পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গতকাল তৃতীয় বিশেষজ্ঞদের অভিমত এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে কিছুদিন পর চরম দূষণের কারণে ঢাকায় জরুরি অবস্থা জারি করতে হতে পারে
ঢাকার বায়ুদূষণ আবার বাড়ছে। প্রতিদিনই এ রাজধানী শহরের বায়ুমান অস্বাস্থ্যকর হচ্ছে। গত সপ্তাহেও বিশ্বের ১০০টি প্রধান শহরের মধ্যে বায়ুদূষণের দিক থেকে ঢাকা ছিল শীর্ষে। বিশ্বের বায়ুরমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের হিসাব অনুযায়ী, গতকাল ১৮২ পিপিএম বায়ুমান নিয়ে ঢাকার অবস্থান বিশ্বের বায়ুদূষণের শীর্ষ শহরের মধ্যে ছিল তৃতীয়। বায়ুমান ২০০ পিপিএম নিয়ে আফগানিস্তানের কাবুল প্রথম, ১৯৬ পিপিএম নিয়ে পাকিস্তানের লাহোর দ্বিতীয়, ভারতে দিল্লি ১৭৮ পিপিএম নিয়ে ৪র্থ এবং ১৬১ পিপিএম নিয়ে কলকাতা ৫ম স্থানে ছিল।
বায়ুদূষণের শিকার শহরগুলোর তালিকায় রাজধানী ঢাকার অবস্থান আবারো ঘুরেফিরে শীর্ষে উঠে আসছে। তাপমাত্রা কমার সাথে সাথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে উঠেছে। এছাড়া চালু হচ্ছে ইটভাটা এবং শীত মৌসুমের শুরু থেকে পুরোদমে চলছে নির্মাণকাজ। এসব কারণে ঢাকার বায়ুর মান প্রায় প্রতিদিনই খারাপ হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত চার কারণে অস্বাস্থ্যকর হচ্ছে ঢাকার বাতাস। এর মধ্যে প্রথমত, প্রচুর পরিমাণে মেয়াদোত্তীর্ণ পুরনো যানবাহনের চলাচল। দ্বিতীয়ত, অপরিকল্পিতভাবে শহরের যেখানে সেখানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও উন্নয়ন কাজ। তৃতীয়ত, শহরের আশপাশের ইটভাটা ও শিল্প-কলকারখানার দূষণ। চতুর্থত, শহরের ভেতরে যে ময়লা আবর্জনা জমে সেগুলো পোড়ানোর ধোঁয়া। সরকার কঠোর না হওয়ায় এই পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটছে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
আর্ন্তজাতিক বায়ুমান প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার এর তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বে বায়ুদূষণের কারণে সবচেয়ে দূষিত শহর ছিল ঢাকা। আবার পরিবেশ অধিদফতরের ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট প্রজেক্টের প্রতিদিনের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী ঢাকায় ১২ ডিসেম্বরের দূষিত শহরের শীর্ষে ছিল ঢাকা। এদিন ঢাকার বায়ুর মান ছিল অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের প্রতিদিনের বায়ুমানে গতকালও রাজধানী ঢাকার অবস্থান তৃতীয় এবং এর বায়ু খুবই অস্বাস্থ্যকর। নগরজুড়ে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, উড়ালসেতুর মতো বড় বড় অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ চলছে জোরেশোরে। একদিকে হচ্ছে উন্নয়ন আর অন্যদিকে পরিবেশদূষণ। এসব অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহৃত বালু, সিমেন্টসহ অন্যান্য সামগ্রী সড়কের ওপর যত্রতত্র পড়ে আছে। আবার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির জন্য মাটি ও ধুলোবালিতে নির্মাণস্থলের আশপাশের এলাকা ধুলোয় ঢাকা পড়েছে। ঢাকার বাতাস হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর।
প্রায় ২ কোটি মানুষের বসবাস এই ঢাকা শহরে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে এর অবস্থানও প্রথম দিকেই। পরিবেশবিদরা বলছেন, অন্য দেশগুলো তাদের বড় শহরগুলোর বায়ুদূষণ রোধে যেখানে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেখানে ঢাকা তা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। দূষণের সব থেকে বড় উৎস হচ্ছে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ। এসব কাজ একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে সমন্বয়ের সাথে করতে ব্যর্থ হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। এমনকি ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে উচ্চ আদালতের দেয়া নির্দেশনাও মানা হচ্ছে না। উন্নয়ন প্রকল্পের এলাকায় সকাল-বিকাল পানি ছিটানোর যে নির্দেশ উচ্চ আদালত দিয়েছে তা এখন মানা হচ্ছে না। ফলে ধুলাবালিতে দূষিত হচ্ছে বাতাস। এ ছাড়া ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন করতে পারেনি দুই সিটি করপোরেশন।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের নির্বাহী সভাপতি ড. আব্দুস সোহবান ইনকিলাবকে বলেন, দেশের পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য আমরা প্রতিনিয়তই কথা বলে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের কথা সরকার খুব একটা আমলে নিচ্ছে না। অর্থাৎ বলা যায় যে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার ব্যাপারে সরকার খুব একটা আন্তরিক নয়। সরকার দেদারসে উন্নয়ন মূলক কর্মকাÐ চালিয়ে যাচ্ছে। আর এসব ্অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। রাজধানীতে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্প এলাকায় ধুলোবালি উড়ে বাতাস দূষিত হচ্ছে। অথচ ওই এলাকায় সকাল বিকাল পানি ছিটিয়ে ধুলো দমন করার কথা। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। আর এ বিষয়টি তদারকি করারও কেউ নেই। এরকম অপরিকল্পিত ও উদাসীন কর্মকান্ডের কারণেই ঢাকা বায়দিূষণের শীর্ষ শহরের তালিকায় বারবার চলে আসছে। এ অবস্থায় সরকার যদি এখনই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে কিছুদিন পর চরম দূষণের কারণে ঢাকায় জরুরি অবস্থা জারি করতে হতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।