Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক’দিন পরেই পিঠা-পায়েসের উৎসব

দামুড়হুদায় হালকা শীতের আমেজ শুরু হয়েছে মধুবৃক্ষ খেজুরগাছ কাটা

প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে
চলতি বছর শরতের শেষে হেমন্তের শুরু থেকেই দামুড়হুদা উপজেলার সর্বত্রই রাতের দিকে অনুভূত হচ্ছে হালকা শীতের আমেজ। ভোরের দিকে দেখা যাচ্ছে হালকা কুয়াশা। এখনও মাঝে মধ্যে আকাশে দেখা মিলছে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের আনাগোনা। ইতোমধ্যেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে মধুবৃক্ষ থেকে রস আহরণের প্রস্তুতি। গাছিরা খেজুরগাছের ডেগো পরিষ্কার, দা তৈরি, দড়ি কেনা ও মাটির ভাড় (কলস) কেনা, রস জ্বালানোর তাওয়া কেনা, স্থান ঠিক করাসহ রস সংগ্রহ ও খেজুরগুড় তৈরির নানা আয়োজনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর থেকেই গ্রামবাংলার গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষকে ঘিরে গ্রামীণ জনপদে শুরু হবে এক উৎসবমুখর পরিবেশ। মধুবৃক্ষ থেকে গাছিরা রস সংগ্রহ করবে। এ সুমিষ্ট খেজুর রস জ্বালিয়ে তৈরি হবে গুড় ও পাটালি। উপজেলার প্রতিটি গ্রামীণ জনপদে শুরু হবে নলেন গুড় দিয়ে তৈরি নানারকম পিঠা-পায়েসের উৎসব। আর গ্রামবাংলায় এ উৎসবের আমেজ চলবে হেমন্ত ও শীতকালজুড়ে। জানা যায়, এক সময় চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলা খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদনে প্রসিদ্ধ ছিল। এখনও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল তো বটেই তাছাড়াও দেশের বাইরে এর বেশ কদর রয়েছে। তবে বর্তমানে নানা প্রতিকূলতায় খেজুর গুড়ের এ ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। গ্রাম বাংলার সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক এ খাতে সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় বর্তমানে আগের মতো আর রস, গুড় উৎপাদন হয় না। উপজেলার নির্দিষ্ট কয়েকটি গ্রাম ছাড়া সুঘ্রাণ নলেন গুড় পাওয়া যায় না। তা আবার চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত কম। ফলে শীত মৌসুমে যে রস, গুড় ও পাটালি তৈরি হয় তা নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু হয়। ইতোমধ্যেই শহরের লোকজন গ্রামের গাছিদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন। আবার কেউ কেউ গাছিদের নিকট অগ্রিম টাকা তুলে দিচ্ছেন ভালো রস, গুড় ও পাটালি পাওয়ার আশায়। অগ্রিম টাকা পেয়ে অনেক গাছি কিনছেন রস সংগ্রহের উপকরণ। গত কয়েক বছর বাজারে গুড়ের চেয়ে চিনির দাম কম থাকায় বেশি লাভের আশায় অনেক অসাধু গাছি গুড় জ্বাল দেয়ার সময় তাতে চিনি মিশিয়ে ভেজাল করে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে। ফলে অনেকেই এ ভেজাল গুড় কিনে আসল গুড়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সেই সাথে বেশি দামে এসব ভেজাল গুড় কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আর্থিকভাবেও। তবে আশার কথা, এ বছর বাজারে চিনির দাম গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ হওয়ায় গুড় ভেজাল হওয়ার আশঙ্কা কম। তাই এবার আসল গুড়ের স্বাদ পাওয়া যাবে এমন মন্তব্য অনেকের। উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের গাছি আ: লতিফ ও তারিনীপুরের আশাদুল জানান, এলাকায় আগের মতো আর খেজুরগাছ তেমন নেই। তাই খেজুর গুড় তৈরি করে আগের মতো আর লাভ হয় না। তবুও বাড়তি উপার্জনের আশায় অন্যান্য কাজের ফাঁকে এ কাজ করি। অনেকেই জানান, বর্তমানে পুরাতন গাছের বেশিরভাগই কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে। খেজুরগাছ আবাদি জমির তেমন কোনো ক্ষতি করে না। তাই আবাদি জমির চার আইলে খেজুরগাছ রোপণ করা যায়। এছাড়া সড়কপথ, রেলপথ, পুকুরপাড় ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় প্রচুর খেজুরগাছ লাগানোর সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন স্থানের অধিকাংশ খেজুরগাছই অযতœ আর অবহেলায় বেড়ে ওঠে। ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো নিষেধ হলেও ভাটা মালিকরা নির্বিচারে এসব গাছ কিনে ইট পোড়াচ্ছেন। তারা আরো জানান, বর্তমানে অনেক চাষি তাদের আবাদি জমির আইলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খেজুর বাগান করতে শুরু করেছেন। এসব খেজুরগাছ বড় হলে আগামী দশ-বারো বছর পর থেকে প্রচুর রস, গুড় ও পাটালি পাওয়া যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক’দিন পরেই পিঠা-পায়েসের উৎসব
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ