Inqilab Logo

রোববার ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

অংশীজন সংলাপে বিশেষজ্ঞরা ‘অস্তিত্বের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন’

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:১৬ পিএম

জাতীয় পর্যায়ের অংশীজন সংলাপে সংসদ সদস্যসহ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আমাদের অস্তিত্বের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ধনী দেশগুলোর মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকলে চলবে না। এ বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) আয়োজিত ওই সংলাপ সঞ্চালনা করেন সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো. শামছুদ্দোহা।
সংলাপে আলোচনায় অংশ নেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, বিসিএএস পরিচালক আতিক রহমান, খুলনা সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র আলী আকবর টিপু, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ধরিত্রী কুমার সরকার, বাংলাদেশ পরিবেশ সংবাদিক ফোরামের সভাপতি কামরুল ইসলাম চৌধুরী, ইউএনডিপির প্রগ্রাম স্পেশালিস্ট এ কে এম আজাদ রহমান, পিকেএসএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে রাব্বী সাদেক আহমেদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গহর নইম ওয়ারা, ডিয়াকোনিয়া কান্ট্রি ডিরেক্টর খোদেজা বেগম, ইউএন উইমেন প্রগ্রাম স্পেশালিস্ট দিলরুবা হায়দার, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখল চন্দ্র ভদ্র প্রমুখ।

সংলাপে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব ও এর অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে প্রেরিত প্রস্তাবনা তুলে ধরেন অ্যাওসেডের নির্বাহী পরিচালক শামীম আরফীন। বাংলাদেশের নদীভাঙনপ্রবণ অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব ও এর অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য করণীয় বিষয়ে প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন এসডিএসের নির্বাহী পরিচালক রাবেয়া বেগম। আর সিসিবিভিওর রিপোর্টিং ও ডকুমেন্টেশন অফিসার প্রদীপ মার্ডি বাংলাদেশের খরাপ্রবণ অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব ও এর অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে প্রেরিত প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। সংলাপে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, গবেষক ও নীতিনির্ধারকগণ অংশগ্রহণ করেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‌টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে একটি যথাযথ জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ) প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। ন্যাপ আমাদের জাতীয় জীবনের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করেছি। এখন গুরুত্বের সঙ্গে কাজটি করা দরকার। এই ‘অংশীজন সংলাপ’ একটি সূচনা হতে পারে। একটি অংশগ্রহণমূলক ও যথাযথ ন্যাপ প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আতিক রহমান বলেন, ন্যাপ প্রক্রিয়াটি ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। যা ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ন্যাপ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অঞ্চলগুলোর নিজস্ব বাস্তবতা বিবেচনায় নিতে হবে। তিনি বলেন, উপকূলসহ দেশের সব অঞ্চলেই জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। সুশাসনের অভাব রয়েছে। ন্যাপ প্রণয়নের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে।
প্যানেল মেয়র আলী আকবর টিপু বলেন, ভৌগোলিক বাস্তবতার আলোকে একটি যথাযথ জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা প্রণয়ন ছাড়া বাঁচার পথ নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এরই মধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লোকায়ত জ্ঞান ও ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মানুষের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিয়ে ন্যাপ প্রণয়নের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকালেয়া প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
উপসচিব ধরিত্রী কুমার সরকার বলেন, প্রস্তাবনার মধ্যে আপনারা দেশের তিনটি অঞ্চলের মানুষের সমস্যাগুলো তুলে এনেছেন। এই তিনটি অঞ্চলই নিজস্ব বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অঞ্চল। এই চমৎকার কাজটি ন্যাপ প্রণয়ন প্রক্রিয়ার জন্য অনেক বড় সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এই কাজের প্রতিফলনও ন্যাপে পাবেন বলে আশা করি।

সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো. শামছুদ্দোহা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবেলা ও অভিযোজন কার্যক্রমে সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ এরই মধ্যে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। ন্যাপ তৈরির প্রক্রিয়াটি অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ হতে হবে। এ ক্ষেত্রে নারী, আদিবাসী, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিশেষ ঝুঁকি এবং একই সঙ্গে স্থানীয় দুর্যোগঝুঁকি ও ঝুঁকি হ্রাসে করণীয় বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠীর এবং বিভিন্ন অংশীজনের যথাযথ অংশগ্রহণ ছাড়া ন্যাপ প্রণয়ন করা হলে পরিকল্পনাটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ