের জায়গার দখল নিতে বারবার ব্যর্থ ভুক্তভোগী নাজিম। মনির দেশে ফিরার পর তার বাড়ি ফিরিয়ে দিতে সম্মতি জানিয়েছে তাবে বিনিময়ে ৬০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। মনিরেরর হয়ে মোহাম্মদপুরে অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে তার সহযোগী শুটার হুমায়ন, তার সাথে যুক্ত হয়েছেন মনিরের মা সাবিহা খাতুনও। তার আরো একজন সহযোগীর নাম সিরাজুল ইসলাম। মনিরের হয়ে চাঁদাবাদীতে নেমে নাইট গার্ড থেকে রাতারাতি বহুতলা বাড়ির মালিক হয়ে উঠেছেন তিনি। মনিরের অত্যাচারে পুরো মোহাম্মদপুরবাসীর অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি।

মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক ও বেড়িবাঁধ সংলগ্ন ঢাকা উদ্যান, চন্দ্রিমা হাউজিং, তুরাগ হাউজিং, চাঁদ উদ্যান, একতা হাউজিং, শ্যামলী হাউজিং, রাজধানী হাউজিং, নবীনগর হাউজিং, গ্রিন সিটিসহ ১০টি হাউজিং প্রতিষ্ঠানের একাধিক প্লট দখলের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া নির্মাণসামগ্রী লুট করার অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় মনিরের বিরুদ্ধে অন্তত ১০টি মামলা ও শতাধিক জিডিও রয়েছে। তুরাগ নদের জমি দখল করে অন্তত ২০/৩০টি প্লট বিভিন্ন মানুষের কাছে বিক্রি করেছেন মনিরুজ্জামান মনির ওরফে কালা মনির। নিজেদের সুবিধার্থে এর আগে অভিযুক্ত মনির ঢাকা হাউজিং উদ্যান এলাকায় ডি ব্লকের ৩, ৪ ও ৫ নং সড়কে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিপুল সংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিজেদের সন্ত্রাসী কর্যক্রম চালাতে এলাকার বাসিন্দাদের উপর নজর রাখতেই বসানো হয়েছে এসব সিসি ক্যামেরা। এতে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছে সেখানে চলাচলকারী বাসিন্দারা।

এ ব্যপারে মোহাম্মদপুর থানায় অভিযোগও করা হয়েছে। ঢাকা উদ্যানের বাড়ির মালিকদের অভিযোগ ১৪শ বাড়িতে প্রতিমাসে ১০/১২ লাখ টাকা চাঁদা উত্তোলন করে মনির। এসব চাঁদার টাকা উত্তোলন করে মনিরের সহযোগী হুমায়ুনও সম্পদের পাহাড় গড়েছে। ভুক্তভুগী তরুণ ব্যবাসী ইয়ামিন জানায়, মিরপুর থেকে ফেরার পথে তাকে তুলে নিয়ে বেধরক মারধর করা হয়। মনিরের সহযোগী হুমায়নসহ নির্যাতনকারী সদস্যদের বুকের পাজঁরে লাথি আর এলোপাথারি রডের খোঁচায় রক্তাক্ত ইয়ামিন সেদিন কোনোমতে প্রাণ নিয়ে বেঁচে ফিরেন। আওয়ামী লীগ কিংবা সহযোগী কোনও সংগঠনের সাধারণ সদস্য পদও ছিল না মনিরুজ্জামান মনিরের। অভিযোগ আছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ক্ষমতাসীন দলে যোগ দেয় সে। কোনো এক জাদুতে আদাবর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদ বাগিয়ে নেয়। এরপরই এলাকায় দখল বাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে মনির বাহিনী। তার বিরুদ্ধে ট্রাক আটকে চাঁদা দাবি, জমি দখল, হত্যার হুমকিসহ ছয়টি মামলা রয়েছে, যা তদন্তাধীন। এর মধ্যে তদন্ত করে পুলিশ অন্তত পাঁচটি মামলায় চার্জশিট প্রদান করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ