বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
‘আমানত’ বলতে আমরা সাধারণত বুঝি, কারো কাছে কোনো কিছু সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে গচ্ছিত রাখা। এটাও আমানত এবং এর খেয়ানত অনেক বড় গুনাহ। তবে কোরআন-হাদীসে উল্লেখিত ‘আমানত’ শব্দ আরো অনেক বিষয়কে ধারণ করে। যেমন, আমাদের মেধা, যোগ্যতা, আমাদের সময়, আমাদের জীবন, মোটকথা আমরা যেসকল নিআমত ভোগ করি এসবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে আমানত। কিয়ামতের দিন এগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।
হাদীসে এসেছে : কিয়ামতের দিন কোনো বান্দার পা নড়বে না, যতক্ষণ না তাকে জিজ্ঞেস করা হবে তার জীবন সম্পর্কে- কী কাজে তা ব্যয় করেছে। তার ইলম সম্পের্ক- তদনুযায়ী কী আমল করেছে। তার সম্পদ সম্পর্কে- কোথা থেকে তা অর্জন করেছে এবং কোথায় খরচ করেছে। এবং তার শরীর সম্পর্কে- কোন কাজে সে তা ক্ষয় করেছে। (জামে তিরমিযী, : ২৪১৭)।
তেমনিভাবে আমাদের পারস্পরিক প্রার্থিত রায় ও পরামর্শ, গোপন কথাবার্তা, অর্পিত দায়দায়িত্ব এসব কিছুও আমানতের অন্তর্ভুক্ত। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন : যার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয় সে আমানতদার। (জামে তিরমিযী : ২৮২২)। অন্যত্র ইরশাদ করেন : যদি কেউ কোনো কথা বলার সময় (গোপনীয়তা রক্ষার উদ্দেশ্যে) এদিক সেদিক তাকায় (অথবা কথাটি বলে প্রস্থান করে।) তাহলে তার কথা আমানত বলে গণ্য হবে। (জামে তিরমিযী : ১৯৫৯)।
আরেক হাদীসে নবীজী (সা.) বলেন : তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার অধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। জনগণের শাসক তাদের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। পরিবারের কর্তা তার পরিবার পরিজনদের দায়িত্বশীল সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার পরিবার বিষয়ে দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। খাদেম তার মনিবের সম্পদের বিষয়ে দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। (সহীহ বুখারী : ২৫৫৮)।
মুমিনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, সে কৃত আহ্দ বা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। এটিও ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন : আর অঙ্গীকার পূরণ করো। নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল : ৩৪)। অন্যত্র ইরশাদ করেছেন : হে মুমিনগণ তোমরা অঙ্গীকার পূরণ করো। (সূরা মায়িদা : ১)।
কোরআন ও হাদীসে ব্যবহৃত ‘আহ্দ’ শব্দের ব্যাপক অর্থে অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত। আমাদের পারস্পরিক চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি এই ‘আহ্দ’-এর অন্তর্ভুক্ত। এটা দুই ব্যক্তির মধ্যে হতে পারে, কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে হতে পারে অথবা কোনো রাষ্ট্রের সাথেও হতে পারে।
একে অপরকে যে ওয়াদা দেয়া হয় সেটাও এই ‘আহ্দ’-এর অন্তর্ভুক্ত। মুমিনের পুরো জীবনটাই আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটা ‘আহ্দ’-এর সবচেয়ে বড় এবং সর্বপ্রথম ক্ষেত্র। কালেমার মাধ্যমে সে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, আল্লাহ তার মাবুদ। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সে তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলবে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখানো পদ্ধতিতে সে তার জীবন পরিচালিত করবে। এটা হলো একজন মুমিনের জীবনের সবচেয়ে বড় ‘আহ্দ’ বা প্রতিশ্রুতি, যা পূরণ করা একজন মুমিনের জন্য প্রথম ফরয। অন্যান্য সকল চুক্তি, প্রতিশ্রুতি ও ওয়াদা এই ‘আহদ’-এর অধীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।