বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
পতাকা বা ঝান্ডা যে কোনো জাতির ঐতিহ্য-দর্পণ। জাতীয় স্বাতন্ত্র্য ও স্বকীয়তাজ্ঞাপক এ প্রতীকী নিদর্শন স্বরূপ। ইসলামে পতাকার গুরুত্ব ও তাৎপর্য স্বীকৃত । ইসলামের ইতিহাসে পতাকার প্রচলন হয় হিজরতের পর রসূলুল্লাহ (সা.) এর মদীনা জীবনের প্রারম্ভকালে। কালেমা তাইয়্যেবা- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ লিখিত এ পতাকা সাধারণত সাদা রঙের ছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কালো রঙের বর্ণনাও রয়েছে। এ পতাকা বহন করে মুসলমানগণ তাকবীর ধ্বনি, নারায়ে তাকবীর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে অভিযানে বের হতেন ।
হুজুর (সা.)-এর নিয়ম ছিল যে, সাহাবায়ে কেরামের কোনো দলকে কোথাও প্রেরণকালে একজনকে নেতা (আমির) এবং একজনকে পতাকাবাহী মনোনীত করতেন। কোনো কোনো যুদ্ধে একাধিক ব্যক্তিকে পতাকাবাহক মনোনীত করতেন। খোদ স্বশরীরে তিনি যুদ্ধে শরীক হতেন। পতাকার মনোগ্রাম তখন থেকে এখন পর্যন্ত অবিকৃতভাবে মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত। তবে এক শ্রেনির বিভ্রান্ত লোক ইসলামের নামে যে কালেমাখচিত ব্যানার প্রদর্শন করে সন্ত্রাসী তৎপরতায় লিপ্ত হয়ে নানাস্থানে নিরীহ মানুষের জানমালের ক্ষতি সাধন করছে। প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদেরই সর্বনাশ ডেকে আনছে।
পতাকার মর্যাদা রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা লক্ষ্য করা যায় মূতা যুদ্ধে। এ যুদ্ধে প্রেরিত দলের তিনজন নেতা ছিলেন পতাকাবাহী। তারা হচ্ছেন, জায়দ ইবনে হারেশা (রা.), জাফর ইবনে আবিতালেব (রা.) এবং আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা.)। এই তিনজন মূতা যুদ্ধের পতাকাবাহী শাহাদাতের সময় কিভাবে পতাকার মর্যাদা রক্ষা করেছিলেন, সে কাহিনী উল্লেখ করা হলো:
মূতা নামক রণাঙ্গনে প্রথমে হজরত জায়দ ইবনে হারেশা (রা.) এর হাতে পতাকা ছিল। তিনি বীর বিক্রমে লড়াই করে শাহাদাতবরণ করেন। এরপর হজরত জাফর ইবনে আবিতালেব (রা.) পতাকা ধারণ করেন। তাঁর ডান হাত কেটে গেলে তিনি বাম হাতে পতাকা ধরেন, তাঁর সে হাতও কেটে যায় , কিন্তু তাতেও তিনি পতাকা মাটিতে পতিত হতে দেননি, সামলিয়ে রাখেন। অতঃপর শাহাদাতবরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ত্রিশ বছর ।
এরপর হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা.) পতাকা বহন করেন এবং তিনিও শহীদ হন। অতঃপর মুসলমানদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে হজরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) পতাকা বহন করেন এবং তিনি তীব্র লড়াইয়ের পর বিজয় সূচিত হয়।
এ সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় আমাদের প্রতিপাদ্য পতাকার মর্যাদা রক্ষার একটি বিরল দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা। এ তুমুল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে শহীদ হওয়ার সময়েও পতাকার মর্যাদা সমুন্নত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা যুদ্ধে এক হাত কর্তন হয়ে যাওয়ায় অপর হাতে তা বহন এবং দুই হাতও হারানোর পর পতাকা যেন ভ‚পতিত না হয়, সেজন্য প্রাণপণ প্রচেষ্টা বিশ^ ইতিহাসের অসাধারণ ঘটনাবলীর অন্যতম।
রাষ্ট্রীয় পতাকার মর্যাদা সমুন্নত রাখার এহেন ত্যাগ উত্তম দেশপ্রেমের উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্তও বটে। দেশের সংবিধানের ন্যায় জাতীয় পতাকাও পবিত্র। সংবিধানে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের রীতিনীতিও লেখা থাকে, এর অবমাননা বা অমর্যাদা প্রদর্শন করা হলে উপযুক্ত শাস্তির বিধানও রয়েছে। সুতরাং পতাকার অপব্যবহার যেন না হতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। পতাকা জাতীয় পরিচিতির আয়না স্বরূপ। একে খেলনা হিসেবে মনে করার উপায় নেই। কাপড় বা কাগজরূপী পতাকা যাই হোক না কেন, উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত স্থানে তা সঠিকভাবে ব্যবহার করা যেমন উচিত তেমনি উচিত যথাযথভাবে তা সংরক্ষণ করা ও তার প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন করা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।