Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আল্লাহর শতভাগ রহমতের ৯৯ ভাগই পরকালে-২

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

আরবি ব্যাকরণ শাস্ত্রের দু’টি পারিভাষিক শ্রেণির নাম ‘মা’রেফা ও নাকরা’। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট বিশেষ্য ও অনির্দিষ্ট বিশেষ্য। কোরআনের উল্লেখিত সূরা বাকারার ২০১ নং আয়াতে ব্যবহৃত ‘হাসানাহ’ শব্দটি ব্যাকরণিকভাবে নাকরা অর্থাৎ অনির্দিষ্ট বিশেষ্যের পর্যায়ভুক্ত। পার্থিব-জাগতিক এবং পারলৌকিক-আখেরাতমূলক সকল প্রকারের ভালো, শুভ ও কল্যাণ মঙ্গল কামনা করা ‘হাসানাহ’র অন্তর্ভুক্ত বলে কোরআনের ভাষ্যকারগণের অভিমত। পৃথিবীর সকল সুন্দরকে অন্তর্ভুক্ত করে হাসানাহ। দুনিয়া ও আখেরাতের সকল প্রকারের ভালো কামনা করাই এ দোয়ার অর্থ বলে ভাষ্যকারগণের অভিমত।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আমল হতে এর তাৎপর্যও পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। তিনি এ দোয়া অধিক পরিমাণে করতেন। কেবলমাত্র দুনিয়া হাসিল করার জন্য যারা এ আয়াতকে দলিল হিসেবে পেশ করতে চান, তা যে ভ্রান্ত চিন্তা-চেতনা ও ভুল উপলব্ধির কুফল তা ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়ে না, খোদ আয়াতই তার প্রমাণ। কেননা ‘ফিদদুনিয়া হাসানাতান’ এর সাথে ‘ওয়া ফিল আখেরাতি হাসানাতা’ও জুড়ে দেয়া হয়েছে। যারা কেবল দুনিয়া তলবের আশা করে আখেরাতকে ভুলে যায়, তারা মোমেন মুসলমানদের দলভুক্ত হতে পারে না। কেননা মোমেন মুসলমান হওয়ার জন্য যেসব মৌলিক বিষয়ের ওপর ঈমান আনা তথা বিশ্বাস স্থাপন করা শর্ত হিসেবে আরোপিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আখেরাতে বিশ্বাস স্থাপন করা একটি।

রাসূল (সা.) যুগের একটি ঘটনা। ঘটনাটি মুসলিম, নাসায়ী ও তিরমিজিতে হজরত আনাস (রা.)-এর বরাতে বর্ণিত হয়েছে এবং তা এই :

হুজুর (সা.) একজন অতি দুবলা-পাতলা অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যান। ক্ষীণকায় লোকটিকে দেখতে পাখির ছানা মনে হতো। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি আল্লাহর নিকট কোন দোয়াটি করো কিংবা কোন জিনিস তলব করো? সে জবাবে বলল, হ্যাঁ আমি প্রার্থনা করি, আখেরাতে যে আযাবটি আমার জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, তা আমাকে দুনিয়াতেই দিয়ে দাও। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, সুবহানাল্লাহ! আমরা তো তা ভোগ করার শক্তি সামর্থ্য রাখি না, তুমি এ দোয়া কেন করো না, হে আল্লাহ, আমাকে দুনিয়াতে এবং আখেরাতেও হাসানা দান করো এবং জাহান্নামের আযাব হতে নাজাত দাও। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর অসুস্থ লোকটি উক্ত বাক্যগুলো উচ্চারণের মাধ্যমে দোয়া করে, তখন আল্লাহ তাকে আরোগ্য দান করেন।

সূরা বাকারার বর্ণিত ২০১ নং আয়াতটি পাঠ করার সাথে সাথে অসুস্থ লোকটি সুস্থ হয়ে যায়, এটি আয়াতের বরকত ও হুজুর (সা.)-এর জীবন্ত মোজেযা।

বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইমাম দামেরী (রহ.) এর কয়েকটি তাৎপর্য তুলে ধরেছেন। যথা : ১. খোদায়ী আযাব দ্রুত আগমনের দোয়া করা নিষিদ্ধ। ২. বর্ণিত দোয়া পাঠ করার ফজিলত ব্যক্ত হয়েছে। ৩. সোবহানাল্লাহ! তাজ্জব অবস্থায় পাঠ করা জায়েজ। ৪. দুনিয়াতে কোনো মানব আখেরাতের আযাব সহ্য করতে সক্ষম নয়। কেননা পার্থিব জীবন খুবই দুর্বল। যদি কোনো ব্যক্তি এ আযাবে পতিত হয়, তাহলে ধ্বংস হয়ে যাবে এর বিপরীত আখেরাতের চিরস্থায়ী এবং এ স্থায়িত্ব জান্নাতে হোক বা জাহান্নামে হোক, সেখানে মৃত্যু নেই।

সুতরাং কাফেরের ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা সূরা নিসার ৫৬ নং আয়াতে বলেন : এতে সন্দেহ নেই যে, আমার নিদর্শনসমূহের প্রতি যেসব লোক অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে, আমি তাদের আগুনে নিক্ষেপ করব, তাদের চামড়াগুলো যখন জ¦লেপুড়ে যাবে, তখন আবার আমি তা পাল্টে দেবো অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা আযাব আস্বাদন করতে থাকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, হেকমতের অধিকারী।

আয়াতটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ভাষ্যকারগণ বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করেছেন। এ প্রসঙ্গে হজরত মূ’আয (রা.) বলেছেন যে, তাদের শরীরের চামড়াগুলো যখন জ¦লেপুড়ে যাবে, তখন সেগুলো পাল্টিয়ে দেয়া হবে এবং এ কাজটি এত দ্রুতগতিতে সম্পাদিত হবে যে, এক মুহূর্তে শতবার চামড়া পাল্টানো যাবে। এতে বোঝা যায়, কেবল চামড়াগুলো পাল্টানো হবে, শরীরের অবশিষ্ট সকল অঙ্গ অক্ষুণ্ন থাকবে। হযরত হাসান (রহ.) এর বর্ণনায় আরো জানা যায়, তিনি বলেন : ‘আগুন তাদের চামড়াকে একদিনে সত্তর হাজার বার খাবে। যখন তাদের চামড়া খেয়ে ফেলবে, অমনি সেসব লোককে বলা হবে, তোমরা পূর্বাবস্থায় ফিরে যাও। সাথে সাথে সেগুলো পূর্বের মতো হয়ে যাবে। (মাযহারীর সূত্রে মা’আরেফ)।

আয়াতে কাফেরদের অবস্থান বর্ণনা করা হয়েছে। তাদের আযাবের কঠোরতা এবং তা অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্য বারবার দ্রুত চামড়া পরিবর্তনের অর্থ হচ্ছে, কাফেরগণ সর্বদা একই প্রকারের আযাবে পতিত থাকবে। কোরআনে ও হাদিসে এ মর্মের আরো নানা বিষয়ের উল্লেখ আছে। আল্লাহ সকলকে পার্থিব ও পরকালীন সর্বপ্রকারের কল্যাণের কাজ করার ও প্রার্থনা করার তওফিক দান করুন।



 

Show all comments
  • MD Year Ali Sikder ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৩৫ এএম says : 0
    রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ''আল্লাহ যখন সৃষ্টিজগৎকে সৃষ্টি করেছেন তখন একটি পুস্তকে লিখে রাখেন, 'আমার দয়া আমার ক্রোধের ওপর বিজয়ী হয়েছে।' অতঃপর তিনি এ পুস্তকটি নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন।" (বুখারি ও মুসলিম)।
    Total Reply(0) Reply
  • Jahidul Islam ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৩৬ এএম says : 0
    ল্লাহ তায়ালা তাঁর দয়াকে ১০০ ভাগ করে এক ভাগ তাঁর সৃষ্টিজগতের মধ্যে বিতরণ করেছেন। এই এক ভাগের প্রভাবেই একটি পশু তার নখরগুলো নিজের বাচ্চার কাছ থেকে দূরে রাখে, যাতে সে আঘাত না পায়। আর অবশিষ্ট ৯৯ ভাগ অনুগ্রহ তিনি কিয়ামতের দিবসের জন্য রেখে দিয়েছেন।'
    Total Reply(0) Reply
  • Nazmul Hasan ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৩৬ এএম says : 0
    ইহজগতে কাফির-মুশরিক ও পশু-পাখিরাও আল্লাহর অনুগ্রহ পেয়ে থাকে। কিন্তু পরকালের রহমত ও অনুগ্রহ কেবল মুত্তাকি, মুমিনরাই পাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Kafi Akond ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৩৭ এএম says : 0
    মানুষের বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহ তাদের জীবন-জীবিকার পথ সুগম করেছেন। চাষাবাদের জন্য জমিনকে উর্বর করে দিয়েছেন। খাল-বিল, নদী-নালা, সাগর, ঝরনার ব্যবস্থা করেছেন। আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। মানুষের অসংখ্য কল্যাণের নিমিত্তে সূর্যের আলো জ্বালিয়েছেন। মানুষের কর্মক্লান্ত দিন শেষে একটু বিশ্রাম ও খানিকটা স্বস্তির জন্য রাতকে অন্ধকারময় ও কোলাহলমুক্ত করেছেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন