Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র বার্ণ ইউনিটটি বন্ধ এক মাস

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১, ১১:৫২ এএম

ঢাকা থেকে ৭জন চিকিৎসক এসে লঞ্চের আগুনে পোড়া ৭০ রোগীর চিকিৎসা শুরু করলেন
চিকিৎসক সংকটে বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র বার্ণ ইউনিটটি বন্ধ গত মাসাধীককাল। ফলে এ হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবার ওপর নির্ভরশীল এ অঞ্চলের অন্তত ৯টি জেলার আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসার নুন্যতম সুযোগও বন্ধ হয়ে গেছে। গত শুক্রবার ঝালকাঠীতে বরগুনাগামী যাত্রীবাহী নৌযান ‘এমভি অভিযান-১০’এ অগ্নিকান্ডের পরে বার্ন ইউনিটের প্রয়োজনীয়তা আরো একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের টনক নড়বে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের আমজনতা সহ চিকিৎসা প্রার্থীদের মধ্যেও।
চিকিৎসা না পেয়ে শুক্রবার সকাল থেকে শণিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা বেশীরভাগ আগুনে পোড়া রোগীই এ হাসপাতালের বেডে শুধু কাতরিয়েছে।
এ অঞ্চলের সর্ববৃহত চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজের বার্ন বিভাগে একজন অধ্যাপক, একজন সহযোগী অধ্যাপক ও একজন সহকারী অধ্যাপকের পদেই কোন জনবল নেই। ফলে এ অঞ্চলের সর্ববৃহত চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানটির বার্ণ ইউনিটে রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার মত কোন চিকিৎসক না থাকায় পুরো ইউনিটটিই বন্ধ হয়ে গেছে আরো মসাধীককাল আগে।
শুক্রবার নৌাযনে অগ্নিকান্ডের পরে প্রথমে আগুনে পোড়া রোগীদের ঝালকাঠী জেলা সদর হাসপাতালে নেয়ার পরে সেখানে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার মত সংগতিও ছিলনা। ফলে সব অঅগুনে পোড়্ ারোগীই বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান হয়। কিন্তু হাসপাতালটির জরুরী বিভাগে একের পর এক রোগী আসতে শুরু করায় চরম বিপাকে পড়েন সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক। এ হাসপাতালে জরুরী বিভাগের ১০জন চিকিৎসকের স্থলে আছেন মাত্র ৩ জন। ফলে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হয় সেখানেও। পরে কতৃপক্ষের সিদ্ধান্তে এসব আগুনে পোড়া রোগীদের হাসপাতালটির ৪ম তলায় চক্ষু বিভাগের একটি ইউনিটে রাখা হয়।
কিন্তু রোগী ভর্তি করা হলেও চিকিৎসক না থাকায় শুক্রবার দিনভরই এসব রোগীদের তেমন কোন চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়নি। এমনকি এ হাসপাতালে আগুনে পোড়া একজনের মৃত্যুও হয়েছে শুক্রবারই । এছাড়া শুক্রবার দুপুরে আরো ৩জনকে ঢাকায় পাঠানোর পরে রাতে গুরুতর আরো দুজনকে র‌্যাবের হেলিকপ্টারে বিশেষ ব্যবস্থায় শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে পাঠান হয়। তবে ঢাকা থেকে ৭ জন চিকিৎসক এসে শণিবার সকাল থেকে আগুনে পোড়া গুরুতর অসুস্থ এসব রোগীদের চিকিৎসা শুরু করেছেন।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম শণিবার সকালে জানিয়েছেন, আগত চিকিৎসকগন বরিশালে পৌছেই চিকিৎসা সেবায় যোগ দিয়েছেন। ওষুধ সহ সব ধরনের চিকিৎসা সামগ্রী হাসপাতালে মজুত রয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি সম্ভব সব ধরনের চিকিৎসা সেবা দিতে’। তবে বেশ কিছু রোগীর অবস্থাই গুরুতর ও সংকটাপন্ন বলেও জানান তিনি।
কিন্তু শুধু বার্ণ ইউনিটই নয়, দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত এ হাসপাতালে ১৯টি ইউনিটের বেশীরভাগেই চিকিৎসক সংকট এতটাই প্রকট যে, এখানে চিকিৎসা সেবা প্রদান প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। আর এর মূল কারণ হিসেবে দায়িত্বশীল মহল থেকে চিকিৎসক সংকটের কথাই বলা হচ্ছে বার বার। শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ সংযুক্ত এ হাসপাতালটির চিকিৎসা ব্যবস্থা ঐ চিকিৎসা শিক্ষ্ াপ্রতিষ্ঠানটির ওপরই নির্ভরশীল। কিন্তু সেখানে ২২৩ জন অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের বিপরিতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৯৮ জন। ৩৬ জন অধ্যাপকের বিপরিতে আছেন একজন। অপর দুজন আছেন ওএসডি হিসেবে। ৫০ জন সহযোগী অধ্যাপকের মধ্যে আছেন ১৩ জন। যারমধ্যে ৬জন ওএসডি হিসেবে সংযুক্ত আছেন। আর সহকারী অধ্যাপকের ৮০ টি পদের বিপরিতে কর্মরত মাত্র ৪৫ জন। এরমধ্যেও ১৮ জন ওএসডি হিসেবে সংযুক্ত আছেন।
ফলে স্বভাবিকভাবেই এ হাসপাতালেও চিকিৎসা ব্যাবস্থা এখন বিপন্ন। বিষয়টি নিয়ে ইতোপূর্বে বহুবার গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও অধিদপ্তরের কোন পদক্ষেপ লক্ষণীয় নয়। এমনকি দক্ষিনাঞ্চলের সর্ববৃহত এ হাসপাতালটিতেও অনুমোদিত জনবলে অর্ধেকওর বেশী পদ শূণ্য। ১ হাজার শয্যায় উন্নীত এ হাসপাতালটি চলছে ৫শ শয্যার জনবল দিয়ে। অথচ প্রতিদিন চিকিৎসাধীন থাকছে দেড় হাজার থেকে ১৮শ রোগী । কিন্তু ৫শ শয্যার জন্য অনুমোদিত ২২৪ জনবলের মধ্যে কর্মরত মাত্র ১২৩ জন। হাসপাতালটিতে ৩৩জন রেজিষ্ট্রারের মধ্যে আছেন ১৯ জন। ৬৬ জন সহকারী রেজিষ্ট্রারের ৪৭টি পদই শূণ্য। এমনিভাবে হাসপাতালটির মেডিকেল অফিসার থেকে শুরু করে সর্বত্রই জনবল সংকট। গোট হাসপাতালের ৮০ভাগ ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্টই বিকল বছরের পর বছর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ