বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
একথা মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি যে, মানুষের আমল চাই তা নেক আমল হোক অথবা বদ আমল হোক, এগুলো দেহহীন, পদার্থ নয় এমন কিছু। যাকে আরবী ভাষায় আ’রাজ বলা হয়। আ’রাজ মূলত এমন কিছু যার কোনো দেহ বা রূপ নেই। সুতরাং এগুলো কিভাবে ওজন করা যেতে পারে? এমনতরো প্রশ্ন যাদের মনে উদয় হয়, তাদের আমরা সবিনয়ে বলব যে, প্রথমেই আপনাদের মস্তিষ্কে একথা বদ্ধমূল রাখতে হবে যে, আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সকল বিষয়ের ওপর সর্বশক্তিমান। তিনি এমন পরিমাপ যন্ত্র সৃষ্টি করতে সক্ষম যার দ্বারা পদার্থ নয় এমন কিছুকেও পরিমাপ করা সম্ভব। তাঁর কুদরতে কামেলার সামনে অসম্ভব বলতে কোনো কিছুই নেই।
তিনি যখন ইরশাদ করেছেন- আমি আমল ওজন করব, তখন একজন মুসলমানকে তা মেনে নেয়া ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। আল্লাহপাকের বাণী চির সত্য। এর মাঝে কোনোরকম ব্যত্যয় হওয়ার কল্পনা করা বাতুলতা ছাড়া কিছুই নয়। দ্বিতীয়ত, একথাও মনে রাখা দরকার যে, বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার দ্বারা মানুষ চলমান বিশ্বকে চমকে দিয়েছে এবং দিন দিন এই চমকের পরিধি বিস্তৃত হতে বিস্তৃততরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ফলে বর্তমানে এমন যন্ত্রও আবিষ্কৃত হয়েছে, যার দ্বারা আরাজ অর্থাৎ পদার্থ নয় এমন কিছুকেও পরিমাপ করা যায়।
যেমন শীতিলতা, উষ্ণতা, বায়ুচাপ প্রভৃতি আবিষ্কৃত যন্ত্র দ্বারা পরিমাপ করা হচ্ছে। সুতরাং মানুষ যদি আ’রাজ বা পদার্থ নয় এমন কিছু পরিমাপের যন্ত্র আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়, তবে কি সকল আবিষ্কারকের স্রষ্টা মহা বিজ্ঞানী আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত এমন যন্ত্র আবিষ্কার করতে সক্ষম নন, যার দ্বারা নেকী-বদী তথা ভালো-মন্দ আমল ওজন করা সম্ভব? একান্ত নিশ্চিতরূপে মহাবিজ্ঞানী আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তা করতে পারেন। এর মাঝে দ্বিধা-সংকোচের কোনোই অবকাশ নেই।
তৃতীয়ত, চিরসত্যবাদী বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ মুস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.) যেভাবে হাশর মাঠের সংবাদ দিয়েছেন, কোনোরূপ হ্রাস-বৃদ্ধি ছাড়া হুবহু সেগুলোর ওপর না দেখেই বিশ্বাস স্থাপন করা আমাদের ওপর ফরজ বা অপরিহার্য কর্তব্য। ওই সকল ব্যক্তি বা শ্রেণির জন্য আফসোস ও অনুতাপ যারা নিজেদের অজ্ঞতা ও জ্ঞানের স্বল্পতা হেতু রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রদত্ত সংবাদ অনুযায়ী হাশরের দিন ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপনকে অস্বীকার করে এবং অকাট্য প্রমাণাদির প্রতি কটাক্ষ করে বলে সে তরিতরকারি ও ফল বিক্রেতারই দাঁড়িপাল্লার প্রয়োজন হয়।
তবে, কতই না সৌভাগ্যের হতো যদি এই শ্রেণির অধঃপতিত লোকেরা তাদের দলভুক্ত হতো, যাদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত শেষ বিচারের দিন ওজনের তুলাদন্ড স্থাপন করবেন না। কিন্তু এই সৌভাগ্য কোনোদিনই তাদের ভাগ্যে জুটবে না।
বস্তুত, বান্দাহর আমল ওজনের গূঢ় রহস্য এ-ও হতে পারে যে, আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সকল বান্দাহর সামনে তাঁর ন্যায়বিচারের বিষয়টি প্রকাশ করবেন। কেননা, মহান আল্লাহপাক বান্দাহর ওজর বা অপারগতা কবুল করেন। তাঁর চেয়ে অধিক ওজর গ্রহণকারী ও পছন্দকারী আর কেউ নেই। এজন্যই তিনি সুসংবাদদানকারী ও সতর্ককারীরূপে অসংখ্য নবী ও রাসূলগণকে কিতাব ও প্রমাণাদিসহ দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। শুধু তা-ই নয়। বরং এর পেছনে এমন আরো হেকমত ও প্রজ্ঞা লুক্কায়িত থাকতে পারে, যার অবগতি আমাদের নেই। এতদপ্রসঙ্গে ফিরিশতামন্ডলীর কথাটি খুবই চিন্তা ও গবেষণার যোগ্য যখন আল্লাহপাক তাদের লক্ষ করে বলেছিলেন- আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্বশীল দায়িত্ব পালনকারী একটি জাতি সৃষ্টি করতে চাই? ফিরিশতাগণ বলল, আপনি কি এমন জাতি সৃষ্টি করবেন, যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে, আর রক্তপাত ঘটাবে? আমরাই তো আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। প্রশংসা ও গুণগান করছি! আল্লাহপাক বললেন : আমি যা জানি, তোমরা তা জান না। (সূরা আল বাক্বারাহ : ৩০)।
আল্লাহপাক আরো ইরশাদ করেছেন : তোমাদের প্রতি সামান্য জ্ঞানই প্রদান করা হয়েছে। (সূরা বনী ইস্রাঈল : ৭৫) সুতরাং কোনো বিষয়ে বান্দাহর জ্ঞান না থাকা সেই বিষয়ের অসম্ভব হওয়ার প্রমাণ বহন করে না। তবে, বান্দাহর আমল ওজনের জন্য স্থাপিতব্য দাঁড়িপাল্লার প্রকৃতি সম্পর্কে আল্লাহপাকই ভালো জানেন। সুতরাং এতটুকু বিশ্বাস করতে হবে যে, শেষ বিচারের দিন মহান আল্লাহপাক বান্দাহর আমল ওজন করার জন্য একটি পরিমাপ যন্ত্র স্থাপন করবেন, যার দু’টি পাল্লা হবে। এই পরিমাপ যন্ত্র একটিও হতে পারে, আবার একাধিকও হতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।