Inqilab Logo

রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কোরআন বুঝতে হবে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ ও তাঁর সাহাবীদের জীবনের আলোকে

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

কোরআন কারীম যেমনিভাবে স্বয়ং কোরআন থেকে বুঝতে হবে, তেমনি রাসূল (সা.)-এর পবিত্র সুন্নাহ (হাদীস ও সীরাত) থেকেও বোঝা জরুরি। কোরআনের নির্দেশনা ও বিধিবিধান স্বয়ং কোরআন অবতীর্ণকারী তাঁকে শিখিয়েছেন (দ্র. সূরা কিয়ামাহ-৭৫ : ১৯)। আর তিনি তাঁর শাগরিদদেরকে সবিস্তারে মৌখিকভাবে এবং আমলের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন, (দ্র. সূরা নাহল-১৬ : ৪৪)। অতএব তাদাব্বুরে কোরআন পূর্ণ ও যথার্থ হওয়ার জন্য এটা শর্ত যে, কোরআন বোঝার ক্ষেত্রে হাদীস শরীফ ও পবিত্র সীরাত সামনে রাখা হবে এবং সাহাবায়ে কেরামের জীবনীর সাহায্য নেয়া হবে।

এ নীতিটি তো সর্ববাদীসম্মত। তবে এখন আমরা শুধু ইমাম আবু মানসুর মাতুরীদী (রহ.)-এর বক্তব্য উল্লেখ করব। তিনি সূরা রূমের ১৭-১৮ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় এই নীতির দিকে ইশারা করেছেন। সূরা রূমে ইরশাদ হয়েছে : আল্লাহর তাসবীহতে লিপ্ত থাক, যখন তোমরা সন্ধ্যায় উপনীত হও এবং যখন তোমরা ভোরের সম্মুখীন হও। তাঁরই প্রশংসা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে এবং বিকাল বেলায় (তার তাসবীহতে লিপ্ত হও) এবং জোহরের সময়ও।

ইমাম আবু মানসুর মাতুরীদী (রহ.) বলেছেন : উম্মতের প্রথম সারির ব্যক্তিগণ এই আয়াত থেকে প্রত্যেকদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়ার বিধান বুঝেছেন। যদি তাঁরা আজকালকার মানুষের মতো চিন্তা করতেন, তাহলে তাঁরা এখান থেকে শুধু তাসবীহ পাঠ করাই বুঝতেন। (বাদায়েউস সানায়ে, আল্লামা আবু বকর কাসানী (ওফাত ৫৮৭ হি.) ১/২৫৩] ১)।

ইমাম মাতুরীদী (রহ.) একথা বলতে চাচ্ছেন যে, উম্মতের প্রধান ব্যক্তিবর্গের (সাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন) ঈমানী যিন্দেগীর আলোকে কোরআন বোঝা উচিত। কেননা তারা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর শিক্ষা থেকে কোরআন বুঝেছেন এবং তাদের ইসলামী যিন্দেগী কোরআন কারীম ও নববী শিক্ষারই দর্পণ ছিল।
এই নীতির আলোচনার পর ইমাম মাতুরীদী রাহ. বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন, উম্মতের ইমামগণ এই দুই আয়াত থেকে নামাজের বিধান এবং প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরয হওয়া কীভাবে বুঝেছেন। তাঁর কিতাব তাবীলাতু আহলিস সুন্নাহ (৮/২৫৮) দ্রষ্টব্য।

একথা স্মরণ রাখা আবশ্যক, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরয হওয়া ইসলামের মৌলিক এবং অকাট্য বিধান। ইসলামের অন্যান্য বুনিয়াদের মতো এই বিধানও তাওয়াতুরের সাথে যুগ পরম্পরায় সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে চলে এসেছে। যেভাবে আমরা ইসলাম ধর্মের নিম্নোক্ত বিষয়াবলি জেনেছি।

১. হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সা.) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। তিনি সর্বশেষ নবী ও রাসূল। তাঁর পরে কেউ নবুওতপ্রাপ্তও হবে না এবং রিসালাতও নয়। তাঁর পরে কারো কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো ওহীও আসবে না এবং তাঁর পরে কোনো নতুন নবীর আগমনও অসম্ভব।

২. কোরআন আল্লাহ তাআলার নাযিলকৃত সর্বশেষ হেদায়েতের কিতাব। ৩. কোরআনের এই আমানত আল্লাহ তাআলার হুকুম মতো রাসূলুল্লাহ (সা.) যেভাবে সাহাবায়ে কেরামের কাছে রেখে গেছেন, তা আজোবধি সেভাবেই সুরক্ষিত আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত সুরক্ষিত থাকবে। এতে কোনো এক শব্দ বা অক্ষর বাড়ানোও সম্ভব নয় এবং কমানোরও কোনো সম্ভাবনা নেই।

৪. খাতামুন নাবিয়্যীন হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সা.) কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকলের নবী। তাঁকে আল্লাহ যে শরীয়ত দান করেছেন তা সর্বশেষ আসমানী শরীয়ত এবং সকলের জন্য তাঁর অনুসরণ অপরিহার্য। ৫. রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হাদীস ও সুন্নাহ কোরআনের মতো শরীয়তের দলিল এবং তাঁর পবিত্র সীরাত উম্মতের জন্য উসওয়ায়ে হাসানাহ।

৬. রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর হুকুমে উম্মতকে ফরযসমূহ শিক্ষা দিয়েছেন এবং হারাম সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়ে তা থেকে বেঁচে থাকতে আদেশ করেছেন। এগুলো এবং দ্বীন ও শরীয়তের অন্যান্য মৌলিক বিধানাবলি যুগ পরম্পরা থেকে সুস্পষ্টভাবে চলে আসছে। এগুলোর দলিল কেবল একটি আয়াত বা একটি হাদীস নয়; বরং এগুলোর দলিল অসংখ্য। পূর্ণাঙ্গ ইসলাম এবং পুরো নববী জীবনই এগুলোর দলিল।



 

Show all comments
  • জসিম ৩ জানুয়ারি, ২০২২, ৩:০৬ এএম says : 0
    একদম ঠিক কথা বলেছেন
    Total Reply(0) Reply
  • নুরজাহান ৩ জানুয়ারি, ২০২২, ৫:১২ এএম says : 0
    আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা ঈমান আন যেমনি ঈমান এনেছেন মানুষগণ অর্থাৎ সাহাবাগণ। (সুরা আল বাকারা, আয়াত ১৩) সুতরাং তাদের ঈমান ও আমল অনুযায়ী আমাদের ঈমান ও আমল হওয়া উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • কাওসার ৩ জানুয়ারি, ২০২২, ৫:১২ এএম says : 0
    তাদের ঈমান ও আমলের প্রতি আল্লাহ তায়ালা খুশি হয়ে বলেন, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, তারাই আল্লাহর দলের অন্তুর্ভুক্ত। জেনে রেখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে। (সুরা মুজাদালাহ, আয়াত ২২)
    Total Reply(0) Reply
  • জাফর ৩ জানুয়ারি, ২০২২, ৫:১৩ এএম says : 0
    কোরআন ও হাদিসে প্রত্যেকটি বিষয় যেভাবে এসেছে এবং রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামগণ যেভাবে আমল করেছেন বা করতে বলেছেন সেভাবে করা বা মেনে নেয়ার নামই হল ইবাদত।
    Total Reply(0) Reply
  • তফসির আলম ৩ জানুয়ারি, ২০২২, ৫:১৪ এএম says : 0
    আল্লাহ তায়ালা বলেন, রাসুল (সা.) এর আনীত দ্বীনকে তোমরা আকড়ে ধর, আর যা তিনি নিষেধ করেছেন তা পরিহার কর। (সুরা আল হাশর, আয়াত ৭)
    Total Reply(0) Reply
  • Afif Ariyan ৩ জানুয়ারি, ২০২২, ৯:২০ এএম says : 0
    আমাদের সহীহ লোগো ব্যবহারকারী ভাইরা,,,বাংলা অনুবাদ, বঙ্গানুবাদ বুখারীকে ইসলাম বোঝার জন্য যথেষ্ট মনে করেন । আল্লাহ্ তাদের হেদায়েত দান করুক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন