Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জান্নাতে প্রিয় নবী (সা.)-এর সান্নিধ্য লাভ-১

মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান হুসাইন | প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

কোনো মুমিনকে যদি প্রশ্ন করা হয়, তোমার কাছে এই পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় মানুষ কে? নির্দ্বিধায় তার উত্তর হবে- প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সা.)। মুমিনের কাছে যদি জানতে চাওয়া হয়, জান্নাতে তোমার সবচেয়ে বড় চাওয়া কী? সকল মুমিনের একই জবাব হবে- নবী কারীম (সা.) এর সঙ্গলাভ।
মুমিন-হৃদয়ের তামান্না- জীবনে-মরণে প্রিয় নবীর সান্নিধ্য। জীবনভর প্রিয় নবীর আদর্শে উজ্জীবিত হবে এবং মৃত্যুর পর জান্নাতে তাঁর সান্নিধ্য লাভ করবে- ঈমানদারের জন্য এর চেয়ে বড় কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। সাহাবায়ে কেরামের জীবন থেকে আমরা এ শিক্ষাই পাই। রবীআ ইবনে কা‘ব আসলামী রা. ওইসব খোশনসীব সাহাবীদের একজন, যারা ছিলেন ‘আসহাবে সুফফা’র অন্তভুর্ক্ত। দ্বীন শেখার জন্য সারা দুনিয়ার সবকিছু ছেড়ে পড়ে থাকতেন নবীজীর দুয়ারে।

একবার তার জন্য উন্মোচিত হয়ে গেল সৌভাগ্যের আলোক-দিগন্ত। সেই বিবরণ দিয়েছেন রবীআ রা. নিজেই। তিনি বলেন : আমি নবী কারীম (সা.)-এর কাছে রাত্রি যাপন করতাম। তাঁর জন্য অযুর পানি এনে দিতাম এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য খেদমত আঞ্জাম দিতাম। এক রাতে তাঁর ওযুর পানি এনে দিলাম। হঠাৎ আমার কানে প্রবেশ করল এক মধুর আওয়ায; নবীজী বললেন : তোমার কী চাওয়ার আছে, আমার কাছে চাও রবীআ!

তখন সবিনয়ে আমি আরয করলাম : আল্লাহর রাসূল! আপনার কাছে আমার চাওয়া হলো, জান্নাতে আপনার সান্নিধ্য। নবী কারীম (সা.) বললেন : এটা, না অন্য কিছু চাও? আমি বললাম : (আল্লাহর রাসূল!) এটা ছাড়া আমার আর কোনো চাওয়া নেই। নবী কারীম (সা.) বললেন : তাহলে অধিক পরিমাণে সিজদা করার মাধ্যমে এ বিষয়ে তুমি আমাকে সাহায্য করো। (সহীহ মুসলিম : ৪৮৯)।

জান্নাতে নবীজীর সঙ্গলাভ! পরকালে প্রিয়নবীর সান্নিধ্য! এর চেয়ে বড় সৌভাগ্য আর কী হতে পারে! এর চেয়ে বড় খোশকিসমত আর কী থাকতে পারে? চাইতে হলে এভাবেই চাইতে হয়। এটাই মুমিন-হৃদয়ের অব্যক্ত বাসনা। এটাই মুমিনের পরম ও ছ‚ড়ান্ত প্রত্যাশা। মুমিনের হৃদয়-রাজ্য দখল করে আছে নবী কারীম (সা.)-এর প্রেম-ভালোবাসা এবং জান্নাতে তাঁর সঙ্গলাভের পবিত্র তামান্না। হাদীস ও ইতিহাস-গ্রন্থে জ্বলজ্বল করছে এ ধরনের অনেক ঘটনা।

জান্নাতে কারা লাভ করবে প্রিয়নবীর সান্নিধ্য-পরশ : সাহাবায়ে কেরাম দুনিয়াতে নবীজীর সোহবত-ধন্য হয়েছেন। তাঁর পবিত্র দর্শনে লাভ করেছেন নয়নের শীতলতা, হৃদয়ের প্রশান্তি। আমাদের তো আল্লাহ তাআলার কুদরতী ব্যবস্থাপনার কারণে দুনিয়াতে নবীজীর দর্শন ও সোহবত লাভের সৌভাগ্য হয়নি। কিন্তু তাই বলে কি আখেরাতেও প্রিয় নবীর সঙ্গে থাকতে পারব না? জান্নাতেও নবীজীর সোহবত লাভের সুযোগ হবে না? না, নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই।

আমাদের নবী আমাদেরকে নিরাশ করে যাননি। আমাদের জন্য অবারিত আছে জান্নাতে তাঁর সঙ্গ লাভের নূরানী সুযোগ। নবী কারীম (সা.) জানতেন, তাঁর অনাগত উম্মত তাঁর সোহবত পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকবে, তাঁর সান্নিধ্য পরশ লাভের জন্য জীবন উৎসর্গ করবে। তাই তিনি এমন কিছু আমল উপহার দিয়ে গেছেন, যা গ্রহণ করলে সহজেই অর্জিত হবে আমাদের কাক্সিক্ষত সৌভাগ্য। আসুন, সে নূরানী আমলসমূহ জানি এবং আমলের মাধ্যমে লাভ করি জান্নাতে প্রিয়নবীর সান্নিধ্য!

১. বেশি বেশি সিজদা করা : আমরা রবীআ ইবনে কা‘ব আসলামী রা.-এর ঘটনা পড়ে এসেছি। সেখানে নবী কারীম (সা.) তাকে দুইবার বলেছেন, তোমার যা ইচ্ছা আমার কাছে চাও। রবীআ রা. উত্তর দিয়েছেন, আমার প্রথম ও শেষ চাওয়া একটাই- জান্নাতে আপনার সান্নিধ্য। তখন নবী কারীম (সা.) বলেছেন : তাহলে অধিক পরিমাণ সিজদা দ্বারা আমাকে সাহায্য করো। (সহীহ মুসলিম : ৪৮৯)।

তো জান্নাতে নবী কারীম (সা.)-এর সান্নিধ্য লাভের একটি উপায় হলো- বেশি বেশি আল্লাহ তাআলাকে সিজদা করা। ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুআক্কাদার পরিমাণ নির্ধারিত। এসবের মধ্যে তো হ্রাস-বৃদ্ধি করা যাবে না। তাই আমাদের কর্তব্য হচ্ছে, অধিক পরিমাণে নফল নামাজ পড়া।



 

Show all comments
  • Saif Sultanur Rahman ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৪:৫৪ এএম says : 0
    মানুষ দুনিয়ায় সফল হওয়ার জন্য কত কষ্ট সহ্য করে! কেউ কেউ সফল হয়। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ হতাশ হয়। একটু সুখের আশায় মরীচিকার পেছনে ছুটতে ছুটতে মানুষ নিজেদের জীবন জাহান্নামে পরিণত করে। অথচ প্রকৃত সফলতা আখিরাতের সফলতা।
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Rashadujaman ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৪:৫৪ এএম says : 0
    দুনিয়ার সুখ-দুঃখ ক্ষণস্থায়ী। এর বিপরীতে আখিরাতের অবস্থান চিরস্থায়ী এবং সেখানকার সুখ-দুঃখও চিরস্থায়ী। তাই আমাদের আসল চিন্তা আখিরাতের হওয়া উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahabub Alam ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৪:৫৫ এএম says : 0
    আখিরাতের সুখ-শান্তি তাকওয়ার ওপর নির্ভরশীল। যারা দুনিয়ার জীবনে তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহর ভয়ে পাপ থেকে বিরত থাকে, কষ্ট হলেও হালাল পথে থাকার চেষ্টা করে, তাদের জন্যই আছে স্থায়ী সফলতা; যে সফলতা অতীতের সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Kafi Akond ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৪:৫৬ এএম says : 0
    মহান আল্লাহ সবাইকে আখিরাতের সফলতা দান করুন। আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Jamal Hossain ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৪:৫৬ এএম says : 0
    নবীজীর ওপর দরুদ ও সালাম পড়া প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। যার ওসিলায় সত্যের সন্ধান মিলেছে, চিরসুখের জান্নাতের পথ জানা গেছে—তার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসা পোষা খুবই জরুরি।
    Total Reply(0) Reply
  • Jashim Uddin Salim ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৪:৫৬ এএম says : 0
    প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসার এই হক আদায়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হলো তার ওপর দরুদ-সালাম পড়া।
    Total Reply(0) Reply
  • BOSS ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৯:৪৯ পিএম says : 0
    SOBAI 5 OAKTO NAMAZ AAY KORUN
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন