বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোরআন শরীফে আল্লাহর দরবারে দোয়া করার ব্যাপারে শতাধিক আয়াতে ‘রাব্বুনা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে ‘আমাদের প্রভু’। সূরা বাকারার ২০১ নং আয়াতটি সাধারণ মুসলমানগণও ব্যাপকভাবে মোনাজাত হিসেবে উচ্চারণ করে থাকেন। এ পুরো দোয়াটি হচ্ছে: ‘রাব্বানা আতেনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতান ওয়াফিল আখেরাতে হাসানাতাও ওয়া কেনা আযাবান্ নার’। অর্থাৎ, হে আমাদের প্রভু, আমাদেরকে পৃথিবীতেও কল্যাণ দান করুন এবং পরকালেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে দোযখের আযাব হতে নিষ্কৃতি দান করুন।’
এ আয়াতের তাৎপর্য সর্ম্পকে বিভিন্ন তফসীরগ্রন্থে বহু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা রয়েছে। আয়াতটির শানে নূযুল সর্ম্পকে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, আরবের কতিপয় গোত্রের মধ্যে প্রথা প্রচলিত ছিল যে, তারা যখন মিনায় একত্রিত হতো, তখন এই দোয়া করতো, ‘হে আমাদের পরম পূজনীয় প্রভু, আমাদের এই মালপত্র বর্ধিত করে দিন, দুর্ভিক্ষ হতে রক্ষা করুন, বৃষ্টিপাত করুন’ ইত্যাদি। কিন্তু আখেরাতের জন্য কোনো দোআই করত না। এতে অত্র আয়াত অবতীর্ণ হয়: ‘হে মুসলমানগণ, তোমাদের উচিত যে, তোমরা উভয় জগতের কল্যাণ প্রার্থনা করো এবং বর্ণিত রূপে বলো।
আয়াতে দোয়া বা প্রার্থনার দুটি শ্রেণির কথা বলা হয়েছে। এক শ্রেণি হচ্ছে কাফের ও পরকালে অবিশ্বাসী। এদের প্রার্থনার একমাত্র বিষয় হচ্ছে দুনিয়া। দ্বিতীয় শ্রেণি হচ্ছে মোমেন, পরকালের প্রতি যাদের বিশ্বাস অটল। এরা পার্থিব কল্যাণ লাভের সঙ্গে সঙ্গে আখেরাতের কল্যাণ ও সমভাবে কামনা করে। এর পূর্বে বলা হয়েছিল, তোমরা আল্লাহর জিকির করো, অন্য কারো নয়।
আলোচ্য আয়াতে বলা হচ্ছে, যারা আল্লাহর জিকির করে তারা দুই শ্রেণিতে বিভক্ত, যা পূর্বে ব্যক্ত হয়েছে। কাফেরদের দোয়া-প্রার্থনা সর্ম্পকে আল্লাহ স্পষ্ট করে সূরা রা’দ এ বলেছেন। পূর্ণ আয়াতটির অর্থ : ‘সত্যের আহ্বান একমাত্র তারই নিকট এবং তাকে ছাড়া যাদেরকে ডাকে তারা তাদের কোনো কাজে আসে না। তাদের দৃষ্টান্ত যেরূপ, যেমন কেউ দু’হাত পানির দিকে প্রসারিত করে যাতে পানি তার মুখে পৌঁছাবে না। কাফেরদের যত আহ্বান তার সবই পথভ্রষ্টতা।’ (আয়াত : ১৪)।
আয়াতে কাফেরের দোয়াকে বলা হয়েছে ‘দ’লাল’ অর্থাৎ -গোমরাহী পথভ্রষ্টতা। সুতরাং পথভ্রষ্টদের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না। বর্ণিত আয়াতগুলোতে দোয়া কবুল হওয়া না হওয়া অর্থাৎ কাদের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হবে এবং কাদের হবে না তা পরিষ্কারভাবে বলে দেয়া হয়েছে এবং ‘দ’লাল’ (পথভ্রষ্টতা) শব্দ ব্যবহার করে বান্দাদের দোয়া কবুল হবে না তাও নির্ণয় করে দেয়া হয়েছে।
সূরা বাকারার আয়াতে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনা করার কথা বলা হয়েছে। ‘হাসানাহ’ এর অর্থ নিয়ে ভাষ্যকারগণের নানা ব্যাখ্যা রয়েছে। যখন কিছু লোকের মতে, ‘হাসানাহ’ অর্থ দুনিয়াতে ইলম (জ্ঞান) ও এবাদত এবং আখেরাতে জান্নাত ও মাগফিরাত। কেউ কেউ বলেন, ‘হাসানাহ’ অর্থ আখিরাতের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং কারো কারো মতে, তার অর্থ : মাল-দৌলত এবং উত্তম মাল। আবার কেউ কেউ বলেন, দুনিয়াতে সৎ রমনী এবং আখেরাতে ‘হুরে-ঈন’ (জান্নাতের সুন্দরী কুমারী)। তবে সঠিক অর্থ করা হয়েছে সর্বপ্রকারের মঙ্গল, কল্যাণ, তবে ইমাম নববি বলেন, হাসানাহ অর্থ দুনিয়াতে এবাদত ও নিরাপত্তা এবং আখেরাতে জান্নাত ও মাগফিরাত।
উভয় জাহানের কল্যাণ কেবল আল্লাহ তাআলার দরবারেই প্রার্থনীয়। তিনি সর্বপ্রকারের মালিক, তিনিই প্রকৃতপক্ষে কল্যাণদাতা। এ প্রসঙ্গে মুসলিম শরীফে হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) এরশাদ করেছেন : আল্লাহ তাআলার নিকট একশ রহমত আছে এবং সেগুলো হতে মাত্র একটি রহমত দুনিয়াবাসীদের জন্য বরাদ্দ করেছেন, যার ফলে মানুষ তার সন্তানাদির প্রতি দয়া প্রদর্শন করে থাকে এবং পাখি (বিহঙ্গকুল) ওদের বাচ্চাদের ভালোবাসে। কিয়ামত দিবসে আল্লাহ শত রহমত পূর্ণ করবেন এবং এ শত রহমতের দ্বারা তার বান্দাগণের প্রতি রহম করবেন।
হজরত আবু আইউব সিজিস্তানী বলেন, আল্লাহ তাআলা তার যে শত রহমত দুনিয়ায় বণ্টন করেছেন, তা হতে আমার ভাগ্যে ইসলাম পড়েছে এবং আমি আশা করি যে, বাকি যেসব রহমত আখেরাতে বণ্টন হবে সেখান থেকেও আমি অধিক অংশ পাব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।