Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিয়ানমারে গণহত্যার স্বচ্ছ তদন্ত দাবি জাতিসংঘের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

গণতন্ত্রকামীদের রক্তে রাঙা মিয়ানমার। দেশে ‘খোলা হাওয়া’ ফেরাতে বেয়নেটকেও পরোয়া করছে না মানুষ। আর সেই স্বতঃস্ফ‚র্ত আন্দোলন থামাতে একের পর এক হত্যালীলা চালাচ্ছে ‘তাতমাদাও’ বা বার্মিজ সেনাবাহিনী। স¤প্রতি কায়াহ প্রদেশে প্রকাশ্যে এসেছে এমনই এক গণহত্যার খবর। আর সেই ঘটনায় ‘বিস্তারিত ও স্বচ্ছ’ তদন্তের দাবি জানিয়ে জান্তার উপর চাপ বাড়ল জাতিসংঘ। গত ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচিত সরকারকে হঠিয়ে দেশের শাসনভার নিজের হাতে নেয় বার্মিজ সেনা। সেই অভ্যুত্থানের পর থেকেই অশান্ত মিয়ানমার। সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও একদল প্রতিবাদীকে দমিয়ে রাখতে পারেনি জান্তা। বেশ কয়েকটি মিলিশিয়া সেনার বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের দমন করতে নির্বিচারে হত্যালীলা চালাচ্ছে সেনা বলে অভিযোগ। কায়াহ প্রদেশে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল বিদ্রোহীরা। সেই প্রতিরোধ ভাঙতেই শুক্রবার রাতে এলোপাথারি গুলি চালায় বাহিনী। প্রমাণ লোপাট করতে ৩০ জনের দেহ জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বলেও খবর। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি তুলে ধরেছে মিয়ানমারের স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন কারেননি। তারপর থেকেই চাপ বাড়াচ্ছে জান্তার উপর। রোববার সেই হত্যাকাÐ নিয়ে জাতিসংঘের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “এই ঘটনা দেখে আমরা আতঙ্কিত। এর বিস্তারিত ও স্বচ্ছ তদন্ত করতে হবে মিয়ানমার সরকারকে।” জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল ফর হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স’ মার্টিন গ্রিফিথস আরও বলেন, “আম জনতার উপর সমস্ত ধরনের হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি আমরা। এহেন ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী। আমি সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি তারা যেন সাধারণ মানুষের সুরক্ষা নিশ্চত করে।” উল্লেখ্য, কায়াহ প্রদেশের ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও একাধিক হত্যালীলার অভিযোগ রয়েছে বার্মিজ ফৌজের বিরুদ্ধে। কয়েকদিন আগে এক প্রতিবেদনে বিবিসি দাবি করেছে, গত জুলাই মাসে মধ্য মিয়ানমারের সাগাইং প্রদেশের কানি শহর সংলগ্ন অন্তত চারটি গ্রামে গণহত্যা চালিয়েছিল বার্মিজ সেনা। যার ফলে শুধুমাত্র ওই চার এলাকাতেই মৃত্যু হয়েছিল ৪০ জন সাধারণ মানুষের। বলে রাখা ভাল, কানি শহর বিদ্রোহীদের ঘাঁটি। ওই অঞ্চলে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করা মিলিশিয়াগুলিকে শাস্তি দিতেই গণহত্যা চালায় ‘তাতমাদাও’ তথা বার্মিজ সেনা। বিবিসি-তে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়াইন নামের একটি গ্রামে একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি মানুষকে মারা হয়। সেখানে ১৪ জন গ্রামবাসীর উপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে তাদের হত্যা করেছে ফৌজ। এবার এই তালিকায় জুড়ে গেল মো সো-র গণহত্যাও। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি মার্টিন গ্রিফিথ রোববার এক বিবৃতিতে এ শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলে অন্তত ৩৫ জনকে হত্যা এবং তাদের লাশ পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় আমি শঙ্কিত। এ ব্যাপারে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য তদন্তের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া কায়া প্রদেশে অলাভজনক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের দুই কর্মী এখনও নিখোঁজ। তাদের গাড়িতে হামলা ও পুড়িয়ে দেয়ার পর তাদের আর খোঁজ মেলেনি। পর্যবেক্ষক ও স্থানীয় গণমাধ্যম এসব ঘটনার পেছনে সামরিক বাহিনীকে অভিযুক্ত করেছে। গ্রিফিথ তার বক্তব্যে আরো বলেন, এ ঘটনার নিন্দা জানাই। বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সবধরনের হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। আমি কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে ঘটনার একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং স্বচ্ছ তদন্ত শুরু করার আহŸান জানাচ্ছি, যাতে অপরাধীদের দ্রæত বিচারের আওতায় আনা যায়। রোববার মিয়ানমারের মার্কিন দূতাবাসও শঙ্কা প্রকাশ করে দেয়া বিবৃতিতে কায়া প্রদেশে ৩৫ জনের হত্যাকাÐকে বর্বরোচিত বলে মন্তব্য করেছে। টাইমস নাউ, রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ