Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

আফ্রিকার দারিদ্র্যকে প্রকট করে তুলেছে মহামারি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

দুই বছর পরও মহামারির তান্ডব যেন থামছেই না। কভিডের নতুন ধরনের সংক্রমণ আবারো ব্যবসাকে বন্ধের মুখে ঠেলে দিয়েছে। হাসপাতালগুলো পূর্ণ হওয়ার ভয়কে পুনরুজ্জীবিত করছে। ওমিক্রনের আতঙ্কে বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ ও ছুটির পরিকল্পনা ত্যাগ করছে হাজারো মানুষ। তবে আফ্রিকার দেশগুলোয় এ পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। পুনরায় প্রাদুর্ভাব দেশগুলোর লাখ লাখ মানুষের বেঁচে থাকাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। প্রলম্বিত এ মহামারি এরই মধ্যে দেশগুলোর অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। ফলে প্রকট হয়ে উঠেছে অঞ্চলটির দারিদ্র্য ও ক্ষুধা সমস্যা। গত মার্চে জাতিসংঘের ইকোনমিক কমিশন অন আফ্রিকা (ইসিএ) উল্লেখ করেছে, বিশ্বজুড়ে চরম দরিদ্র ১০ জনের মধ্যে প্রায় নয়জনই আফ্রিকায় বসবাস করে। ইসিএ সতর্ক করেছে, ২০২০ সালে মহামারি শুরু হওয়ার পর এরই মধ্যে অনুভ‚ত অর্থনৈতিক প্রভাব আরো ৫০ লাখ থেকে ২ কোটি ৯০ লাখ মানুষকে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিতে পারে। সংস্থাটি জানিয়েছে, মহামারির প্রভাব ২০২১ সালের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকলে আরো ৫ কোটি ৯০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে। এর মাধ্যমে দরিদ্র আফ্রিকানদের মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ৫১ কোটি ৪০ লাখ। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, ২০১৯ সালে ২ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পর ২০২০ সালে আফ্রিকার অর্থনীতি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ সংকোচনের মুখোমুখি হয়েছিল। এর মাধ্যমে দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলটি ২৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো মন্দায় পড়ে। দাতব্য সংস্থা মার্সি করপসের আফ্রিকার আঞ্চলিক পরিচালক শোন গ্র্যানভিল-রস বলেন, কভিডজনিত অর্থনৈতিক বিপর্যয়ক্ষুধার সংকটকে পর্বতসম উচ্চতায় ঠেলে দিয়েছে। চলতি বছর আমরা সাহেল, পশ্চিম আফ্রিকা ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো অঞ্চলেক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়তে দেখেছি। মহামারির আগেই কিছু দেশ মানবিক সংকট ও সংঘাতের সম্মুখীন হয়েছিল। আফ্রিকার কভিড সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে এখন উদ্বেগ আরো তীব্র হচ্ছে। কয়েক মাস ধরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও) সাপ্তাহিক মহামারিসংক্রান্ত প্রতিবেদনে সংক্রমণের ক্ষেত্রে আফ্রিকাকে বিশ্বের সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোর একটি হিসেবে বর্ণনা করেছে। তবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সংস্থাটি জানিয়েছে, নতুন সংক্রমণের সংখ্যা প্রতি পাঁচদিনে দ্বিগুণ হচ্ছে। এটি চলতি বছর সবচেয়ে দ্রæত সংক্রমণ বৃদ্ধির ঘটনা। শোন গ্র্যানভিল-রস বলেন, নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সম্ভাব্য লকডাউন আরো লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেবে। এছাড়া এ পদক্ষেপ আমরা যে সামান্য অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দেখতে শুরু করেছি তা উল্টে দেবে। সমগ্র মহাদেশটিতে মাত্র ৭ শতাংশ মানুষ পূর্ণ ডোজের কভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা পেয়েছেন। মহাদেশটির মধ্যে জিম্বাবুয়েকে সফল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যদিও দেশটির ১ কোটি ৫০ লাখ জনসংখ্যার মাত্র ২০ শতাংশ মানুষ পূর্ণ ডোজের টিকা পেয়েছে। এ অবস্থায়ও সরকারগুলো টিকা নেয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপের হুমকি দিয়েছে। তবে অনেক লোকের জন্য সংক্রমণের ভয় তুচ্ছ হিসেবে কাজ করছে। কারণ পরিবারের খাদ্যের সংস্থান করা তাদের কাছে প্রধান অগ্রাধিকার। একদিকে আয়ের পথ সংকুচিত এবং অন্যদিকে খাদ্যপণ্যের দাম রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন এ অবস্থাকে আরো জটিল করে তুলছে। পরিবর্তে দেশগুলোয় ডলার দিয়ে খাদ্য পাওয়া সহজ হয়ে উঠেছে। ফলে মুদ্রা বিনিময় প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলোর বাইরে মানুষের লম্বা সারি তৈরি হচ্ছে। অনেকে পেনশনের অর্থ তোলার অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন। জিম্বাবুয়ের রাজধানীতে এমন একটি মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন আসবাবপত্রের দোকানের কর্মী যোশুয়া নিওনি। তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমি কভিডের নতুন ধরনের কথা শুনেছি। তবে না খেয়ে থাকার মতো খারাপ আর কিছু হতে পারে না। টিকাদান কেন্দ্রের পরিবর্তে আমি বরং এখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে চাই। কারণ এখান থেকেই আমার পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা হবে। এপি, ইসিএ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ