Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নকলায় চাঞ্চল্যকর মুনছুর হত্যা রহস্য উদঘাটন পিবিআইয়ের

শেরপুর জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৯:৪৬ পিএম

শেরপুরের নকলায় চাঞ্চল্যকর মুনছুর হত্যা রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ২৯ ডিসেম্বর বুধবার গ্রেফতারকৃত ২ আসামি জামালপুর সদরের রণরামপুর গ্রামের মুনছুর আলী ওরফে কালা মুনছুর (৪০) ও নকলার ধনাকুশা গ্রামের মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে আমির হোসেন (২৮) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করায় ওই রহস্য উদঘাটন হয়। ৩০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে পিবিআইয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওই হত্যা রহস্য উদঘাটনের বিস্তারিত জানানো হয়।

জানা যায়, গত ১২ ডিসেম্বর সকালে নকলা উপজেলার নকলা ইউনিয়নের ধনাকুশা নদীপাড় গ্রামের একটি কাঁচা রাস্তার ওপর থেকে বিবস্ত্র অবস্থায় মুনছুর আলী ফকিরের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাৎক্ষণিক পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় পরবর্তীতে আঙুলের ছাপের মাধ্যমে জানা যায় সে পার্শ্ববর্তী জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার গঙ্গাপাড়া শংকরপুর গ্রামের হানিফ উদ্দিন ফকিরের ছেলে। পরে খবর পেয়ে পরদিন মুনছুরের স্ত্রী সালমা আক্তার ও বাবা হানিফ উদ্দিন ফকিরসহ স্বজনরা থানায় গিয়ে তার লাশের ছবি দেখে মুনছুর আলীকে শনাক্ত করেন এবং ওই ঘটনায় মুনছুরের বাবা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার পরপরই পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই, জামালপুর মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং পরবর্তীতে গত ২০ ডিসেম্বর মামলাটি সরাসরি পিবিআইয়ে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তের এক পর্যায়ে গত ২৬ ডিসেম্বর ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বেতজুড়ি গ্রামের মৃত ছফুর উদ্দিনের ছেলে আসামি আজিজুল ইসলাম মামুন (২২) কে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া ঘটনায় জড়িত মুনছুর আলী ওরফে কালা মুনছুর ও আমির হোসেনসহ শ্রীপুরের আবদার গ্রামের সাইদুল ইসলামের ছেলে আশিক মিয়া (৩৩) কে গ্রেফতার করে পিবিআইয়ে হস্তান্তর করে সিআইডির একটি টিম। ২৯ ডিসেম্বর বুধবার ওই ৩ জনকে আদালতে সোপর্দ করা হলে মুনছুর আলী ও আমির হোসেন ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি উদ্বৃত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এসআই মো. মেসবাউল ইসলাম জানান, নিহত মুনছুর আলী সুন্দর মুনছুর নামে পরিচিত এবং সেসহ আসামি আজিজুল, কালা মুনছুর, আমির হোসেন একে অপরের পূর্ব পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা গাজীপুরে জৈনাবাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে চুরি করে আসছিল। আসামি আমির ভাড়ায়চালিত পিকআপের চালক ছিল। আমিরের পিকআপ দিয়ে তারা বিভিন্ন স্থান থেকে চুরির গরুসহ অন্যান্য মালামাল আনা নেওয়া করত। ঘটনার ৬/৭ দিন আগে ভিকটিম সুন্দর মুনছুর, আসামি আজিজুল, কালা মুনছুর ও আমির হোসেন নকলা থেকে একটি বাছুরসহ একটি গাভী চুরি করে আমিরের ভাড়ায় চালিত পিকআপযোগে জৈনা বাজারে নিয়ে যায়। গরুটি কোন পার্টির কাছে বিক্রয় করবে, তা নিয়ে সুন্দর মুনছুরের সাথে কালা মুনছুর কথা কাটাকাটি হয়। পরে গাজীপুরের শ্রীপুর থানার লোহাইবাজারে চোরাই গরুটি বিক্রি করতে গেলে সুন্দর মুনছুর তার লোকজন নিয়ে বিভিন্ন ঝামেলার সৃষ্টি করে। সুন্দর মুনছুরের ঝামেলার কারণে চোরাই গরুটি বাছুরসহ কম দামে ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। তখন আজিজুল, কালা মুনছুর ও আমির হোসেন পরিকল্পনা করে যে, সুন্দর মুনছুরকে একটা কঠিন শিক্ষা দিতে হবে, সে বেশী বাড়াবাড়ি করে ফেলছে। ঘটনার ২/৩ দিন আগে আাসামি আজিজুলের বাড়ির পিছনে মাঠের মধ্যে বিকেলে বসে আজিজুল, কালা মুনছুর, আমির হোসেন ৩জন মিলে পরিকল্পনা করে যে, নকলা এলাকায় গরু চুরির কথা বলে সুন্দর মুনছুরকে গাজীপুর থেকে এনে রাতের বেলায় নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে উচিত শিক্ষা দিবে।

সে মোতাবেক আজিজুল, কালা মুনছুর ও আমির হোসেন গত ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আমিরের গ্রামের বাড়ি নকলা উপজেলার ধনাকুশা গ্রামে মিলিত হয়। আমিরের পিকআপের অপর চালক আশিক মিয়া ঘটনাচক্রে বাসাবাড়ির মালামালের একটি ট্রিপ নিয়ে ফুলপুর গেলে পিকআপটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সে আসামিদের সাথে ছিল। পূর্বের পরিকল্পনা অনুযায়ী সুন্দর মুনছুরকে ফোন করে গরু চুরির একটি কাজে নকলায় চলে আসতে বলে। সুন্দর মুনছুর ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বাসযোগে গাজীপুর হতে নকলা বাইপাসে আসে। পরে আজিজুল, কালা মুনছুর ও আমির হোসেন তাকে নিয়ে ঘুরাফেরার এক পর্যায়ে নকলা বাজার হতে মধ্য রাতে ধনাকুশা বাজারের একটু আগে একটি ছোট রাস্তায় প্রবেশ করে কিছুদূর যাবার পর চালক আশিককে পিকআপে বসিয়ে রেখে ধনাকুশা নদীর পাড়ে নিরিবিলি স্থানে গরু চুরির কথা বলে নিয়ে যায়। পিকআপ থেকে নামার সময় তালা কাটার লোহার যন্ত্র ও একটি চাকু সাথে নিয়ে যায় আজিজুল। কাটারটি আজিজুল হাতে রাখে এবং চাকুটি কালা মুনছুরের কাছে দেয়। পরে ধনাকুশা নদীর পাড়ে ব্রিজের কাছে পৌঁছার পর হাঁটাহাঁটি অবস্থায় আজিজুল তার হাতের লোহার কাটার দিয়ে সুন্দর মুনছুরের মাথার পিছনের দিকে জোরে বারি মারে। এতে সুন্দর মুনছুর মাটিতে পড়ে গেলে আজিজুল সুন্দর মুনছুরকে আরও ২/৩ টা বারি মারে। পরে কালা মুনছুর সুন্দর মুনছুরের নাকের কাছে হাত নিয়ে বলে ‘এখনো দম আছে’। তখন কালা মুনছুর তার কাছে থাকা চাকু আজিজুলের হাতে দিয়ে জবাই করতে বললে আজিজুল চাকু দিয়ে সুন্দর মুনছুরকে জবাই করে।

পরে কালা মুনছুর ও আজিজুল সুন্দর মুনছুরের মোবাইল ফোন, কাটার, চাকু ও শরীর থেকে সমস্ত জামা কাপড় খুলে আসামি আমিরের হাতে দেয়। এরপর আজিজুল, কালা মুনছুর, আমির হোসেন ঘটনাস্থল থেকে অনুমান ১০০ গজ দূরে ব্রিজের উপরে গিয়ে সুন্দর মুনছুরের মোবাইল ফোন, কাটার, চাকু ও তার সমস্ত জামা কাপড় নদীর পানিতে ফেলে দেয়। তারপর তারা ওই পিকআপে করে গাজীপুর চলে যায়।

এ ব্যাপারে পিবিআই জামালপুরের পুলিশ সুপার এম.এম. সালাহ উদ্দীন বলেন, ওই মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামী আজিজুল, কালা মুনছুর, আমির হোসেন ও নিহত মুনছুর আলী ফকির আন্ত:জেলা গরু চোর দলের সক্রিয় সদস্য ছিল। এ মামলার ঘটনার বেশ কিছুদিন পূর্বে তারা নকলা থানা এলাকায় একটি গরু চুরির ঘটনা ঘটায়। ওই চোরাই গরু বিক্রি ও টাকার ভাগবাটোয়ারার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকান্ডটি ঘটেছে।

তিনি আরও জানান, পিবিআইয়ের কাছে মামলাটি হস্তান্তরের পরপরই পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের নির্দেশনায় বাড়ানো হয় তদন্ত তদারকি। ফলে তদন্তে দ্রুতই এসেছে অগ্রগতি। আশা করছি দ্রুতই তদন্তকাজ শেষ করে আসামিদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেরপুর


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ