হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
মুনশী আবদুল মাননান
জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭ দশমিক ১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এটা নতুন রেকর্ড। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএমএফ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সম্পর্কে যে ধারণা দিয়েছিল, এ হার তার চেয়ে অনেক বেশি। যতদূর জানা যায়, ২০০৬-২০০৭ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। এটাই ছিল এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ হার। গত ১০ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধারাবাহিকভাবেই বেড়েছে। এই সময়কালে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নিচে আসেনি। যে কোনো বিচারে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারে এই ধারাবাহিকতা সুরক্ষা করা এক বড় সাফল্য এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির পরিচয়বাহী।
জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বিনিয়োগ, উৎপাদন, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্যবিমোচন, জনগণের জীবনমানের উন্নতি প্রভৃতির ওতপ্রোত সম্পর্ক বিদ্যমান। বিনিয়োগ বাড়লে, উৎপাদন বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়লে, দারিদ্র্য হ্রাস পেলে এবং জনগণের জীবনমানে অগ্রগতি হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে তার প্রতিফলন অবধারিত। যেহেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে, সুতরাং ধরে নেয়া যায়, বর্ণিত ক্ষেত্রেগুলোতে সে মোতাবেক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। অন্যভাবে বলা যায়, বিনিয়োগ, উৎপাদন, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে সাফল্য আসার পরিপ্রেক্ষিতে জিডিপির হারে এই প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। প্রশ্ন হলো, আসলেই কি এসব ক্ষেত্রে বড় রকমের কোনো সাফল্য অর্জিত হয়েছে?
বিনিয়োগের প্রসঙ্গ ধরেই এ আলোচনা শুরু করা যেতে পারে। এ কথা কারো অজানা নেই, বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে বিনিয়োগে খরা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কি বিদেশি, কি দেশি কোনো বিনিয়োগই সেভাবে আসছে না। সরকার সর্বোতভাবে চেষ্টা করছে বিদেশি বিনিয়োগ আনার এবং দেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ দেখালেও তাদের আগ্রহের প্রতিফলন তেমন লক্ষণীয় নয়। আর দেশি বিনিয়োগকারীও বিনিয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। বিনিয়োগ বোর্ডে বিনিয়োগ নিবন্ধন ও বাস্তব বিনিয়োগের হিসাব নিলেই স্পষ্ট প্রতিভাত হবে, বিনিয়োগে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই। বস্তুতপক্ষে জাতীয় সম্পদ বা জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ভূমিকা প্রধান। বিনিয়োগ স্থবির থাকলে, অগ্রগতি না হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। বিনিয়োগের সঙ্গে উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। বিনিয়োগে বাড়লে শিল্পায়ন, উৎপাদন, রফতানি, কর্মসংস্থান সবই বাড়ে। ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা হয়, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। সব মিলে অর্থনীতিতে গতিবেগ সঞ্চারিত হয়। সব মহল থেকেই বলা হয়, বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অপার। কিন্তু বিনিয়োগ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে যেসব শর্ত রয়েছে তার প্রচ- অভাব রয়েছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, উন্নত আইনশৃঙ্খলা ও নাগরিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, আইনের শাসন বা সুশাসন তো আবশ্যকই, সেই সঙ্গে বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ, প্রয়োজনীয় উপকরণ ও সেবার নিশ্চয়তাও অপরিহার্য। বলাই বাহুল্য, এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা খুবই নাজুক।
সম্প্রতি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সংক্রান্ত বিশ্বব্যাংকের একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বের ১৯০ দেশের অবস্থান নিয়ে করা এই গবেষণা রিপোর্টে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬। দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের ৬টির অবস্থানই বাংলাদেশের ওপরে। নিচে আছে একমাত্র আফগানিস্তান। ১০টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে রিপোর্টটি প্রণীত। এই ১০টি সূচক হলো, ব্যবসা শুরু করা, নির্মাণকাজের অনুমতি পাওয়া, বিদ্যুৎ সংযোগ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ, ঋণ প্রাপ্তি, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, কর প্রদান, সীমান্ত বাণিজ্য, চুক্তি বাস্তবায়ন ও তহবিলের অভাব দূরীকরণ। এই সূচকগুলো পর্যালোচনায় আনলে দেখা যাবে, বাংলাদেশে বিনিয়োগ বা ব্যবসা শুরু করতে অনেক সময় লাগে। আলোচনা-পর্যালোচনা, সময় ক্ষেপণ, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য, জমির অভাব, দুর্নীতি ও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীর হয়রানির এক শেষ হতে হয়। ব্যবসা শুরু করতে বছরের পর বছর পার হয়ে যায়। স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ পাওয়াও এখানে একটা বড় সংকট। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিদ্যুৎ প্রাপ্যতার দিক দিয়ে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ১৯০টি দেশের মধ্যে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৭। গত বছরও এই সূচকে অবস্থান একই ছিল। ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অবস্থা সর্বনি¤েœ। দেখা গেছে, সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নেও বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। দক্ষিণ এশীয় অন্যান্য দেশের তুলনায়ও বাংলাদেশ পিছিয়ে। ব্যবসা সহজ করার জন্য এ বছর পাকিস্তান তিনটি সংস্কার কার্যক্রম শেষ করেছে। ভারত করেছে দুটি। আর দুই বছরে বাংলাদেশ করেছে একটি।
বাংলাদেশে গত দুই বছর রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল আছে। আইন-শৃঙ্খলা ও নাগরিক নিরাপত্তার যথেষ্ট অবনতি হলেও সরকারের দাবি, পরিস্থিতি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকার অভাবনীয় সাফল্যের দাবিদার। সরকারের বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য যেসব প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়, তাতে বরাবরই বলা হয়, বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সব রকমের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। প্রশ্ন ওঠে, এরপরও বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই শোচনীয় হাল কেন? বলা বাহুল্য, এর জবাব সরকার এবং অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরাই ভালো দিতে পারবেন।
জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি বাড়লে কর্মসংস্থানেও প্রবৃদ্ধি বাড়ার কথা। অথচ দেখা গেছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারে ধারাবাহিকতা রক্ষিত হলেও কিংবা বাড়লেও সেই তুলনায় কর্মসংস্থান বাড়েনি। এডিবি’র এমপ্লয়মেন্ট ডায়াগনস্টিক শীর্ষক ২০১৬ সালের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ১৯৯৯-২০০০ থেকে ২০০৫-৬ সময়কালে বাংলাদেশের জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। এই সময়ে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০০৫-৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি গড়ে ৬ দশমিক ১১ শতাংশ। এ সময়ে কর্মসংস্থানে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল গড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। এ সময়ে কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি না বেড়ে কমে দাঁড়ায় ২ দশমিক ২৯ শতাংশ। সর্বশেষ পরিসংখ্যানেও কর্মসংস্থান বাড়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায় না যদিও জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে।
জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়লেও কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধির হার না বাড়া একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। এ সম্পর্কে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী যা বলেছেন, তা কতদূর সত্য, অর্থনীতিবিদরা তা বিচার করবেন। তিনি বলেছেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটা পর্যায়ে কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি কমে যায় এবং বাংলাদেশ বর্তমানে সেই পর্যায় অতিক্রম করছে। তার মতে, শিল্পায়নের গতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আসবে এবং এ জন্য সরকারের শিল্পায়ন পরিকল্পনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বিনিয়োগ অচলাবস্থা চললে কীভাবে শিল্পায়নে গতি বৃদ্ধি হবে এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে তা আমাদের বোধের অগম্য। সরকারের শিল্পায়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কবে নাগাদ হবে, তাও আমাদের জানা নেই। উল্লেখ করা যেতে পারে, দেশে শিক্ষিত অশিক্ষিত মিলে বেকারের সংখ্যা কয়েক কোটি। প্রতিবছর অন্তত ২০ লাখ লোক শ্রমবাজারে প্রবেশ করলেও কর্মসংস্থান ৭-৮ লাখের বেশী হচ্ছে না। অন্যদিকে শ্রমক্ষেত্রে উন্নত যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও অন্যান্য কারণে প্রতিবছর বহু কর্মজীবী কর্ম হারাচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে বাংলাদেশের জিডিপির আকার বর্তমান ১৭ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। গত মে মাসে যখন প্রাক্কলন করা হয়, তখন জিডিপির আকার ছিল ১৭ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা। এতে দেখা যাচ্ছে, জিডিপি আগের চেয়ে তিন হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। অন্য এক হিসাবে দেখা গেছে, জাতীয় এই সম্পদের ৯০ শতাংশের মালিক ৫৫ লাখ লোক। বাকী ১০ শতাংশের মালিক ১৫ কোটি ৪৫ লাখ লোক। এতে সম্পদ বৈষম্য কতটা প্রকট ও উদ্বেগজনক, সেটা সহজেই অনুধাবন করা যায়। সম্পদ প্রবাহের একটা প্রবণতা এই যে, তা ক্রমান্বয়ে ধনীদের আওতায় চলে যায়। এতে ধনী আরও ধনী হয় এবং গরীব আরও গরীব হয়ে যায়। সম্পদ বণ্টনের সুস্পষ্ট নীতি-ব্যবস্থা না থাকলে সম্পদবৈষম্য অনিবার্যভাবেই বাড়ে। সুষম সম্পদ বণ্টনের কোনো ব্যবস্থা কার্যকর থাকলে জাতীয় সম্পদের ৯০ শতাংশ কিছু লোকের হাতে তা কুক্ষিগত হতে পারে না। বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্যের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। আমরা দেখতে পাই, আগের চেয়ে দারিদ্র্যের প্রকটতা কিছুটা কমেছে। কিন্তু এতে আত্মপ্রসাদ লাভ করার কোনো সুযোগ নেই। এখনো দেশে হতদরিদ্রের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করে আরও প্রায় চার কোটি। সব মিলে দরিদ্র বর্গভুক্ত লোকের সংখ্যা যে ব্যাপকতা বিশদভাবে ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। সম্পদের সুষম বণ্টনের অভাব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদী ভাঙন ইত্যাদি কারণে দরিদ্রজনের সংখ্যা আগামীতে আরও বাড়ার আশংকা রয়েছে।
একথা অনেকেই জোর দিয়ে বলেন, এখন আর বাংলাদেশে সে পরিস্থিতি নেই যে মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। কথাটা ঠিক। এখন আর আগের মতো মঙ্গা বা আকাল নেই। দুর্ভিক্ষের আশংকা নেই। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, মানুষের দারিদ্র্য নেই, খাদ্যের অভাব নেই। তাদের বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার কোনো সংকট নেই। দেশের বেশীর ভাগ মানুষের মানবিক মৌলিক অধিকার এখনও নিশ্চিত হয়নি। খাদ্য উৎপাদনে ধারাবাহিক সাফল্য অবশ্যই একটা বড় সাফল্য। খাদ্যে দেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এখন প্রতি বছর প্রায় এক কোটি টন খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়। তারপরও বাস্তবতা হলো, এখনো দেশের চার কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নেই। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ডব্লিউএফপি) ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। স্ট্রাটেজিক রিভিউ অব ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রেশন ইন বাংলাদেশ শীর্ষক এই গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রায় ৪ কোটি মানুষ পরিমিত খাদ্য পায় না; তারা নিয়মিত খাদ্য অনিশ্চয়তায় ভোগে। তাদের মধ্যে এক কোটি ১০ থানার মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটের মধ্যে রয়েছে। তাদের খাদ্য সংকট প্রকট। তাদের পুষ্টি সংকটও একই রকম। ডব্লিউএফপি’র তরফে বলা হয়েছে, খাদ্য ও পুষ্টি সমস্যা উন্নয়নের জন্য একটা বড় প্রতিবন্ধক বা চ্যালেঞ্জ। গবেষণার সমন্বয়ক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান ওসমানী বলেছেন, দেশের বিরাট সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে ক্ষুধা, অপুষ্টি ও দারিদ্র্যের মধ্যে রেখে কোনো দেশই সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক লক্ষ্যের বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করতে পারে না।
দারিদ্রের অনুষঙ্গী পুষ্টিহীনতা এবং নানাবিধ বঞ্চনা। দরিদ্রলোকের পক্ষে নুন-ভাতই যেখানে আক্রা সেখানে মাছ-গোশত, ডিম-দুধসহ পুষ্টিকর খাবারের কথা চিন্তারও অতীত। আলোচ্য রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, অপুষ্টির কারণে প্রতি তিনটি শিশুর একটির শারীরিক বিকাশ ঘটে না। মায়ের অপুষ্টি ও অপূর্ণাঙ্গ অবস্থায় জন্ম গ্রহণের কারণে প্রতি বছর প্রায় ২২ লাখ শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকে। অপুষ্টি উৎপাদনশীলতা হ্রাস করে। অপুষ্টিজনিত উৎপাদনশীলতা হ্রাসের আর্থিক ক্ষতি বিরাট; প্রতিবছর ১০ কোটি ডলারের মতো।
সরকার ২০২৪ সালের মধ্যে দেশকে ক্ষুধামুক্ত, ২০৩০ সালের মধ্যে অপুষ্টিমুক্ত ও একই বছর মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশে উন্নীত করার কথা প্রচার করছে। অথচ বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, উৎপাদন-রফতানী, কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য-পুষ্টিহীনতার যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হওয়া কতটা সম্ভব হবে সেটা এক বিরাট প্রশ্ন। সরকার উন্নয়নের কথা বলছে, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেগা মেগা প্রকল্প গ্রহণ করছে। এসব প্রকল্পের দু’য়েকটি বাদে কোনোটির বাস্তবায়নের তেমন অগ্রগতি নেই। প্রস্তাবিত-গৃহীত প্রকল্পগুলো কবে নাগাদ বাস্তবায়িত হবে, কেউ বলতে পারে না। বিদেশী বিনিয়োগ না এলে, দেশীয় বিনিয়োগ না বাড়লে, উৎপাদন বাড়লে ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ না ঘটলে সরকারের একার পক্ষে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। গার্মেন্ট শিল্প থেকে অর্জিত রফতানি আয় ও রেমিটেন্সের ওপর ভর করে অনাগত-অনির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত চলা যাবে না। এ দু’টি খাতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি ইতোমধ্যেই উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। দেশকে ক্রমোন্নতির পথে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নিতে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এই সঙ্গে জাতীয় সম্পদের সুষম বণ্টন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, দারিদ্র্যবিমোচন, মানবসম্পদের উন্নয়নের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে বলে বেশী আহ্লাদিত হওয়ার কিছু নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।