Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভালো কলেজে ভর্তিই চ্যালেঞ্জ

একাদশ শ্রেণি

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে নির্ধারিত সময়ের সাড়ে নয় মাস পর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এবারের এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেই পরীক্ষার ফল গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে। দীর্ঘ বিরতির পর এই পরীক্ষায় এবার এযাবতকালের রেকর্ড পাসের হার ও সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। ২০২১ সালের এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষায় ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন। পাসের হার ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ সাফল্য জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন। অর্থ্যাৎ এসব শিক্ষার্থী প্রতিটি বিষয়ে গড়ে ৮০ থেকে ১০০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফল করায় উল্লোসিত হয়েছেন শিক্ষর্থী ও অভিভাবকরা। তবে নির্ভার হতে পারছেন না। ভালো ফলের পর এখন চ্যালেঞ্জ এসেছে ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া। যদিও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সকলেই কলেজে ভর্তি হতে পারবেন কিন্তু পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হিমশিম খেতে হবে ভালো ফলাফল করা ভর্তিচ্ছুদের। প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকা মহানগরীর শীর্ষ তালিকায় থাকা কলেজগুলোতে নজর থাকবে তাদের।

আগামী ৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি আবেদন। শেষ হবে ১৫ জানুয়ারি । এরপর যাচাই এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষে ফেব্রুয়ারির ১৯ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভর্তির কাজ শেষ করতে হবে । এরপর ২ মার্চ শুরু হবে একাদশ শ্রেণির ক্লাস ।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গতবারের মতো এবারও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হবে ফলাফলের ভিত্তিতেই। এজন্য কোন পরীক্ষা হবে না। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অনলাইনে আবেদন করতে হবে, নীতিমালা অনুযায়ী, অনলাইনে সর্বনিম্ন ৫ টি ও সর্বোচ্চ ১০ টি কলেজ বা সমমানের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করা যাবে । একজন শিক্ষার্থী যত কলেজে আবেদন করবে , সেগুলোর মধ্য থেকে মেধা , কোটা ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে একটিমাত্র কলেজে তার অবস্থান নির্ধারণ করা হবে।

তবে শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে যেনো বিড়ম্বনা না থাকে এজন্য গতবছর সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোকে শিক্ষার্থী সংখ্যা ও এইচএসসি ফলাফলের ভিত্তিতে ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ এই তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করে দিয়েছিল ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা যাতে বিভ্রান্তি ও প্রতারণার শিকার না হয় সে জন্য কোন কলেজ কোন শ্রেণিতে তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গতবছর একাদশ শ্রেণিতে আসন ছিল ২২ লাখ, এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ লাখ। আর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন শিক্ষার্থী। ফলে দুই লাখের বেশি আসন খালি থাকবে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রতিযোগিতা হবে ভালো মানের কলেজগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে। কারণ এই পরীক্ষায় ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডের অধীনে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন। আর সারা দেশে ভালো মানের কলেজ হিসেবে পরিচিতি প্রায় ২০০ টি। যেগুলোতে সব মিলিয়ে আসন হতে পারে এক লাখের মতো । এ ধরনের ২০ টির মতো কলেজ ঢাকায় অবস্থিত। এগুলোতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন আছে কমবেশি ২০ হাজার । তবে এগুলোর কয়েকটিতে বিদ্যালয় শাখা আছে। নিজ নিজ কলেজ থেকে কম জিপিএ পেলেও ভর্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন এসএসসিতে উত্তীর্ণরা। সে হিসেবে রাজধানীর নামিদামি কলেজগুলোতে এবারও ভর্তির ক্ষেত্রে ভিড় থাকবে দেশ সেরা মেধাবীদের। এর বাইরে ঢাকা কলেজ, নটর ডেম কলেজ, ঢাকা কমার্স কলেজ, সিটি কলেজগুলোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চাপ বেশি হবে । বিভিন্ন বিভাগীয় শহর এবং কিছু জেলা শহরে এ রকম কিছু কলেজ আছে। ফলে পরীক্ষায় সর্বোচ্চ সাফল্য জিপিএ-৫ পেয়ে অনেকেই পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবেন না।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত ঢাকা মহানগরের কলেজে ভর্তিতে বেশি সঙ্কট তৈরি হয়। মেধাবীরা নির্দিষ্ট কিছু কলেজে ভর্তির আবেদন করে। এতে অনেকেই ভর্তি বঞ্চিত হয়। কিন্তু এসব কলেজের বাইরেও অনেক ভালো কলেজ আছে তা বোঝাতেই এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকায় ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’ নামে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে।

শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, দেশে একাদশ শ্রেণিতে পড়ানোর মতো কলেজ ও মাদরাসা আছে সাড়ে ৭ হাজারের বেশি। এর মধ্যে কলেজ প্রায় ৫ হাজার। গত বছর এসব কলেজ ও মাদরাসায় একাদশে আসন ছিল ২৯ লাখের বেশি। এবারও এই সংখ্যা আরও বেড়েছে। ফলে কলেজ ও মাদরাসা মিলে অনেক আসনই খালি থাকবে। গ্রামাঞ্চলের অনেক কলেজ শিক্ষার্থীই পাবে না।

তবে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে সবসময় সঙ্কট তৈরি হয় ঢাকা মহানগরির কলেজগুলোতে। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভালো ফলাফল করা শিক্ষার্থীদের টার্গেট থাকে এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া। তাই হাতেগোনা কিছু কলেজেই প্রতিবছর শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তবে ভর্তিচ্ছুদের কাছে প্রতিবছর বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরের আরও শতাধিক কলেজ আকর্ষণীয় থাকে। এগুলোর মধ্যে- রংপুর বিভাগে ৩২টি, বরিশাল বিভাগে ১৪টি, রাজশাহীতে ৭, চট্টগ্রামে ১৯, খুলনায় ১৩ এবং সিলেট বিভাগে ২৩টি। এ ছাড়া সারা দেশে অর্ধশত মাদরাসা শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় উপরের দিকে আছে। এসব কলেজ-মাদরাসায় স্ব স্ব বিভাগের জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভিড় করলে সবার সংস্থান হবে না। শিক্ষার্থীদের অতীতের ভর্তির আবেদন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের বাইরে মাদরাসা এবং কারিগরি বোর্ড থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরাও ভর্তির আবেদন করবেন।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. নেহাল আহমেদ বলেছেন, আমাদের এবারের পরীক্ষায় যে সংখ্যক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে তার চেয়ে সিট সংখ্যা কয়েক লাখ বেশি। কাজেই ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি হতে কোন সঙ্কট হবে না। তিনি বলেন, যেহেতু ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তি নেয়া হবে, তাই নিজের রেজাল্ট অনুযায়ী যেখানে ভর্তি হওয়া যাবে সেসব কলেজে আবেদন করার পরামর্শ দিচ্ছি। নেহাল আহমেদ বলেন, গতবছর কোন কোন কলেজে সর্বনিম্ন কত নম্বরে ভর্তি নেয়া হয়েছিল সেই খোঁজখবর নিয়ে যাতে শিক্ষার্থীরা কলেজের পছন্দ তালিকা দেয়। #



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: একাদশ শ্রেণি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ