Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামের চূড়ান্ত বিজয় অবশ্যম্ভাবী

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

১৯৬২ সালের কথা। তখন আমি মাদ্রাসা-ই আলীয়া ঢাকা-এর কামেল হাদীস বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলাম। সে বছর ফিলিস্তীন-এর গ্র্যান্ড মুফতী (রহ.) ঢাকা সফরে এসেছিলেন এবং মাদ্রাসা-ই আলীয়ার পক্ষ হতে তাকে এক সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল। এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এক প্রাণস্পর্শী বক্তৃতা প্রদান করেছিলেন। তার জ্বালাময়ী আরবি ভাষায় প্রদত্ত বক্তৃতার উর্দু-অনুবাদ শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরে ছিলেন উস্তাদুনা আল্লামা আবদুর রহমান আল কাশগরী (রহ.)। আমি সেই বক্তৃতার মূল কথাগুলো অত্যন্ত যত্মসহকারে লিপিবদ্ধ করে রেখে ছিলাম। আজ সহৃদয় পাঠক ও পাঠিকাদের সামনে তার সামান্য ঝলক তুলে ধরতে প্রয়াস পাব, ইনশাআল্লাহ! আসুন এবার সেদিকে নজর দেয়া যায়।

এ পর্যায়ে স্মরণ রাখা দরকার যে, উল্লিখিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি সংঘটিত হয়েছিল তখনকার সফর মাসের ১৪ তারিখে। সম্মানীত গ্র্যান্ড মুফতী (রহ.) ১৪ সংখ্যাটির রেশ ধরেই বক্তৃতা শুরু করেছিলেন এবং বলেছিলেন : ‘ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় ১৪ সংখ্যাটির ফযিলত ও গুরুত্ব অনেক।

যেমন : (ক) আল কোরআনে ১৪টি তিলাওয়াতের সিজদাহ রয়েছে। তিলাওয়াতকারী ও শ্রোতা উভয়ের উপরই এই সিজদাহ আদায় করা ফরজ। এই সিজদাহ আল্লাহ পাকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের উজ্জ্বল নিদর্শন। (খ) প্রত্যেক আরবি মাসের ১৪ তারিখে চাঁদ পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। এবং এই তারীখের চাঁদকে আরবি ভাষায় ‘বাদরুন্’ বলা হয়। পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজরতের প্রাক্কালে মদীনা মুনাওয়ারার উপকণ্ঠে সানিয়াতুল বিদা টিলার সন্নিকটে পৌঁছলে মদীনার আনসারগণ তাঁকে ‘বাদরুন’ বলেই অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করে সুললিত কণ্ঠে গেয়ে ছিলেন : ‘তালায়াল বাদরু আলাইনা, মিন ছানিয়াতিল বিদা, ওয়াজাবাশ শুকরু আলাইনা, মা দায়া-লিল্লাহি দায়’। অর্থাৎ ছানিয়াতুল বিদা টিলার দিকভাল হতে পূর্ণ চন্দ্রের অভ্যুদয় আমাদের উপর ছায়া বিস্তার করেছে। তিনি আমাদেরকে আল্লাহপাকের আনুগত্যের সে আহ্বান জানিয়েছেন, তজ্জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা আমাদের ওপর অপরিহার্য।

(গ) ইসলামের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রথম সাক্ষী বদর যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ও ১৪ জন সাহাবী শাহাদতবরণ করেছেন। (ঘ) আল কোরআনে ১৪টি আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরার নাম সূরা আসসফ। এই সূরাটির ক্রমিক সংখ্যা-৬১। এই সংখ্যাটির একক (৬+১) = ৭। যা দ্বারা ১৪ কে ভাগ করা যায়। (ঙ) এই সূরায় মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের পক্ষ হতে ১৪টি বিষয়ের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে।

যথা : (১) যারা শীশাঢালা প্রাচীরসম আল্লাহর পথে লড়াই করে আল্লাহপাক তাদেরকে ভালোবাসেন। (২) আল্লাহপাক পাপাচারী সম্প্রদায়কে সুপথ প্রদর্শন করেন না। (৩) পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আগমন বার্তা যা মরিয়ম তনয় ঈসা (আ.) এভাবে ঘোষণা করেছেন : আমি এমন একজন রাসূলের সুসংবাদ দাতা, যিনি আমার পরে আগমন করবেন তাঁর নাম আহমাদ।

(৪) যে ব্যক্তি ইসলামের দিকে আহুত হয়েও আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে, তার চাইতে অধিক জালিম কেউ নয়। (৫) তারা মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর নূর নিভিয়ে দিতে চায়, আল্লাহপাক তাঁর আলোকে বিকশিত করবেনই। (৬) আল্লাহপাক তাঁর রাসূলকে যে পথনির্দেশ ও সত্য ধর্ম দিয়ে প্রেরণ করেছেন, একে সকল ধর্মের ওপর বিজয়ী করবেনই। (৭) মুমিনগণের ফল প্রসু বাণিজ্য হচ্ছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন সম্পদ ও জীবনপণ করে জিহাদ করা।

(৮) আল্লাহপাক তাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন। (৯) এবং তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। (১০) আরো একটি অনুগ্রহ আল্লাহপাক দিবেন, যা তোমরা কামনা করো। তা হচ্ছে আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে সাহায্য। (১১) মুমিনদের বিজয় ত্বরান্বিত হবে। (১২) আল্লাহপাকের পক্ষ হতে মুসলমানদেরকে শক্তি যোগান দেয়া হবে। (১৩) ইসলাম চূড়ান্ত বিজয় লাভ করবে। (১৪) আল্লাহ ও রাসূলদ্রোহীরা সর্বাত্মকভাবে নির্মূল হয়ে যাবে।

তিনি আরো বলেছেন : এই ১৪টি সুসংবাদের মধ্যে যেগুলোর বাস্তবায়ন এখনো পর্যন্ত ঘটেনি, সেগুলোর বাস্তবায়ন অতি শীঘ্রই হবে এবং পৃথিবীর সকল প্রান্তেই আযানের ধ্বনি উচ্চারিত হবে। বিশ্ব মুসলিম মিল্লাত এই চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। মহান আল্লাহপাক আমাদেরকে সঠিক বুঝ ও জ্ঞান দান করুন, এটাই আজকের একান্ত প্রত্যাশা।



 

Show all comments
  • Mukul Hosen ৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৬:৫৬ এএম says : 0
    মক্কা বিজয় ইসলামের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। মক্কা বিজয়ের পর পুরো আরব ভূখণ্ডে এবং সারা বিশ্বে অল্প দিনের মধ্যে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে।
    Total Reply(0) Reply
  • হুসাইন আহমেদ হেলাল ৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৬:৫৭ এএম says : 0
    বিজয় আল্লাহর দান। কোরআন কারিমে ‘ফাত্‌হ’ বা বিজয় নামে আল্লাহ তাআলা একটি সুরাও অবতীর্ণ করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি।’ (সুরা-৪৮ ফাত্‌হ, আয়াত: ১)।
    Total Reply(0) Reply
  • সাইমুম চট্টগ্রাম ৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৬:৫৭ এএম says : 0
    শক্তি, সামর্থ্য, সফলতা ও বিজয়ের জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রয়োজন; আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজন আল্লাহর ওপর ভরসা ও নির্ভরতা।
    Total Reply(0) Reply
  • বাহার বিন মুহিব ৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৬:৫৮ এএম says : 0
    আল্লাহর সাহায্যেই বিজয় আসে। পবিত্র কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন; তিনি তো তওবা কবুলকারী।’ (সুরা-১১০ নাসর, আয়াত: ১-৩)।
    Total Reply(0) Reply
  • মামুন আহাম্মাদ ৪ জানুয়ারি, ২০২২, ৬:৫৮ এএম says : 0
    বিজয়ের সুফল পেতে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ও সামাজিক স্থিতিশীলতা। এ জন্য দরকার ধৈর্য-সহিষ্ণুতা, দয়া-মায়া ও স্নেহ-মমতা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন