Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আল্লাহ পাকের অফুরন্ত রহমত-১

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

আরবি ভাষায় ‘রহমত’ শব্দটির বহুমুখী ব্যবহার লক্ষ করা যায়। এই শব্দটির মূল ধাতু হচ্ছে রা, হা, মীম, অর্থাৎ ‘রাহমুন্’। এই মূল ধাতু হতে গঠিত হয়েছে বিভিন্নমুখী ক্রিয়া রাহিমা, ইয়ারহামু, আরহাম ইত্যাদি। এ থেকেই গঠিত হয়েছে গুনবাচক বিশেষ্য রাহমান, রাহিম, আল আরহাম রুহামা, এবং সম্বন্ধ পদ রাহমাতিকা, রাহমাতিনা প্রভৃতি। আল কোরআন গভীর মনোযোগের সাথে তিলাওয়াত করলে দেখা যায় যে, ‘রাহমুন’ মূল ধাতু হতে উৎসারিত ক্রিয়া, গুণবাচক বিশেষ্য ও সম্বন্ধপদসমূহ কোরআনুল কারীমে তিনশত’ একচল্লিশ বার ব্যবহৃত হয়েছে।

এতে করে সহজেই অনুমান করা যায় যে, ‘রাহমুন’ মূল ধাতুর অর্থ ও মর্ম খুবই বিস্তৃত ও ব্যাপক। এ হেন বিশাল ও সীমাহীন মর্ম জ্ঞাপক ‘রহমত’ শব্দের অর্থ, মর্ম ও লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যকে বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা স্বল্পায়ু মানুষের পক্ষে মোটেই সম্ভব নয়। যেহেতু নয়, সেহেতু আমরা সুবিজ্ঞ পাঠক ও পাঠিকাদের নিকট সবিনয়ে আরজ করব যে, আমরা আল্লাহপাকের অফুরন্ত ‘রহমত’ সম্পর্কে যা কিছু উপস্থাপন করব, তা’ আল্লাহপাকের মেহেরবাণী ও দয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহ পাক সকল অবস্থাতেই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।

বস্তুত : রহমত বলতে, দয়া, মায়া, ক্ষমা, অনুকম্পা, স্নেহ, করুণা, মমতা ইত্যাদিকে বুঝায়। মহান রাব্বুল আলামীন আল কোরআনে তিনশত এক চল্লিশবার এ সকল অর্থ ও মর্মকে বুঝানোর জন্যই ‘রাহমুন’ এবং তা’ হতে গঠিত শব্দাবলির বহুমুখী ব্যবহার উপস্থাপন করেছেন। যেমন আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) তারা সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এ সকল লোকই হেদায়েতপ্রাপ্ত। (সূরা বাক্বারাহ : ১৫৭)।

(খ) এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করে তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আজাব। (সূরা বাক্বারাহ : ১৭৮)। (গ) আর এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই যে, যারা ঈমান এনেছে এবং যারা হিজরত করেছে আর আল্লাহর পথে জিহাদ ও সাধনা করেছে তারাই আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী, আর আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাকারী করুণাময়। (সূরা বাক্বারাহ : ২১৮)।

(ঘ) হে আমাদের পালনকর্তা! সত্যপথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লঙ্ঘনে প্রবৃত্ত করো না এবং তোমার নিকট হতে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করো, তুমিই সব কিছুর দাতা। (সূরা আলে ইমরান : ৮)।

আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত দয়া ও অনুকম্পার মালিক ও মুখতার। তিনি স্বীয় বান্দাহদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন। আল কোরআনে এতদসম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে : (ক) তোমরা সালাত কায়েম করো এবং যাকাত আদায় করো এবং রাসূল (সা.)-এর আনুগত্য করো, অবশ্যই তোমাদেরকে অনুগ্রহ করা হবে। (সূরা আন নূর : ৫৬)। (খ) আর যখন কোরআন তিলাওয়াত করা হয় তখন তা’ মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করো ও নিশ্চুপ থাক, অবশ্যই আল্লাহপাক তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। (সূরা আ’রাফ : ২০৪)।

(গ) তোমরা তোমাদের ভ্রাতৃমন্ডলীর মধ্যকার বিরোধ মিটমাট করে দাও এবং আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহপাক তোমাদেরকে দয়া করবেন। (সূরা আল হুযুরাত : ১০)। (ঘ) তোমরা আল্লাহপাকের ও রাসূল (সা.)-এর আনুগত্য করো, অবশ্যই তোমরা অনুগৃহীত হবে। (সূরা আলে ইমরান : ১৩২)।

প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা ও রাসূল (সা.)-এর অনুগত বান্দাহদের উচিত একান্তভাবে আল্লাহপাকের রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় লাভের জন্য কায়মনে দোয়া ও মোনাজাত করা। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান আনয়ন করেছি, আপনি আমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের অনুগ্রহ করুন, আর আপনিই উত্তম অনুগ্রহকারী। (সূরা আল্ মুমেনুন : ১০৯)।

(খ) হে আমাদের পালনকর্তা!) আপনি আমাদের আপনার রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় দান করুন, আর আপনিই উত্তম অনুকম্পাশীল। (সূরা মু’মিনুন : ১১৮)। (গ) অবশ্যই আল্লাহপাক উত্তম হেফাজতকারী এবং তিনিই উত্তম ক্ষমাশীল। (সূরা ইউসুফ : ৯২)।

মোটকথা, মহান রাব্বুল আলামীন পুণ্যবান বান্দাহগণের আবেদন কবুল করেন এবং তাদের প্রতি ‘রহমত’ বর্ষণ করেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) আমি তাঁকে (লুত আ. কে) আমার অনুগ্রহের অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম, সে ছিল সৎ কর্মশীলদের একজন। (সূরা আম্বিয়া : ৭৫)। (খ) আমি তাদেরকে আমার রহমতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম, তাঁরা ছিলেন সৎকর্ম পরায়ন। (সূরা আম্বিয়া : ৮৬)।

 



 

Show all comments
  • সাইমুম চট্টগ্রাম ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:২৬ এএম says : 0
    আমরা যদি আল্লাহর কাছে আমাদের পাপের জন্য ক্ষমা চাই এবং তাওবাহ করি তাহলে আল্লাহ তাআলা আমাদের ক্ষমা করতে পারেন। আল্লাহ চান যে, তার বান্দারা যেন তার কাছে ক্ষমা চায়।
    Total Reply(0) Reply
  • মিফতাহুল জান্নাত ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:২৬ এএম says : 0
    হতাশা ও নৈরাশ্যকে দূরে সরিয়ে আল্লাহ পাক আশার বাণী শুনিয়েছেন। তাই আমরা যারা বিভিন্ন ধরণের পাপে লিপ্ত, আমরা যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই তাহলে তিনি আমাদের ক্ষমা করবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • জনিরুল ইসলাম ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:২৬ এএম says : 0
    আমরা যদি প্রকৃত অর্থে তাওবাহ করি তাহলে আল্লাহ তাআলা আমাদের ক্ষমা করবেন। তাই আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে পাপ মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • GM Mehedi Hasan ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:২৮ এএম says : 0
    আমরা যেসব ভুলত্রুটি করি তার জন্য যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তাহলে তিনি ক্ষমা করবেন আর এ বিষয়ে আল্লাহপাক আমাদের শিক্ষাও দিয়েছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • মামুন আহাম্মাদ ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:২৮ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলার ইচ্ছে এটাই যে, কিভাবে তার বান্দাকে ক্ষমা করবেন কিন্তু এর জন্য বান্দাকেও ক্ষমা চাইতে হবে, তাওবা করে তার দিকে ফিরে আসতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন