নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
দিনের পর দিন আসে, মাসের পর মাস। মাস ঘুরে বছর শেষ হলেও বাংলাদেশের ফুটবলে সাফল্যের দেখা মেলা ভার। কালের গর্ভে হারিয়ে গেল আরেকটি বছর। ২০২১ কে বিদায় জানিয়ে বিশ্ববাসী বরণ করে নিলো ২০২২ সালকে। কিন্তু বিদায়ী বছরে ফুটবলে কী পেলো বাংলাদেশ? এমন প্রশ্নের সহজ উত্তর-অন্যান্য বছরের মতো ২০২১ সালেও পুরুষ ফুটবলে ব্যর্থ লাল-সবুজরা। গেল বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চোখ বুলালে দেখা যায় পুরুষ জাতীয় দল এবং যুব দলের কোন সাফল্যই নেই। যদিও মেয়েদের হাত ধরে বছর শেষে এসেছে সবেধন নীলমনি একমাত্র সাফল্যটি। মেয়েদের সাফল্য দিয়ে একটি দেশের ফুটবলে অর্জন মূল্যায়ন সম্ভব না হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অনেক বড় সেটা। ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো’র মতো একদম না পাওয়ার চেয়ে মেয়েদের পাওয়াটাই বা কম কিসের!
২০২১ সালে একটি ট্রফির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। কিন্তু ট্রফি ধরা দেয়নি। জাতীয় দলের নিয়মিত ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে’কে বিদায় করে দুইজন অন্তবর্তীকালীন কোচ দিয়ে জামাল ভূঁইয়াদের দু’টি টুর্নামেন্টে খেলিয়েছে বাফুফে। তারা মালদ্বীপের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে জাতীয় দলের দায়িত্ব দিয়েছিল বসুন্ধরা কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রæজোনের উপর। আর শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত চার জাতি টুর্নামেন্টে জামাল-তপুদের কোচের দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোস। যদিও দুই টুর্নামেন্টেই ব্যর্থ হয় লাল-সবুজরা। এই না পাওয়ার বেদনা নিয়েই শেষ হতো দেশের ফুটবলের একটি বছর, যদি না মেয়েরা ডিসেম্বরে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হতো। বয়সভিত্তিক, নারী কিংবা জাতীয় দল- যে কোন পর্যায়ের ফুটবলে ভারতকে হারানোর মধ্যে একটা বাড়তি কৃতিত্ব কাজ করে। সেই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন মারিয়া মান্ড-আঁখি খাতুনরা। তাও চ্যাম্পিয়ন হয়ে। এক টুর্নামেন্টে ভারতকে দুইবার হারানোর স্বাদ দিয়েই বাংলাদেশের ফুটবল পার করেছে ২০২১ সাল। এর বাইরে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি বিদায়ী বছরে। সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে শক্তিশালী ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। গত ২২ ডিসেম্বর কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ম্যাচের ৮০ মিনিটে আনাই মুগিনীর গোলে শিরোপা জয় করে বাংলাদেশের মেয়েরা। শাহেদা আক্তার রিপার ব্যাকহিলের বল ধরেই দূর পাল্লার শটে আনাই গোল করলে উল্লাসে ফেটে পড়ে স্টেডিয়াম পরিপূর্ণ দর্শকরা। ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি শিরোপাও ধরে রাখে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে ভুটানে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপে (যা এবার হয়েছে অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে) নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল লাল-সবুজরা।
২০২১ সাল শুরু হয়েছিল পুরুষ দলের জয় দিয়ে আর শেষ হয়েছে নারী দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্যদিয়ে। গত ২৩ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল তিন জাতি টুর্নামেন্ট। কিরগিজস্তান অনূর্ধ্ব-২৩ দলকে ১-০ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ টুর্নামেন্ট শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত সাফল্য পায়নি। বিশ্বকাপ বাছাইসহ ২০২১ সালে বাংলাদেশের পুরুষ জাতীয় দল ১৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে। নিকট অতীতে জাতীয় দল বছরে এতগুলো ম্যাচ খেলেনি। বেশি ম্যাচ, বেশি অভিজ্ঞতা-স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তিতেও দেখা মেলেনি সাফল্য। গেল বছর বেশি ম্যাচ খেললেও একটিও ঘরের মাঠে খেলেননি জামালরা। বিদেশের মাটিতে পাঁচ টুর্নামেন্টে ১৬ ম্যাচে ৫ ড্র ও ৮ হারের বিপরীতে বাংলাদেশের জয় মাত্র ৩টি। ওই ৩ জয় কিরগিজস্তান অনূর্ধ্ব-২৩, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের বিপক্ষে।
বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাই পর্ব শেষ হয়েছে গত বছর। করোনাভাইরাসের কারণে ২০২২ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের খেলা শেষ হতে দেরি হয়েছে। বাছাইয়ের ‘ই’ গ্রæপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল কাতার, ওমান, ভারত এবং আফগানিস্তান। করোনার জন্য বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের যে চার ম্যাচ বাকি ছিল সেগুলো বিদায়ী বছর হয়েছে সেন্ট্রাল ভেন্যু কাতারের দোহায়। যেখানে বাংলাদেশ ১-১ ব্যবধানে আফগানদের সঙ্গে ড্র করলেও ভারতের বিপক্ষে ২-০ এবং ওমানের কাছে ৩-০ গোলে হারে। শেষ পর্যন্ত ৮ ম্যাচে দুই ড্রতে ২ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের গ্রæপ পর্ব শেষ করে লাল-সবুজরা। পাঁচ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। পঞ্চম হলেও বাংলাদেশ এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বে সরাসরি খেলার সুযোগ পেয়েছে।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দীর্ঘদিনের শিরোপাখরা কাটানোর লক্ষ্য নিয়ে গেল বছরের অক্টোবরে মালদ্বীপ গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। স্বপ্নের মত না হলেও কাঙ্খিত লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছিল লাল-সবুজরা। কিন্তু নেপালের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশের। নেপালকে হারাতে পারলেই সাফের ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যেতো। কিন্তু জামাল ভূঁইয়ারা তা পারনেনি। নেপালের বিপক্ষে প্রথমে গোল করে ৮৬ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থেকেও পেনাল্টি থেকে গোল হজম করে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ।
এর আগে কিরগিজস্তানের বিশকেকে তিনজাতি আমন্ত্রণমূলক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে স্বাগতিক এবং ফিলিস্তিনের বিপক্ষে খেলে তৃতীয় হয় বাংলাদেশ। ফিলিস্তিনের কাছে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ হারে ২-০ গোলে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক কিরগিজস্তানের কাছে হারে ৪-১ গোলের বড় ব্যবধানে। কিরগিজস্তান অনূর্ধ্ব-২৩ দলের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলে ৩-২ গোলে হেরে ওই সফর শেষ করে বাংলাদেশ দল।
সাফের পর নভেম্বরে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে চার জাতি টুর্নামেন্টেও ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় দল। চার জাতি টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে এক ম্যাচে। একটিতে হেরে ও এক ম্যাচ ড্র করে ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হন জামালরা। প্রতিপক্ষ তিন দেশের মধ্যে দুটি র্যাঙ্কিংয়ে নিচে থাকলেও বাংলাদেশ তাদের একটি দলকেও হারাতে পারেনি। বরং সবচেয়ে দুর্বল শ্রীলঙ্কার ১০ জনের দলের কাছেও হেরে যায় লাল-সবুজরা।
বছরের শেষ মাসে অনূর্ধ্ব-১৯ মেয়েরা ভারতকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন হলেও বছরের মাঝামাঝিতে নারী জাতীয় দল দেশকে দিয়েছিল হতাশার খবর। উজবেকিস্তানে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্রথম দুই ম্যাচে জর্ডান ও ইরানের কাছে ৫টি করে গোল হজম করেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। অবশ্য শেষ ম্যাচে হংকংকে ৫-০ গোলে হারিয়েছেন সাবিনা খাতুনরা। সাবিনা একাই করেন ৪ গোল। গেল বছর বাফুফে বহুল প্রতিক্ষীত জিম চালু করতে সক্ষম হয়েছে। এ বছর তারা একটা একাডেমিও চালু করতে পেরেছে। বাফুফের ভবনের সামনের মাঠে জিমন্যাসিয়াম ও কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বাফুফের এলিট একাডেমি চালু হয় বিদায়ী বছর। আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে ঘরোয়া ফুটবলে নজর দিলে দেখা যায় গেল বছর অনেকদিন পর চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ঘরে তোলে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। তারা স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে বসুন্ধরা কিংসকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা জয়ে করে। তবে বছরের শেষ ও মৌসুমের দ্বিতীয় টুর্নামেন্ট ফেডারেশন কাপে ঘটেছে নানা হাস্যকর ঘটনা। চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস, উত্তর বারিধারা ক্লাব ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র ফেডারেশন কাপে অংশ না নেওয়ায় তাদের টুর্নামেন্টের পরবর্তী আসরে নিষিদ্ধ করা হয়। তিন ক্লাবকেই জরিমানা করা হয়েছে ৫ লাখ টাকা করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।