বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ক্ষমতার অপব্যবহার, অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতারণা, জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া আবেদন ও ভাউচার তৈরি করে প্রায় ১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ-এর অভিযোগ উঠেছে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর শাহজাহান আলীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক নামের এক ব্যক্তি।
দুদকে করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রফেসর শাহজাহান আলী আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারিতে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত ক্ষমতার অপব্যবহার ও জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ১৫ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তিনি। জানা যায়, সরকারি আজিজুল হক কলেজে ৫টি পুকুর রয়েছে। এই পুকুরগুলো সরকারি লিজ না দিয়ে প্রিন্সিপাল নিজস্ব লোক দিয়ে মাছ চাষ ও বিক্রি করে থাকেন। এই পুকুর থেকে মাছ বিক্রি করে বিগত তিন বছরে সাড়ে সাত লাখ টাকা নিজের পকেটস্থ করেছেন। এছাড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে যাতায়াতের জন্য ৭টি বাস আছে। বাসগুলো রাখা হয় প্রিন্সিপালের বাসভবনে। নিজ ভবনে গ্যারেজ ভাড়া বাবদ বাস থেকে ৫০ হাজার টাকা আদায় করেন তিনি। এভাবে বিগত ৩ বছরে ১৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। শুধু তাই নয় কলেজের নির্দিষ্ট একাউন্টে লেনদেন না করে এক কর্মচারীর মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে লেনদেন করেন এই প্রিন্সিপাল।
আরও জানা যায়, শিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার সরকারি ফি না থাকার পরও তিনি প্রতিটি শিক্ষার্থীর থেকে ১৫ টাকা করে অন্যায়ভাবে ফি আদায় করেন। এছাড়াও অনিয়মিত কর্মচারিদের জন্য প্রতি শিক্ষার্থীর থেকে বছরে ৪০০ টাকা আদায় করা হয়। সেই হিসেবে প্রতিবছর দেড় কোটি টাকার বেশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়। অথচ এসব কর্মচারির বেতন দিতে কলেজ প্রশাসনের খরচ হয় মাত্র ৭০ লাখ টাকা। এরপরও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা অভিযোগ করে বলেন, এত টাকা প্রিন্সিপাল হজম করার পরও করোনার অজুহাত দেখিয়ে এখনও বেতন অর্ধেক প্রদান করা হচ্ছে।
কলেজ সূত্র জানায়, বর্তমানে ২৩ বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স, এইচএসসি (সকল বিভাগ), ডিগ্রি (সকল বিভাগ), উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এইচএসসি, বিএ এবং বিএসএস ও এমবিএ কোর্স চালু রয়েছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কলেজে প্রায় ৪২ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করে বলেন, গ্রামের দরিদ্র কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিনমজুর, গরীব ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ছেলে-মেয়ে এই কলেজে লেখাপড়া করেন। দরিদ্র মানুষের কষ্টের টাকা বর্তমান প্রিন্সিপাল সরকারি পরিপত্র বহির্ভূতভাবে সেশন ফির নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের একাধিক শিক্ষক বলেন, কিছুদিন আগে কলেজ শিক্ষকের সঙ্গে এক নারী শিক্ষার্থীর নামে কুৎসা রটানোতে সহযোগিতা করেন প্রিন্সিপাল প্রফেসর শাহজাহান আলী। এই ঘটনায় স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করে ভুক্তভোগী শিক্ষকের থেকে ৩ লাখ টাকাও দাবি করা হয়। শুধু এই ঘটনায় নয় অধ্যক্ষের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে মুখ খোলার অভিযোগে ৫ শিক্ষককে বদলির তদবির করেছেন এ প্রিন্সিপাল। জানতে চাইলে সরকারি আজিজুল হক কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর শাহজাহান আলী বলেন, একটি মহল আমার নামে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এসব কুৎসা ছড়াচ্ছে। আমি কলেজের উন্নয়ন করছি, একটি গোষ্ঠী তা মেনে নিতে পারছে না। এছাড়াও সামনে মাউশির ডিজি নিয়োগ হবে। এই তালিকায় আমারও নাম আছে। যেকারণে এমনটি হয়ে থাকতে পারে বলে জানান তিনি। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭ হাজার। অথচ অভিযোগে বলা হয়েছে ৪২ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশুনো করছে যা হাস্যকর। তবে তিনি যে ভবনে থাকেন, সেখানে গাড়ির গ্যারেজ রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।