Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অনিয়মই যেখানে নিয়ম!

প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সৈয়দ নাজমুল ইসলাম, উজিরপুর (বরিশাল) থেকে
উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রত্যেকটি দপ্তরের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারিরা সংশোধিত না হয়ে স্ব-স্ব দপ্তর চালাচ্ছেন খেয়ালখুশি মতো। অনিয়মই যেখানে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালের রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে দায়সারা। সকাল ৮ থেকে দুপুর ২.৩০ মিঃ পর্যন্ত সরকারী ৩ টাকার টিকিটের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় রোগীদের সেবা দেয়ার নীতিমালা থাকলেও সেখানে হচ্ছে তার উল্টো। সরজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগে একজন মেডিকেল এসিস্টান দেবিরানী। সহকারী ডাঃ আলাউদ্দিন এসেছেন ৮.৪৭ মিনিটে। মেডিকেল অফিসার স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা এ কে এম শামছউদ্দিন এসেছেন সকাল ৯.০৮ মিনিটে। এসে নিজের দাপ্তরিক কাজ সেরে ৯.৪৩ মিনিটে ৩০ নং কক্ষে বসে শুরু থেকেই ভিজিট নিয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত  রোগী দেখেন। ভিজিট সম্পর্কে  রোগীদের কাছে জানতে চাইলে কেউ ২শ’ কেউ ১শ’ আবার কেউ ভিজিট নেয়নি বলে জানান। ৩৩ নং কক্ষে ৯.১০ মিনিটে আসেন ডাঃ নুসরাত জাহান (আয়ুবেদী)। ২৪ নং কক্ষে ৯.২৫ মিনিটে আসেন ডাঃ সব্যসাচী দাস (সানি)। ৯.২৮ মিনিটে একাই জান হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের দেখতে। প্রথমে যান পুরুষ ওয়ার্ডে ১৭, মহিলা ওয়ার্ডে ১৬ ও শিশু ওয়ার্ডে ১২ এই ৪৫ জন রোগী ৩৭ মিনিটে দেখেন। ১০.০৫ মিনিটে ফিরে আসেন কক্ষে। ২৩ নং কক্ষে ৯.৩০ মিনিটে আসেন ডাঃ শওকত আলী। ডাঃ নুসরাত জাহান, ডাঃ সব্যসাচী দাস (সানি) ও ডাঃ শওকত আলী হাসপাতালে আসা টিকিট কাটা ও ব্যক্তিগতভাবে ফি নিয়ে দুপুর ১টা পর্যন্ত রোগী দেখেন। এরপর থেকে হাসপাতালের টিকিট কাটা রোগী দেখা বন্ধ করে দেন। বহিঃবিভাগ টিকিট কাউন্টারে ৯.২৫ মিনিটে আসেন মোঃ হান্নান। এসে সাদা কাগজ কেটে সিল মেরে ৩ টাকার টিকিট ৫ টাকা বিক্রয় করেন কিন্তুু টিকিটে টাকার অংক বসান না। সাদা কাগজে সিল মারা প্রথম টিকেট ৫ টাকা দিয়ে ক্রয় করেন ইনকিলাব সংবাদদাত যার নাম্বার- ২৩০১৭/১, ২৪/১০/১৬। ৯১টি টিকিট বিক্রয় করে দুপুর ১টায় চলে যান টিকিট বিক্রেতা। ২৯ নং কক্ষের ফার্মেসিটি খোলা হয় ১০.১৫ মিনিটে। সোয়া ১০টায় ফার্মেসী খোলা হলেও দুপুর ১টা এর অধিকাংশ সময়ই বন্ধ করে রাখা হয়। হাসপাতালে ভর্তিরত  রোগীদের অভিযোগ- প্রতিদিন সকালে একজন করে ডাক্তার এসে ঘুরেফিরে জান। জরুরি দরকার হলে ডাঃ ডাকতে গেলে কোন সময় আসেন আবার বেশিরভাগ সময় আসেন না। বারবার ডাকতে গেলে রেগে যান। খাবার সম্পর্কে ভর্তিরত রোগীরা বলেন, খাবারের মান এতই খারাপ যা চোখে না দেখলে বলে বুঝানো যাবে না। আর খাবার যা দেয় হয় তা খুবই সামান্য। হাসপাতালে আমাদের মতো অসহায়, গরিব মানুষের পক্ষে চিকিসাসেবা নেয়ার উপায় নেই। কারণ আমাদের মানুষ বলেই গণ্য করা হয় না। তারা আরো বলেন, আপনার মতো অনেক সাংবাদিককে প্রতিদিন এই হাসপাতালে আসতে দেখা যায়, আমাদের খোঁজ-খবর নেয় কিন্তু কোন দিন কোন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হতে দেখি নাই। গুছ হয়ে যায় সাংবাদিকরা, আপনিও যাবেন। পোস্ট অপারেটিভ কক্ষে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডেলিভারী কাজে নিয়োজিত থাকেন একমাত্র সেবিকা, কোন ডাক্তার নয়। এ বিষয় গত ২৬ অক্টোবর কর্মরত ডাক্তার শওকত আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নরমাল ডেলিভারি কাজে সেবিকারাই যথেষ্ট। রোগী ভর্তির ব্যাপারে অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার প্রশ্নে জরুরি বিভাগের মেডিকেল সহকারী দেবিরানী বলেন, ভর্তি ফরম কয়েক মাস ধরে সরকার দিচ্ছে না তাই আমাদের স্যার মেডিকেল প্রধান আমরা জরুরি বিভাগে ৩ জন আছি। আমাদের ফরম ছাপিয়ে নিতে বলা হয়েছে তাই আমরা ফরম বাবদ কিছু টাকা বেশি নিচ্ছি। অভিযোগ রয়েছে, অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার। হাসপাতাল খোলার সাথে সাথে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনীধিরা এসে ভিড় জমান হাসপাতাল। উপঢৌকন নিয়ে কে কোন ডাক্তারের কক্ষে যাবেন এ নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। এ নিয়ে ঝগড়াঝাটিও করতে দেখা যায়। দুর্নীতির প্রশ্নে মেডিকেল অফিসার স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা এ কে এম শামছউদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, সমস্যাগুলো অল্প সময়ের মধ্যে দূর করা হবে। এ বিষয় পত্রিকায় না লেখার জন্যও অনুরোধ করেন। জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ এএফএম শফীউদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে কাজটি করার কথা আমার তা আপনি করেছেন, এ জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ তবে পত্রিকায় না লেখার জন্য অনুরোধ করছি। স্থানীয়রা বলেন, এই হাসপাতালে যারা চাকরি করেন তারা আইনের তোয়াক্কা না করে স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তিকে হাতে রেখ নিজেদের খেয়ালখুশি মতো হাসপাতাল চালান। তারা আরও বলেন, উজিরপুর উপজেলার ২ লাখ মানুষের এই হাসপাতালটিকে দুর্নীতির কবল থেকে রক্ষার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ দরকার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অনিয়মই যেখানে নিয়ম!

২৮ অক্টোবর, ২০১৬
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ