Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হাওরের সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:৫৯ পিএম

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি কমিয়ে এনে হাওরগুলো রক্ষার্থে সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। এ লক্ষ্যে হাওর এলাকার জনগণকে সংগঠিত করে গ্রাম সংরক্ষণ দল গঠন করে দলগুলোর সদস্যদের মাধ্যমে হাওরের পরিবেশ-প্রতিবেশ-জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। হাওর এলাকায় জলজ বন সৃজন করা হয়েছে ও সংরক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিল-খাল পুনঃখননের মাধ্যমে জলাভূমির অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রবল ঢেউয়ের আঘাত থেকে হাওর এলাকার বসতবাড়ি ও সম্পদ রক্ষার জন্য হাকালুকি হাওরে সাবমার্জিবল বাঁধ নির্মাণ ও বাঁধ বরাবর সবুজবেষ্টনী প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত প্রশমনে স্থানীয় কৃষকদের সেচ সুবিধায় সৌর শক্তিৎচালিত সেচ পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বিকল্প আয়মূলক কার্যক্রমের জন্য ক্ষুদ্র মূলধন অনুদান প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া, পরিবারকে বিকল্প আয়মূলক কাজের জন্য প্রকল্প হতে সরাসরি উপকরণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের দক্ষতাবৃদ্ধির জন্য বিভিন্নমুখী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।

আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা আয়োজিত ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের ভবিষ্যত: তারুণ্যের মুখোমুখি নীতিনির্ধারক’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তরুণদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সহযোগিতা করে একশন এইড বাংলাদেশ। সভায় অতিথিরা তরুণদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।

সভায় উপস্থিত তরুণরা জানান জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হাওরের সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। হাওরের মানুষ কে এজন্য অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। হাওরের এসব মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাশে দাঁড়াতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে পরিবেশমন্ত্রী বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার টাংগুয়ার হাওর ও মৌলভীবাজার জেলার হাকালুকি হাওরকে 'প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। টাংগুয়ার হাওরকে ২০ জানুয়ারি ২০০০ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় এবং পৃথিবীর ১০৩১তম রামসার সাইট হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ এলাকায় প্রাকৃতিক বন ও গাছপালা কর্তন বা আহরণ; সকল প্রকার শিকার ও বন্যপ্রাণী হত্যা; ঝিনুক, কোরাল, কচ্ছপ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী ধরা বা সংগ্রহ; প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল ধ্বংসকারী সকল প্রকার কার্যকলাপ; ভূমি এবং পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট/পরিবর্তন করতে পারে এমন সকল কাজ; মাটি, পানি, বায়ু এবং শব্দ দূষণকারী শিল্প বা প্রতিষ্ঠান স্থাপন; মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর ক্ষতিকারক যে কোনো প্রকার কার্যাবলী; নদী-জলাশয়-লেক-জলাভূমিতে বসতবাড়ি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পয়ঃপ্রণালীসৃষ্ট বর্জ্য ও তরল বর্জ্য নির্গমন এবং কঠিন বর্জ্য অপসারণ; যান্ত্রিক বা ম্যানুয়াল বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে পাথরসহ অন্য যে কোনো খনিজসম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে এ প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকাসমূহ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১৬ জারি করা হয়েছে। বিধিমালা বাস্তবায়নে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা জাতীয় কমিটি জেলা কমিটি, উপজেলা কমিটি, ইউনিয়ন সমন্বয় কমিটি এবং গ্রাম সংরক্ষণ দল গঠন করা হয়েছে। হাওরের প্রাকৃতিক সম্পদ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম এসকল কমিটির মাধ্যমে সরকার বাস্তবায়ন করছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে পরিবেশমন্ত্রী বলেন, শুধুমাত্র উন্নত বিশ্বের দিকে না তাকিয়ে থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার বিশদ পরিকল্পনা ও কৌশল প্রণয়নের মাধ্যমে নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে জলবায়ু অভিযোজন ও প্রশমন সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৯ সাল থেকে ২১ অর্থবছর পর্যন্ত প্রায় ৪৮০ মিলিয়ন ইউএস ডলার বা ৩ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় এই তহবিলের অর্থে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি দপ্তর, সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রায় ৮০০টি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। গত সাত বছরে জলবায়ু সংক্রান্ত ব্যয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সমন্বিতভাবে অভিযোজন কৌশল ও করণীয় নির্ধারণকল্পে ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান (এনএপি ) প্রণয়ন করা হচ্ছে। উক্ত এনএপি প্রণয়নে সারাদেশ ব্যাপী তৃণমূল পর্যায়ে পরামর্শমূলক সভা করা হচ্ছে যেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় করণীয় নির্ধারণে যুব সমাজকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে।
সরকার বছরে সাত কোটির অধিক গাছ লাগাচ্ছে- এ তথ্য উল্লেখ করে মন্ত্রী সবাইকে বেশি করে গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই পরিবেশ সংরক্ষণে সফল হবে সরকার।

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খলিকুজ্জামান আহমদের সভাপতিত্বে এরং মোঃ শাহরিয়ার এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন। সভার শুরুতে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা।
সভাপতি অধ্যাপক ড কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, পরিবেশ জলবায়ুর চেয়ে ব্যাপক বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। তরুনদেরও এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে। কাসমির রেজা বলেন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হাওরের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। মানুষের জীবন মান কমে যাচ্ছে। কিন্তু সেই বিষয়টি নানা ভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। হাওরের মানুষের জলবায়ু সুবিচার প্রতিষ্ঠায় আমরা তরুনদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। তরুনদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এমরান হোসাইন, আসিফ হোসেন, সিরাত আল হোসাইন ,রিয়াজ উদ্দিন ,আহমেদ রেজা ,সুস্মিতা রায় ও ইসরাত শেখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ