Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেই রিপা এখন জাতীয় ‘হিরো’

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:৩৮ পিএম

এক সময় টাকার অভাবে বই কিনতে পারতেন না! অথচ এখন তিনিই জাতীয় ‘হিরো’। তার নাম শাহেদা আক্তার রিপা, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল দলের অপরিহার্য এক খেলোয়াড়। যিনি সদ্য সামপ্ত সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে নিয়েছেন। পুরো টুর্নামেন্টে নিজে ৫ গোল করা ছাড়াও সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন গোলের পর গোল। অসাধারণ দক্ষতায় পুরো মাঠ বিচরণ করে সবার নজর কেড়েছেন।

বুধবার রাতে কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলেছে বাংলাদেশ দল। শিরোপাজয়ী দলের খেলোয়াড়রা স্টেডিয়াম থেকে সোজা এসে ওঠেন মতিঝিলস্থ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনের ক্যাম্পে। ফুটবলাররা সবাই নাচে-গানে শিরোপা উদযাপন করে রাতটা কাটিয়েছেন। শিরোপা উদযাপনে সতীর্থদের মধ্যমণি ছিলেন শাহেদা আক্তার রিপা। বৃহস্পতিবারের দিনটিও তার কাছে ছিল কিছুটা ভিন্ন। এদিন সকাল থেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে মুঠোফোনে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ পেয়েছেন রিপা। দলের সঙ্গে সঙ্গে সাফে নিজেও সেরা হতে পেরে এখন দারুণ খুশি কক্সবাজারের এই মেয়েটি। তবে এই মেয়ের জীবনের গল্পটা অন্য দশজনের মতো নয়। বাবা-মা, তিন বোন ও এক ভাই নিয়ে রিপার পরিবার। বড় পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি একমাত্র বলতে ছিলেন তার বাবা জালাল আহমেদ। দিনমজুরের কাজ করতেন তিনি। এই কাজ করে সংসার চালানোর পাশাপাশি সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। সাধ থাকলেও সাধ্যের ঘাটতি ছিল তার। শারীরিক অসুস্থার কারণে এখন আর কাজ করতে পারেন না জালাল আহমেদ। তাই সংসারের দায়িত্বটা তিন ভাই বোন মিলেই নিয়েছেন। ভাই সবার বড়। কক্সবাজারের এক ডিগ্রি কলেজে পড়াশুনার পাশাপাশি ছোট একটা চাকরি করেন। রিপার বড় এক বোন। তিনিও পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করেন। রিপা বোনদের মধ্যে মেজ। তিনি ছোট হলেও ফুটবলার হওয়ার সুবাদে বড় ভাই-বোনের চেয়ে পরিবারকে এখন বেশি আর্থিক সহায়তা করতে পারেন। আগে তাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। সাফ শিরোপা জেতার আনন্দে বর্তমানে আত্মহারা হলেও সেই দিনগুলোর কথা কিন্তু ভুলেননি রিপা। খারাপ সময়ের কথা বলতে গিয়ে বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘খুব বেশি মনে পড়ে আমি ও আমার ভাই বোন কখনো গাইড বই কিনতে পারিনি। প্রাইভেটও পড়তে পারিনি। এভাবেই আমরা পড়াশোনা করেছি।’ রিপা যোগ করেন,‘বর্তমানে আমার বাবা কাজ করতে পারেন না বলে আমরা তিন ভাই-বোন সংসারের খরচ চালাই। আমি যেহেতু খেলাধুলা করি তাই আমি ওদের চেয়ে একটু বেশি সহায়তা করতে পারি পরিবারকে। আমরা ভাই বোনরা চাইতাম বাবার যেন আর কষ্ট না করতে হয়। সেই কষ্ট লাঘব হওয়ায় এখন আমি তৃপ্ত।’

আগে মাটির ঘর থাকলেও এখন রিপাদের পাকা বাড়ি হয়েছে। মাসখানেক আগে রিপার অর্থে ও ভাই-বোনদের সাহায্যে তাদের বাড়িটি পাকা করা হয়েছে। দারিদ্রতার মাঝে বেড়ে উঠলেও রিপা শৈশব থেকেই খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। যখনই সময় পেয়েছেন তখনই ব্যাট-বল নিয়ে ছুটেছেন। তার কথায়, ‘স্কুলে নিয়মিত গেলেও অনেক দিন বাবার সঙ্গে মাঠে কাজ করেছি। এর ফাঁকে যখনই ছুটি পেতাম তখনই খেলাধুলা করতাম। বাবা-মা খেলাধুলা পছন্দ করতেন বলে আমাকে উৎসাহ দিতেন। তাদের বাধা পেলে এই পর্যায়ে আসতে পারতাম না।’

রিপা কিন্তু শুরুতে ক্রিকেট খেলতেন। কিন্তু বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার সময় তিনি ফুটবলে ট্রায়াল দিয়ে টিকে যান। ব্যস শুরু হয় তার ফুটবল জীবন। রিপা বলেন,‘আমি ক্রিকেটেও অনেক ভালো খেলি। বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার সময় সময় আমার ফুফাতো ভাই বলেছিল ফুটবলে ট্রায়াল দিতে। ফুটবলের ট্রায়ালে টিকে যাওয়ার পর থেকেই ফুটবলই আমার ধ্যানজ্ঞান। তা না হলে ক্রিকেটারও হতে পারতাম।’

বিকেএসপির দশম শ্রেণীর ছাত্রী রিপা ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেবেন। ফুটবলের মাধ্যমে তিনি দেশকে আরো অনেক কিছু দিতে চান। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশকে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি এনে দেয়ার অন্যতম কারিগর রিপার তেমন উচ্চাশা নেই, ‘ফেডারেশনের সভাপতি বা প্রধানমন্ত্রী সবাইকে যা দেবেন আমি সেটা পেলেই খুশি।’

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ